পদ্মা সেতু চালুর পর পাল্টে গেছে দৌলতদিয়া ঘাটের চিত্র। এখন ঈদ মৌসুমেও থাকে না সেই আগের মতো যাত্রী ও যানবাহনের লম্বা সারি। হকারদের হাঁকডাকও তেমন নেই।
তারপরও নৌপথে ভোগান্তিহীন ঈদযাত্রা উপহার দিতে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে ঘাট সংশ্লিষ্ট দপ্তর, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার ঈদুল আজহায় নৌরুটে চলাচল করবে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ। এছাড়া দৌলতদিয়া প্রান্তের লঞ্চ ঘাটের পাশাপাশি চালু থাকবে তিনটি ঘাট এবং পানি বাড়লে সচল হবে আরেকটি ঘাট।
এদিকে ঈদ শেষে কর্মস্থলগামী মানুষের ভোগান্তি লাঘব ও যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের দিনসহ ঈদের আগে ও পরে সাতদিন নদীতে বন্ধ থাকবে বালুবাহি বাল্কহেড চলাচল। ১০ দিন বন্ধ থাকবে জরুরি পচনশীল পণ্যবাহি ট্রাক ছাড়া সব ধরনের ট্রাক পারাপার। সেই সঙ্গে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, মলমপার্টি, যাত্রী হয়রানি ও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় রোধেও থাকবে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর আগে ঈদ মৌসুমে ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে ৫-৭ হাজার যানবাহন নদী পারাপার হলেও সে সংখ্যা এখন কমে এসেছে দুই হাজারের নিচে। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তের সাতটি ফেরি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে ৩, ৪ ও ৭ এই তিনটি।
স্থানীয় আবুল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর এখন আর আগের মতো দৌলতদিয়ায় ভোগান্তি নেই। তবে ঘাটে স্থায়ী নদী শাসন প্রয়োজন। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির প্রভাবে ঈদ মৌসুমে ভাঙনে ঝুঁকি রয়েছে। আর ঘাট এলাকায় ভাঙন হলে ঈদে ঘরমুখো ও কর্মস্থলগামী মানুষের ভোগান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘাটের হকার সাচ্চু সরদার বলেন, ঈদের সময় ফেরি বেশি চলাচল করায় এখন দৌলতদিয়ায় তেমন যানজট হয় না। তার ওপর এখন গাড়ির চাপ কম। দেখা যায় ঘাটে আসা গাড়ি অল্প সময় অপেক্ষার পর ঘাট ক্লিয়ার হয়ে যাচ্ছে। ফলে এখন আর আগের মতো ভোগান্তি নাই।
যাত্রী মোয়াজ্জেম হোসেন ও নুরুন্নবীসহ কয়েকজন বলেন, ঈদের সময় ঘাটে চাঁদাবাজ, দালাল, ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম বেড়ে যায়। এবার আমরা আশা করছি প্রশাসন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাসচালক রমজান ও আরাফাত হোসেন বলেন, আগে দৌলতদিয়া ঘাটে অনেক ভোগান্তি হলেও এখন ভোগান্তি নেই। এবার ঈদের সময় আমরা নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভালোভাবে যেতে চাই। এজন্য যেমন ঘাটগুলো ভালো রাখতে হবে, তেমনি প্রশাসনের সঠিকভাবে দ্বায়িত্ব পালন করতে হবে।
দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাট ম্যানেজার নুরুল আনোয়ার মিলন বলেন, এবার ঈদে যাত্রীদের পারাপার নির্বিঘ্ন করতে এ রুটে ২০টি লঞ্চ চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগের মতো এখন আর যাত্রীদের চাপ হয় না। ফলে ২০টি লঞ্চ ঠিকভাবে চলাচল করলে যাত্রীদের চাপ সামাল দেওয়া সম্ভব। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার সুযোগ নাই। কারণ ঘাট এলাকায় সার্বক্ষণিক প্রশাসনের নজরদারি থাকে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বিআইডব্লিউটিসির পক্ষ থেকে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এই ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে ছোট-বড় মোট ১৭টি ফেরি চলাচল করবে। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তের তিনটি ঘাট সচল আছে এবং পদ্মার পানি বাড়লে আরও একটি ঘাট বাড়বে। আশা করছি ফেরিগুলো ঠিকঠাকভাবে চলাচল করলে ঈদের আগে-পরে কোনো ভোগান্তি হবে না।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, এবার সুষ্ঠুভাবে ঈদ উদযাপনে রাজবাড়ী জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাত্রী ও পশুবাহি ট্রাক চলাচলরত সড়কে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে এবং দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক ব্যবস্থার পাশাপাশি যাত্রী হয়রানি, চাঁদাবাজ, দালাল, ছিনতাইকারীদের তৎপরতা রোধে পোশাক ও সাদা পোশাকে কাজ করছে পুলিশ। এছাড়া নদীতে পশুবাহি ট্রলার নিরাপদে চলাচলের জন্য গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের সঙ্গে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড যৌথভাবে কাজ করছে।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা এবং যাত্রীদের হয়রানি, ছিনতাইকারী ও দালালের খপ্পর থেকে মুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসনের একাধিক মোবাইল টিম কাজ করবে।
রুবেলুর রহমান/জেডএইচ/জেআইএম