প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ধূমপায়ীদের অযোগ্য ঘোষণা ঐতিহাসিক মাইলফলক

10 hours ago 7

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ধূমপায়ীদের অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্তকে ঐতিহাসিক মাইলফলক বলে স্বাগত জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ।

সংস্থার সভাপতি অধ্যাপক ডা. খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ স্বাগত জানান।

সহকারী শিক্ষক নিয়োগে ধূমপানসহ যেকোনো মাদকদ্রব্য গ্রহণের অভ্যাস থাকলে আবেদন করার প্রয়োজন নেই- এমন শর্ত অন্তর্ভুক্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বুধবার (৫ নভেম্বর) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ শর্ত উল্লেখ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে হার্ট ফাউন্ডেশনের সভাপতি বলেন, ধূমপানসহ মাদক গ্রহণের অভ্যাস থাকলে শিক্ষক পদে আবেদনের অযোগ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। ধূমপান তরুণ সমাজকে নিকোটিন আসক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। নিকোটিন কিশোরদের মস্তিষ্কের বিকাশে বাধা দেয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

অধ্যাপক আব্দুল আউয়াল আরও বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দূরদর্শী ও সাহসী উদ্যোগ।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সেমিনারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়গুলোকে তামাকমুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু ধূমপান নয়, পান ও জর্দাসহ সব তামাকপণ্যই ক্ষতিকর। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে তামাকবিরোধী সচেতনতা অন্তর্ভুক্ত করা হবে, যেন তারা শ্রেণিকক্ষে তা বাস্তবায়ন করতে পারেন।’

উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, তামাককে অ্যাডিকটিভ সাবস্ট্যান্স বা আসক্তিকর পদার্থ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

আরও পড়ুন
প্রাথমিকে ১০২১৯ শিক্ষক পদে আবেদন শুরু ৮ নভেম্বর, ফি ১০০ টাকা
ধূমপায়ীরা প্রাথমিকের শিক্ষক পদে আবেদন করতে পারবেন না
প্রাথমিকের ৬৫৫০২ প্রধান শিক্ষক দশম গ্রেডে উন্নীত

এখন ধূমপায়ীদের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করার অযোগ্য ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানিয়েছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, শিশুরা বড়দের কাছ থেকে শিখে। শিক্ষক ধূমপান করলে তা শিক্ষার্থীদের আচরণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে এমন শর্ত যুক্ত করা অত্যন্ত সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

গ্লোবাল ইয়ুথ টোব্যাকো সার্ভে (২০১৩) অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী ছেলেদের ৯ দশমিক ২ শতাংশ এবং মেয়েদের ২ দশমিক ৮ শতাংশ ধূমপান করে। একই বয়সী ছেলেদের ৬ দশমিক ২ শতাংশ ও মেয়েদের ২ দশমিক ৯ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে।

দেশে বর্তমানে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে এবং প্রতি বছর তামাকজনিত রোগে প্রাণ হারায় ১ লাখ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ। তামাকজনিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।

তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছয়টি নীতিগত সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো- সব জনপরিসর ও গণপরিবহনে ধূমপানের নির্ধারিত স্থান বাতিল, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম বন্ধ, শিশু-কিশোরদের সুরক্ষায় ই-সিগারেট নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ, তামাকপণ্যের খুচরা ও খোলা বিক্রি বন্ধ ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।

একই সঙ্গে সংস্থাটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছে।

এসইউজে/একিউএফ/এএসএম

Read Entire Article