প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে সুপ্রিম কোর্টে ৩০ ‘স্বপ্নসারথি’

6 hours ago 7

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে ব্র্যাকের উদ্যোগে গড়ে ওঠা ‘স্বপ্নসারথি’ কর্মসূচির ৩০ কিশোরী। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখার পাশাপাশি তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পায়।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ব্র্যাক।

প্রতিকূল বাস্তবতায় বেড়ে ওঠা এ কিশোরীদের স্বপ্ন ভবিষ্যতে আইন পেশায় যুক্ত হওয়া। প্রধান বিচারপতির আমন্ত্রণে আদালত পরিদর্শনের এই অভিজ্ঞতা তাদের জন্য দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে সরাসরি জানার এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ কিশোরীদের উদ্দেশে বলেন, মেয়েরা এখন আর কোনো ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে প্রবেশ করছে এবং নিজেদের যোগ্যতায় সাফল্য অর্জন করছে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা থাকলেও জুডিশিয়াল সার্ভিসে তার সাত বছরের অভিজ্ঞতায় কখনোই মেয়েদের এই কোটা ব্যবহার করতে হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে তারা ছেলেদেরও ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, আইন ও মনিটরিং থাকা সত্ত্বেও সমাজ এখনও পুরোপুরি আইনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না। তাই এ সমস্যার সমাধানে নারী-পুরুষ উভয়ের সচেতনতা জরুরি। পাশাপাশি নারীর শিক্ষা ও ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সংবিধানের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা কোনো ক্ষেত্রেই বৈষম্য থাকা উচিত নয়।

আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব বলেন, আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার যে স্বপ্ন ‘স্বপ্নসারথি’ কিশোরীরা ব্যক্ত করেছে, তা দারুণ আশাব্যঞ্জক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে বিচার বিভাগে নারীদের অংশগ্রহণ ৫০ শতাংশ কিংবা তারও বেশি হবে।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, কিশোরীদের ‘স্বপ্নসারথি’ বলার কারণ হলো—এই উদ্যোগ তাদের সংগঠিত করে দক্ষ করে তুলছে, যাতে তারা নিজেদের স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, সারাদেশে প্রায় ৬০ হাজার ‘স্বপ্নসারথি’ সদস্যের মধ্যে এক হাজার কিশোরীর লক্ষ্য আইনজীবী বা বিচারক হওয়া। তাদের মধ্য থেকে ৩০ জন সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছে, যা তাদের জীবনের এক অনন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।

অনুষ্ঠানে ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সেলপ ও জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি (জিজেডি) কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক শাশ্বতী বিপ্লব এবং লিগ্যাল এইড অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসি লিড এ টি এম মোরশেদ আলম উপস্থিত ছিলেন। এ সময় কিশোরীরা প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি ফারাহ মাহবুবকে নিজেদের লেখা চিঠি ও আঁকা ছবির একটি স্ক্র্যাপবুক উপহার দেয়। প্রধান বিচারপতিও তাদের হাতে উপহার তুলে দেন। পরে কিশোরীদের সুপ্রিম কোর্টের কার্যক্রম ঘুরে দেখানো হয়।

সুপ্রিম কোর্ট পরিদর্শনের আগে কিশোরীরা মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে অবস্থিত স্যার ফজলে হাসান আবেদ নলেজ হাব পরিদর্শন করে, যেখানে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠাতার জীবন ও কর্ম তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে একটি শেয়ারিং সেশনে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যতের স্বপ্ন প্রকাশ করে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ গত ১৪ জুলাই ব্র্যাক আয়োজিত এক জাতীয় কর্মশালায় এই কিশোরীদের সুপ্রিম কোর্টে আমন্ত্রণ জানান। আয়োজকদের আশা, এই অভিজ্ঞতা কিশোরীদের আইনি শিক্ষা ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কে আরও আগ্রহী করে তুলবে।

বর্তমানে ‘স্বপ্নসারথি’ কর্মসূচির আওতায় দেশের ৩১ জেলার ২ হাজার ৪০০ গ্রামে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী প্রায় ৬০ হাজার কিশোরী কাজ করছে। এ উদ্যোগ শুধু বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াচ্ছে না, পাশাপাশি কিশোরীদের শিক্ষা, দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করছে।

জেপিআই/জেএইচ

 

Read Entire Article