বৈঠক বা হাঁটুগেড়ে বসা নামাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। নামাজের প্রতি দুই রাকাত পর বৈঠক করতে হয়। দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজের শেষে বৈঠক করা ফরজ, চার রাকাতবিশিষ্ট নামাজের প্রথম দুই রাকাতের পর বৈঠক করা ওয়াজিব এবং শেষ বৈঠক ফরজ। ফরজ নামাজের প্রথম বৈঠকে শুধু তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব, দরুদ ও দোয়ায়ে মাসুরা পড়া সুন্নাত।
ইমাম বা একা নামাজ আদায়কারী যদি ফরজ-ওয়াজিব নামাজের প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের আগে বা পরে ভুল করে দরুদ পড়ে ফেলে, তাহলে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়। কারণ প্রথম বৈঠকে দরুদ পড়ার পরপরই দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়ানো ওয়াজিব। ভুলবশত দরুদ পড়ার কারণে এই ওয়াজিব পালনে বিলম্ব হয়।
নামাজে কোনো ওয়াজিব ছুটে গেলে, কোনো ফরজ দুবার আদায় করলে, কোনো ওয়াজিব পরিবর্তন করলে এবং কোনো ফরজ বা ওয়াজিব আদায়ে দেরি হলে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হয়। সাহু সিজদার মাধ্যমে ওই ভুলগুলোর প্রতিবিধান হয় এবং নামাজ বিশুদ্ধ হয়ে যায়। উপরোক্ত ভুলগুলো হওয়ার পরও সাহু সিজদা আদায় না করলে ত্রুটিযুক্ত নামাজটি আবার পড়ে নেওয়া ওয়াজিব।
এ বিষয়টি বুঝতে অনেকের সমস্যা হয়। তারা প্রশ্ন করেন যে, দরুদ পড়া তো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ, দরুদ পড়ার কারণে সাহু সিজদা দিতে হবে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর হলো দরুদ পড়া ফজিলতপূর্ণ কাজ হলেও প্রথম বৈঠক দরুদের স্থান নয়। নামাজ আদায়ের সুনির্ধারিত পদ্ধতি রয়েছে। নামাজে সানা, কোরআন তিলাওয়াত, তাসবিহ, তাশাহুদ, দরুদ, দোয়ার জন্য নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। কেউ যদি তাশাহুদ পাঠের সময় কোরআন তিলাওয়াত করে, সে জন্যও সাহু সিজদা ওয়াজিব হয়।
উল্লেখ্য যে, মুক্তাদি যদি তাশাহুদের আগে বা পরে ভুল করে দরুদ পড়ে, তাহলে তার ওপর সাহু সিজদা ওয়াজিব হবে না। কারণ মুক্তাদির ভুলের কারণে সাহু সিজদা ওয়াজিব হয় না। তবে মুক্তাদিরও নামাজে মনোযোগী থাকা উচিত যেন এ রকম ভুল না হয়।
অর্থ ও উচ্চারণসহ দরুদে ইবরাহিম
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَّعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ, وبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِْيدٌ مَجِيْدٌ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম-মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা আলি ইবরাহীমা ইন্নাকা হামীদুম-মাজীদ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সা.) ও তার বংশধরদের প্রতি রহমত নাজিল করুন যেমন রহমত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম (আ.) ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ (সা.) ও তার বংশধরদের প্রতি বরকত নাজিল করুন যেমন বরকত নাজিল করেছিলে ইবরাহিম (আ.) ও তার বংশধরদের ওপর। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও মর্যাদাবান।
ওএফএফ/এমএস