‘কসমেটিকসের দামের অবস্থা হার্ট অ্যাটাক করার মতো। আগে যে ব্যান্ড ২০-৩০ টাকায় কিনতাম, এখন সেটা ৫০-৭০ টাকা। শখ করে কিছু কিনলে পরেরবার এসে দেখি দাম দ্বিগুণ।’
এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্রেতা সাদিয়া আক্তার। তবে শুধু সাদিয়া আক্তার না, ক্রেতারা বলছেন—প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে প্রসাধনী পণ্যের দাম। এতে বিক্রিও কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রসাধনী পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ পরিবারের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। গত এক বছরে প্রায় প্রতিটি প্রসাধনী পণ্যের দাম দেড়গুণেরও বেশি বেড়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের।
প্রসাধনী পণ্যের একটি দোকানে কথা হয় নাজিয়া বেগম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে ৫০ টাকায় যে পণ্য পাওয়া যেতো, এখন সেটি ৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এত দ্রুত দাম বাড়ছে যে কেনাকাটা করতে খুব কষ্ট হয়।’
‘এক মাস আগের ৫০০ টাকার পণ্য এখন ৬০০ থেকে ৬১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় ক্রেতা কমে গেছে। আমরা নিজেরাও সমস্যায় পড়ছি।’
সালমা ইসলাম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘এখনকার বাজারে টাকা থাকলেও সবকিছু কেনা যায় না। প্রয়োজনের অর্ধেকও মেটানো যাচ্ছে না।’
বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেছে, গত ছয় মাসে নিত্য ব্যবহৃত বেশ কিছু প্রসাধনী পণ্যের দাম আকাশচুম্বী হারে বেড়েছে। পেনটেইন শ্যাম্পু আগে ছিল ৭৪৫ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। ওআইসি মিল্ক হোয়াইটিং ফেসওয়াশ ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৫১০ টাকা হয়েছে। বডি স্প্রে (সিক্রেট) ৪৬০ টাকা থেকে ৫২০ টাকায় পৌঁছেছে। প্যারাসুট তেল ৩৬০ থেকে ৪৫০ টাকা হয়েছে। কোডোমো বেবি লোশন ৫৬০ থেকে বেড়ে ৬৫০ টাকা। বেবি ওয়াশ ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নেভিয়া ক্রিম ৪৩০ থেকে ৫৫০ টাকা, ক্লিন অ্যান্ড ক্লিয়ার ২৫০ থেকে ৩৭০ টাকা, ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী ২৮৫ থেকে ৩৬০ টাকা এবং লিপস্টিক বক্স ১২০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০০ টাকায় পৌঁছেছে।
- আরও পড়ুন:
- কাঁকড়ায় খাওয়া-কাটা ইলিশে সাধ মেটাচ্ছে মধ্যবিত্তরা
- বেড়েছে চাল-ডিমের দাম, ৮০ টাকার নিচে মিলছে না সবজিও
- পাইরেক্সের দখলে সিরামিকের বাজার
- চাঁপাইনবাবগঞ্জের দড়ির খাটলা নজর কেড়েছে অভিজাতদের
- দামে হাঁসফাঁস, ক্রেতার নাভিশ্বাস
দাম বাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। পটুয়াখালী শহরের আমিন ব্যাগ হাউজের মালিক আমিন মিয়া বলেন, ‘একটা বডি স্প্রের দামই বেড়েছে ১০০ টাকা। আগে ২৫০ টাকায় কিনলে এখন সেটা ৩৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’
প্রজাপতি কসমেটিকস দোকানের মালিক শারমিন সুলতানা জানান, ১০-১৫ দিনের মধ্যেই প্রতিটি পণ্যের দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে যায়। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটানো কষ্টকর হয়ে উঠছে।
‘১০-১৫ দিনের মধ্যেই প্রতিটি পণ্যের দাম ৭০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে যায়। দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটানো কষ্টকর হয়ে উঠছে।’
সাত সওদা কসমেটিকস হাউজের পরিচালক মো. ওসমান বলেন, ‘এক মাস আগের ৫০০ টাকার পণ্য এখন ৬০০ থেকে ৬১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম বাড়ায় ক্রেতা কমে গেছে। আমরা নিজেরাও সমস্যায় পড়ছি।’
অনুপম ডিস্ট্রিবিউটরের মালিক অনুপ দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মূলত কমিশনে ব্যবসা করি। কিন্তু কাঁচামাল ও ডলারের দাম বাড়ায় বিদেশি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।’
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. শাহ শোয়াইব মিয়া বলেন, ‘প্রসাধনী পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে। বিদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানিকারকের তথ্য ও দাম যাচাই করা হচ্ছে। দেশি পণ্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই এমআরপি উল্লেখ করে বাজারজাত করতে হবে। খুচরা বিক্রেতা যদি দাম বেশি রাখেন এবং ভোক্তা প্রতারিত হন, অভিযোগ পেলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’
এসআর/জেআইএম