মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলেই সবাই সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে আগন্তুকের প্রশ্নের সম্পূরক উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ডা. জুবাইদা রহমান প্রথমবারের মতো ভাষণ দেন।
তিনি নিজের জীবনে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার মতো অনেক শিশু-কিশোরের জন্য পাথেয়। তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
তারেক রহমান বলেন, গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশ বা অধিকার প্রয়োগ। ভোটের মাধ্যমে মানুষ সেটা প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের আদর্শের মধ্যে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যে কোনো মূল্যে কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। এ বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্য থাকতে হবে। সেইসঙ্গে মানুষের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী ১৫/২০ বছর গণতন্ত্র ধ্বংসের রাহু থেকে মুক্ত থাকব। পাশাপাশি স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশ আমরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারব।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহী। তিনি পরিবারের দিকে এবং নিজের জীবনের দিকে তাকাননি। সুতরাং কে কোথায় কী লিখল তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আইন করে আমাদের বাধ্য করা যাবে না, স্বাধীনতার ঘোষক অন্য কেউ। শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার দুই পর্বের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। প্রথম পর্বে ঢাকার শাহবাগে শহীদ আবু সাইদ কনভেনশন সেন্টারে (ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বিপরীতে) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু-কিশোরদের নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গল্প বলা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ে শিশু-কিশোরদের শোনান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও বেবি নাজনীন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও জিয়াউর রহমানের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাদের অন্যতম আগা খান একাডেমির ছাত্র শাহরিন মো. ছোয়াদসহ কয়েকজন। পাশাপাশি মিলনায়তনের বাইরে জিয়াউর রহমানের জীবনঘনিষ্ঠ অসংখ্য ছবি পরিদর্শন করেন শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, সদস্য সচিব ড. সোহাগ আওয়াল এবং সদস্য ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির, নূরুল ইসলাম মনি, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রীতা, জেডআরএফের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক আবদুল করিম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমনসহ রাজনীতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের সদস্যরা।
এরপর একইস্থানে দ্বিতীয় পর্বে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যার গল্প আমাদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন জেডআরএফের প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট কার্ডিওলোজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তিলাওয়াত ও মুনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক ড. মো. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার। অধ্যাপক নাসরিন সুলতানার পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ফাহাম আব্দুস সালাম, ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী, অধ্যাপক হালিম খান, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, মুক্তিযোদ্ধা লুতফুল হাসান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুফলেহ আর ওসমান, প্রতিবন্ধি নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ক ইফতেখার মাহমুদ, একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র কায়সান আহিয়ান রেজা।
অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের ওপর একটি বিশ্লেষণধর্মী ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলেসের এমিরেটাস অধ্যাপক এডি ভান ড্রিসে।