প্রস্তুত শোলাকিয়া ময়দান, এবার ইমামতি করবেন না মাওলানা মাসঊদ

3 months ago 35

১৯৭তম জামাতের জন্য প্রস্তুত উপমহাদেশের প্রাচীন ও সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া। এবার ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।

জামাতে ইসলাহুল মুসলিমীন পরিষদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ ইমামতি করার কথা ছিল। তবে তিনি অসুস্থ থাকায় তার বিকল্প হিসেবে ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ।

শনিবার (১৫ জুন) দুপুরে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শন শেষে ঈদগাহ ময়দান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ব্রিফিংয়ে এতথ্য জানান।

জেলা প্রশাসকের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্রিফ করেন জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ ও র‌্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান।

জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। তাদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে অজুর পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য পর্যাপ্ত ওয়াশরুমের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মুসল্লিদের কোনো শারীরিক সমস্যা হলে এখানে মেডিকেল ক্যাম্প থাকবে তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এখানে কাজ করবেন। ওয়াচ টাওয়ার ও মাঠের আশপাশে পর্যাপ্তসংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। পর্যাপ্ত পুলিশ, র‌্যাব, আনসার সদস্যসহ আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হবে।

প্রস্তুত শোলাকিয়া ময়দান, এবার ইমামতি করবেন না মাওলানা মাসঊদ

ঈদের জামাতে অংশ নিতে মুসল্লিদের জন্য ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে ডিসি বলেন, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ভৈরব ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ লাইনে ‘শোলাকিয়া এক্সপ্রেস’ নামে দুটি স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-১ ভৈরব থেকে ছাড়বে ভোর ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল ৮টায়। কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায়, ভৈরব পৌঁছাবে দুপুর ২টায়।

শোলাকিয়া এক্সপ্রেস-২ ময়মনসিংহ থেকে ছাড়বে ভোর পৌনে ৬টায়, কিশোরগঞ্জ পৌঁছাবে সকাল সাড়ে ৮টায়। কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাবে দুপুর ১২টায় এবং ময়মনসিংহে পৌঁছাবে বিকেল ৩টায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ বলেন, ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো এলাকার ফুটেজগুলো আমরা সংগ্রহ করবো। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোনো ধরনের সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেকটি গেটে আর্চওয়ে থাকবে। নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে মাঠে প্রবেশ করতে হবে মুসল্লিদের। এছাড়া প্রত্যেককে সার্চ করার জন্য মেটাল ডিটেক্টর থাকবে।

প্রস্তুত শোলাকিয়া ময়দান, এবার ইমামতি করবেন না মাওলানা মাসঊদ

তিনি আরও বলেন, আশপাশে যেসব স্থাপনা রয়েছে, প্রত্যেকটিতে পুলিশ ডিউটিতে থাকবে। এরইমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সেখানে কাজ করছেন। আশপাশের যে হোটেল-রেস্তোরাঁ রয়েছে, সেগুলোকেও নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। এবার কোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা নেই।

র‌্যাব-১৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আলিমুজ্জামান বলেন, ঈদগাহে আসা-যাওয়ার গেটগুলোতে র‌্যাব সদস্যরা মোতায়েন থাকবেন। ওয়াচ টাওয়ারে স্বয়ংক্রিয় স্নাইপার রাইফেল থাকবে, যাতে যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধ করা যায়। বেশকিছু প্যাট্রোল কার থাকবে। সেগুলো শহরের বিভিন্ন এলাকায় টহল দেবে।

ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাক সরকার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ নূরে আলম, র‌্যাব-১৪ সিপিসি-২ কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানি অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফুল কবির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মনতোষ বিশ্বাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ঈদগাহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু রাসেল, কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা প্রমুখ।

ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে মুসল্লিদের সমাগমে।

প্রস্তুত শোলাকিয়া ময়দান, এবার ইমামতি করবেন না মাওলানা মাসঊদ

জনশ্রুতি আছে, বারোভূঁইয়া নেতা ঈশা খাঁর বংশধর শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের ওই জামাতে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।

পরবর্তী সময়ে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এ মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে। প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।

মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতই এ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জামাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

এসকে রাসেল/এসআর/জেআইএম

Read Entire Article