প্রথম বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে নাস্তানাবুদ বাইডেন, কী ভাবছে বিশ্ব?

3 months ago 43

আর কয়েক মাস পরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় বারের মতো অংশ নিতে যাচ্ছেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আর তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে লড়াই করবেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

এদিকে আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিএএন-এর প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও বেশ সমালোচিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। ট্রাম্পের কাছে পুরোপুরি নাস্তানাবুদ হয়েছেন তিনি। বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া এই প্রেসিডেন্ট যে দ্বিতীয় বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগ্য নন তা নিয়ে ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এবং এর বাইরে চর্চা শুরু হয়ে গেছে।

তার বাজে পারফরম্যান্স সবাইকে হতাশ করেছে। বিদেশি কূটনীতিকরা হতবাক হয়েছেন এবং অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে বাইডেনের এমন পারফরম্যান্সের কারণে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে নির্বাচনে ট্রাম্পের কাছে তিনি খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না। আবার ট্রাম্প দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এলে সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নেতিবাচক হবে বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই। ট্রাম্প আবারও নির্বাচিত হলে পররাষ্ট্রনীতির স্থিতিশীল অবস্থা নষ্ট হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে বাইডেন এবং ট্রাম্পের মধ্যে হওয়া ওই বিতর্ক দেখে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিভ্নি দেশের কূটনীতিকরা। তারা বলছেন, এমনটা দেখার মতো নয়।

ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার বেশ কয়েকজন কূটনীতিকের সঙ্গে কথা বলেছে সিএনএন। তাদের সবার অনুভূতি প্রায় একই রকম। এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেছেন, বাইডেনের জন্য এটা ছিল একটি খারাপ রাত।

অপর এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেন, দুঃখজনক হলেও এটাই বাস্তবতা যে বাইডেন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং তার বয়স বেড়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই এটা দেখতে পাচ্ছি। আমি ইংরেজিতে বেশ ভালো হওয়ার পরেও তিনি কী বলছিলেন তা বুঝতে আমার বেশ অসুবিধা হয়েছে।

এক আরব কূটনীতিক বলেছেন, ট্রাম্প বাইডেনকে পুরোপুরি নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন। বাইডেনের পারফরম্যান্স নিয়ে এশিয়ান এক কূটনীতিক বলেন, আমি খুবই হতবাক হয়ে গেছি। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

ইউরোপজুড়ে বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পাতায় উঠে এসেছে বাইডেন এবং ট্রাম্পের বিতর্কের খবর।
প্রেসিডেন্ট বিতর্কে বাইডেনের পারফরম্যান্স এবং নভেম্বরে ট্রাম্প বিজয়ী হলে পররাষ্ট্রনীতিমালার ক্ষেত্রে যেসব নতুন আইন প্রণয়ন করতে পারেন সে সম্পর্কে ইতোমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

বৃহস্পতিবারের বিতর্কে ট্রাম্প আবারও তার বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব এবং ন্যাটোর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন। প্রথমবার তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়ও এই ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের লড়াইয়ে সহায়তা দিতে তহবিল অব্যাহত রাখার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন ট্রাম্প। তার দাবি, অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো একত্রে ইউক্রেনকে যে পরিমাণ সহায়তা দিয়েছে তার চেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন আক্রমণের বিষয়ে কথা বলেছেন। আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়েও বাইডেনকে আক্রমণ করেছেন তিনি।

এদিকে, ইউক্রেনের এক রাজনীতিবিদ সিএনএনকে বলেন, ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থান এবং তার বিবৃতি বেশ উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, আমরা খুবই উদ্বিগ্ন কারণ আমরা কমবেশি সবাই জানি যে, বাইডেন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তা ইউক্রেনের জন্য কি। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে পরিস্থিতি কি হবে সেটা আমাদের কারও জানা নেই।

তিনি বলেন, এটা হয়তো খুব ভালো কিছু হতে পারে অথবা খুব খারাপ কিছু হবে। আমরা জানি না কি হবে। আর এটা অবশ্যই বেশ উদ্বেগজনক।

তবে বৃহস্পতিবার বাইডেনের ওই বিতর্ক থেকে এখনই প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে তার সক্ষমতা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে রাজি নন। কারও কারও মতে, তিনি একটি ভালো টিম নিয়ে কাজ করছেন। তবে অনেকেই আবার প্রশ্ন তুলেছেন যে, ডেমোক্র্যাট পার্টি এই পরিস্থিতি কিভাবে সামাল দেবে?

এদিকে পোলিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদেক সিকোরস্কি সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, বাইডেনের এখন দায়িত্বের সঙ্গে তার উত্তরাধিকারের বিষয়ে পরিকল্পনা করা উচিত। অপর এক পোলিশ কূটনীতিক বাইডেনের এমন পারফরম্যান্সকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি এটাকে গাড়ি দুর্ঘটনার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক বলছেন, যদি সম্ভব হয় তাদের (ডেমোক্র্যাট) উচিত প্রার্থী পরিবর্তন করা। এদিকে ন্যাটোর এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প অবশ্যই এই বিতর্কে জিতেছেন। তবে বিশ্বের দর্শন সম্পর্কে তার চিন্তা-ভাবনা বেশ জটিল। যারা নিয়ম-ভিত্তিক বিভিন্ন নীতিতে বিশ্বাসী তাদের জন্য ট্রাম্প মোটেও ভালো নন। এই নিয়ম মানে হচ্ছে ভবিষ্যদ্বাণী। কিন্তু ট্রাম্প মানেই অনিশ্চয়তা। তিনি কি করবেন সে সম্পর্কে আগে থেকেই কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। তিনি রাশিয়ার প্রতি আরও নমনীয় হতে পারেন। সমস্যা হচ্ছে তার কোনো কৌশল নেই।

অন্যান্য কূটনীতিকদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্য আরব আমেরিকান ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা কমাবে। তিনি বাইডেনকে একজন ফিলিস্তিনি বলে উল্লেখ করেছেন যা খুবই বাজে বিষয়। এটা ফিলিস্তিনিদের রীতিমত অপমান করা। এক আরব কূটনীতিক বলেন, তিনি আরব ভোটারদের সমর্থন হারাবেন। ওই কূটনীতিক বলেন, ট্রাম্প বিষয়টা ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। তিনি অন্যভাবে এটা বোঝাতে পারতেন যে তিনি ইসরায়েলের অনেক বড় একজন সমর্থক।

তবে ট্রাম্পের এত সব সমস্যা থাকার পরেও বিতর্কে বাইডেনের বাজে পারফরম্যান্স সবকিছু উল্টে দিয়েছে। নভেম্বরের নির্বাচনে কী ঘটতে পারে তা নিয়েই এখন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যমেও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে খবর প্রকাশ হয়েছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেমোক্র্যাটরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

টিটিএন

Read Entire Article