ইসলামে কলমের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা রয়েছে যেহেতু কলম দিয়ে আল্লাহর বাণী ও বিভিন্ন কল্যাণকর বিষয় লিখিত হয়। কলমের সাহায্যে মানুষের জ্ঞান লিখিত ও সংরক্ষিত হয়।
কোরআনের একটি সুরার নাম ‘কলম’ এবং ওই সুরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা কলমের শপথ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
نْ وَالْقَلَمِ وَمَا يَسْطُرُونَ
নূন; শপথ কলমের এবং সেই বিষয়ের যা তারা লিপিবদ্ধ করে। (সুরা কলম: ১)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুফাসসির মুজাহিদ (রহ.) বলেন, এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা ওই কলমের শপথ করেছেন যে কলম দিয়ে জিকর অর্থাৎ কোরআন মাজিদ লেখা হচ্ছিলো। (তাফসিরে কুরতুবি)
অনেকে বলেছেন, আল্লাহ তাআলা শপথ করেছেন ওই কলমের যে কলম তিনি সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাকদির লেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা কলম সৃষ্টি করে তাকে লেখার আদেশ করেন। কলম বলল, কী লিখব? আল্লাহ তাআলা বললেন, যা হয়েছে এবং যা হবে তা সবই লিখ। কলম আদেশ অনুযায়ী অনন্তকাল পর্যন্ত সম্ভাব্য সব ঘটনা ও অবস্থা লিখে দিল। (মুসনাদে আহমদ: ৫/৩১৭)
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি সব মানুষ তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠাগুলো শুকিয়ে গেছে। (সুনানে তিরমিজি: ২৫১৬)
কলম আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি
তকদির লেখার ব্যাপারে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে নবিজি (সা.) বলেছেন, কলম আল্লাহ তাআলার প্রথম সৃষ্টি। অন্যান্য সব সৃষ্টির আগে আল্লাহ তাআলা কলম সৃষ্টি করেন এবং তাকে তকদির লেখার নির্দেশ দেন।
নবিজি (সা.) বলেন, মহান আল্লাহ সর্বপ্রথম যে বস্তু সৃষ্টি করেছেন তা হচ্ছে কলম। কলম সৃষ্টি করে তিনি তাকে বললেন, লিখো! কলম বললো, হে রব! কী লিখবো? তিনি বললেন, কেয়ামত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেক বস্তুর তাকদির লিখো।
নবিজির (সা.) ওপর অবতীর্ণ প্রথম ওহিতে ছিল কলমের উল্লেখ
আল্লাহর রাসুলের (সা.) ওপর অবতীর্ণ সর্বপ্রথম ওহি অর্থাৎ কোরআনের সর্বপ্রথম অবতীর্ণ আয়াতগুলোতেও ছিল কলমের উল্লেখ। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ خَلَقَ الْإِنسَانَ مِنْ عَلَق اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ عَلَّمَ الْإِنسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ
পড়ো, তোমার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন৷ সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক থেকে। পড়ো, এবং তোমার রব বড় মেহেরবান, যিনি কলমের সাহায্যে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন৷ মানুষকে এমন জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানতো না৷ (সুরা আলাক: ১-৫)
সর্বপ্রথম কলম ব্যবহার করেন যে নবি
দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে প্রথম কলম ব্যবহার করেন হজরত ইদরিস (আ.)। তিনি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার ওপর নাজিলকৃত বাণীসমূহ লিখে রাখতেন। নবিজি (সা.) বলেন, চারজন নবি ছিলেন সুরিয়ানি ভাষাভাষী; আদম (আ.), শীস (আ.), আখনুখ (আ.) — তিনিই ইদরিস (আ.) এবং তিনিই সর্বপ্রথম কলম দিয়ে লিখেছেন, এবং নুহ (আ.)। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৩৬২)
হজরত ইদরিসকে (আ.) আল্লাহ তাআলা নবুয়্যতের পাশাপাশি প্রখর মেধা ও সৃজনশীলতা দান করেছিলেন। বর্ণিত রয়েছে, তিনি তার যুগে প্রচলিত ৭২টি ভাষায় কথা বলতে পারতেন।
কোরআনে তার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَ اذۡكُرۡ فِی الۡكِتٰبِ اِدۡرِیۡسَ ۫ اِنَّهٗ كَانَ صِدِّیۡقًا نَّبِیًّا وَّ رَفَعۡنٰهُ مَكَانًا عَلِیًّا
আর স্মরণ কর এই কিতাবে ইদরীসকে। সে ছিল পরম সত্যনিষ্ঠ নবী। আমি তাকে উচ্চ মর্যাদায় সমুন্নত করেছিলাম। (সুরা মারিয়াম: ৫৬, ৫৭)
প্রথম মানুষ ও আল্লাহর প্রথম নবি আদমের (আ.) জীবনকালেই ইদরিসের (আ.) জন্ম হয়। তিনি ছিলেন আদমের (আ.) পর আল্লাহর প্রথম নবি। তিনি হজরত নুহের (আ.) বা তার বাবার দাদা ছিলেন।
ওএফএফ/জিকেএস