প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

2 hours ago 3
সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ভুয়া বিল-ভাউচার, পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ আদায়, শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট গাইড বই কিনতে বাধ্য করা, আইসিটি ফান্ড থেকে এসি ক্রয়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক, কর্মচারী ও অভিভাবকরা এসব অনিয়মের দ্রুত তদন্ত ও জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। ফলে সিনিয়র শিক্ষক আলাউদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি বিদ্যালয়ের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নানা অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ২০১২ সালের জুলাই মাসে বদলির মাধ্যমে আলাউদ্দিন এই স্কুলে যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন তহবিল থেকে অবৈধভাবে টাকা উত্তোলন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তিনি এ পদে টিকে আছেন। শিক্ষকরা বলেন, ২০২৪ সালের ১২ জুন সর্বশেষ নিয়মিত প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বিদ্যালয়ের ফান্ডে ৫২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ছিল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আরও ৩১ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ফান্ডে থাকার কথা ছিল প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৪০ লাখ টাকা। শিক্ষকরা অভিযোগ করেন, বাকি টাকা বিভিন্ন খাতে ভুয়া বিল দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন আলাউদ্দিন। শিক্ষক ও অভিভাবকদের অভিযোগ, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়কৃত সাত লাখ টাকার মধ্যে মাত্র চার লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকার হিসাব দেখানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ও কর্মচারীদের মধ্যে সম্মানি বাবদ দেওয়া হয়েছে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং কাগজ কেনায় ব্যয় দেখানো হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। বাকি টাকার কোনো সঠিক হিসাব দেওয়া হয়নি। এমনকি শিক্ষকদের মধ্যে সম্মানি বণ্টনেও বৈষম্য করা হয়েছে। ঘনিষ্ঠ শিক্ষকদের সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দেওয়া হলেও, অন্যদের মাত্র পাঁচ হাজার এবং কর্মচারীদের সাড়ে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গত বছর নবম ও দশম শ্রেণির পরীক্ষার ফি ছিল ৩৫০ টাকা। কিন্তু আলাউদ্দিন দায়িত্ব নেওয়ার পর তা দ্বিগুণ করে ৬৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ সাতক্ষীরার অন্য সরকারি স্কুলগুলোতে পরীক্ষার ফি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা ও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকদের যোগসাজশে পরীক্ষার ফি দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। এতে অনেক দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থী পড়ালেখা চালিয়ে যেতে সমস্যায় পড়ছে। শিক্ষকরা আরও জানান, গাইড বই নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আলাউদ্দিন ও সিনিয়র শিক্ষক রবিউল ইসলাম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান লেকচার ও পাঞ্জেরীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওইসব গাইড বই কিনতে বাধ্য করেছেন। এর ফলে অভিভাবকদের ওপর বাড়তি আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে। একজন শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এক ফান্ডের টাকা অন্য ফান্ডে খরচ করার সুযোগ নেই। কিন্তু আলাউদ্দিন আইসিটি ফান্ড থেকে টাকা তুলে তিনটি এসি কিনে নিজের কক্ষে লাগিয়েছেন। প্রতিটি এসির প্রকৃত দামের চেয়ে বেশি দেখিয়ে ভাউচার করে টাকা তোলা হয়েছে। শিক্ষকদের অভিযোগ, টিফিনের টেন্ডারেও অনিয়ম হয়েছে। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী জানান, বিদ্যালয়ের আয় বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু তাদের বেতন কমানো হয়েছে। আগে মাস্টাররোলে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন ছিল ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে কমিয়ে চার হাজার টাকা করা হয়েছে। এমনকি দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন আলাউদ্দিন। কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অভিভাবকেরাও অভিযোগ করেন, আলাউদ্দিন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে অসদ আচরণ করেন। একাধিক অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘তিনি তো কোনো সহকারী প্রধান শিক্ষকও নন। তিনি কেবল একজন সিনিয়র শিক্ষক। তাহলে তার মতো অযোগ্য ও দুর্নীতিগ্রস্ত একজনকে কিভাবে একটি সনামধন্য স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হলো?’ অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকরা আলাউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি। তবে প্রতিবেদককে বিদ্যালয়ে এসে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি বিদ্যালয়ের সভাপতি। অথচ পরীক্ষার ফি বাড়ানো কিংবা অনিয়মের বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Read Entire Article