প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে হিন্দু নেতাদের সাক্ষাৎ

13 hours ago 6

শারদীয় দুর্গাপূজা সামনে রেখে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন হিন্দু ধর্মীয় নেতারা। 

সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয় বলে তারা জানিয়েছেন।

সাক্ষাতে হিন্দু ধর্মীয় নেতারা জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর এক হাজারের বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে। সারাদেশে পূজামণ্ডপ প্রস্তুতের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। তারা প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান এবং আসন্ন দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্নে এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতে পারে, সেজন্য সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন। এ ছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এবং নির্বাচন ঘিরে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন যাতে কোনো আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও অনুরোধ জানান।

জানা গেছে, সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে পূজার অগ্রিম শুভেচ্ছা জানান এবং দুর্গাপূজা ঘিরে যাতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি না হয়, সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। 

তিনি আরও বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মডেল মন্দির স্থাপনসহ অনুদান এবং বরাদ্দের ক্ষেত্রেও প্রধান উপদেষ্টা আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান হিন্দু ধর্মীয় নেতারা।

সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, গত বছর দুর্গাপূজায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে আপনি বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে- এমন দেশ আমরা চাই না। আমরা প্রথমবারের মতো কোনো সরকারপ্রধানের কাছে এমন বক্তব্য শুনেছি। আমরাও আপনার বক্তব্যের সাথে একমত, আমরাও চাই- এ আয়োজনে সবাই সহযোগিতা করুক, দেশের সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকুক। আপনার বক্তব্য সবসময় আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। কোনো সরকারপ্রধানের এতো সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ আমরা এই প্রথম দেখলাম। 

এ সময় স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব। তিনি বলেন, আপনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত আমাদের খোঁজখবর রেখেছেন। গত বছরের মতো এ বছরও পূজায় আমরা দুদিন ছুটি পেয়েছি। এ জন্যও আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ। 

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব তরুণ দে বলেন, আপনি দায়িত্বে এসে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির স্থাপন করেছেন। আমরা লক্ষ করেছি, গত এক বছর ধরে বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচুর মিথ্যা কথা, ফেইক নিউজ ছড়ানো হচ্ছে। আপনার নেতৃত্বে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে বাংলাদেশের সব মানুষের কল্যাণ হবে, আমরা সেটাই কামনা করি।

সাক্ষাতে হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাত্মানন্দজী মহারাজ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের সভাপতি অপর্ণা রায় দাস, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, শ্রীশ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি বিমান বিহারী তালুকদার, শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত, সিদ্ধেশ্বরী সার্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার প্রমুখ।

অন্যদিকে প্রধান উপদেষ্টার সাথে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক প্রমুখ ছিলেন।

Read Entire Article