প্রাথমিকে ধর্ম বই থাকলেও পড়ানোর যোগ্য শিক্ষক নেই
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে পদ সৃষ্টি করেও তা বাতিল করেছে সরকার। ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের আপত্তির মুখে পদ দুটি বাতিল করা হয়। তাদের দাবি ছিল দুটি। এক—সংগীত শিক্ষক পদ বাতিল এবং দ্বিতীয়ত—ধর্ম শিক্ষকের পদ সৃষ্টি। সরকার সংগীত শিক্ষক পদ বাতিল করার পরও মাঠে রয়েছেন ধর্মভিত্তিক দলগুলো। তাদের দাবি— ধর্ম বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ করা কতটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত; তা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভেতরে-বাইরে চলছে আলোচনা। এ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আল-আমিন হাসান আদিব। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাই একজন শিশুর ভিত্তি। সেখানে সে মানবিকতা শেখে, ন্যায়পরায়ণতা শেখে। বাংলাদেশের সমাজে সততা, মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার অভাব প্রকট। সমাজ থেকে পরিবার থেকে শিশুরা এটা শিখতে পারছে না। তাহলে সেটি আসবে কোথা থেকে? অবশ্যই ধ
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগে পদ সৃষ্টি করেও তা বাতিল করেছে সরকার। ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের আপত্তির মুখে পদ দুটি বাতিল করা হয়। তাদের দাবি ছিল দুটি। এক—সংগীত শিক্ষক পদ বাতিল এবং দ্বিতীয়ত—ধর্ম শিক্ষকের পদ সৃষ্টি। সরকার সংগীত শিক্ষক পদ বাতিল করার পরও মাঠে রয়েছেন ধর্মভিত্তিক দলগুলো। তাদের দাবি— ধর্ম বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ করা কতটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত; তা নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভেতরে-বাইরে চলছে আলোচনা। এ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিঞা মো. নূরুল হক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক আল-আমিন হাসান আদিব।
প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাই একজন শিশুর ভিত্তি। সেখানে সে মানবিকতা শেখে, ন্যায়পরায়ণতা শেখে। বাংলাদেশের সমাজে সততা, মানবিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার অভাব প্রকট। সমাজ থেকে পরিবার থেকে শিশুরা এটা শিখতে পারছে না। তাহলে সেটি আসবে কোথা থেকে? অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষা থেকে। সেটা হতে পারে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্ট বা বৌদ্ধ ধর্ম।
জাগো নিউজ: দেশে অনেক ধরনের মাদরাসা আছে। সেখানে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের দাবি উঠেছে। এটিকে কীভাবে দেখেন?
আরও পড়ুন
বিতর্কের মুখে প্রাথমিকের সংগীত-শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাদ
প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রতিবাদ
প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের প্রজ্ঞাপন কেন অবৈধ নয়
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষক পদ বাতিলে সরকারের ব্যাখ্যা
অধ্যাপক নুরুল হক মিঞা: প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাই একজন শিশুর ভিত্তি। সেখানে সে মানবিকতা শেখে, ন্যায়পরায়ণতা শেখে। বাংলাদেশের সমাজে সততা, মানবিকতা ও ন্যায় পরায়ণতার অভাব প্রকট। সমাজ থেকে পরিবার থেকে শিশুরা এটা শিখতে পারছে না। তাহলে সেটি আসবে কোথা থেকে? অবশ্যই ধর্মীয় শিক্ষা থেকে। সেটা হতে পারে ইসলাম, হিন্দু, খ্রিস্ট বা বৌদ্ধ ধর্ম। যেহেতু বাংলাদেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মুসলিম। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি হিন্দু ধর্ম বা অন্য ধর্মের শিক্ষকও নেওয়া হোক। তাতে তো কেউ আপত্তি করছেন না।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মকে ধারণ করেন; ধর্মপ্রাণ। তারা সন্তানদেরও ধার্মিক ও সৎ-নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে বড় করতে চান। এখন প্রাথমিকে যদি ধর্ম শিক্ষা না থাকে, তাহলে অনেক বাবা-মা সন্তানকে সেখান থেকে নিয়ে আশপাশের মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেবেন। এতে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমে যাবে
জাগো নিউজ: প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, প্রাথমিক স্তরে যে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়, তা সহকারী শিক্ষক যারা আছেন, তাদের মাধ্যমেই সম্ভব। নতুন করে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই। এ ব্যাপারে আপনি কী মনে করেন?
নুরুল হক মিঞা: আমি দ্বিমত পোষণ করছি। অধিদপ্তর যেটা বলেছে যে, যে কোনো শিক্ষক ধর্ম পড়াতে পারেন। এটা আংশিক সত্য হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক বিদ্যালয়ে ইসলাম শিক্ষা ক্লাস নিচ্ছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষক। এটা তো চলতে পারে না।
জাগো নিউজ: সারাদেশে সাড়ে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সব বিদ্যালয়ে একজন বা একাধিক ধর্মের শিক্ষক নিয়োগ করা কি সম্ভব? এটা কতটা বাস্তবসম্মত দাবি?
আরও পড়ুন
সংগীত শিক্ষক নিয়োগের ঘোষণায় আজহারীর নিন্দা
এমপিওভুক্ত হচ্ছে ১০৮৯ ইবতেদায়ি মাদরাসা, আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন
ধর্মীয় শিক্ষক নিয়ে যা বললেন অভিনেত্রী দীপা খন্দকার
নুরুল হক: দেখুন, আমি নিজেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রাইমারিতে পড়েছি আমি। আমাদের সময়ে দেখতাম প্রত্যেকটি স্কুলে একজন করে মৌলভি শিক্ষক থাকতেন; কেউ কেউ তাকে ধর্ম শিক্ষকও বলতেন। তারাই ইসলাম শিক্ষা ক্লাস নিতেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের দুটি শ্রেণিকে একসঙ্গে করে একজন হিন্দু ধর্মের শিক্ষক ক্লাস নিতেন। তাতে ধর্ম শিক্ষা ক্লাসটা বেশ ভালো হতো। সেটি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়েছে। এখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষার সুযোগ নেই। বই আছে কিন্তু পড়ানোর মতো যোগ্য লোক নেই। এজন্য আমি মনে করি প্রাথমিকে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা আছে এবং জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ দাবিও বাস্তবসম্মত বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: প্রাথমিক স্তরে ইসলাম ধর্ম বা অন্য ধর্মের শিক্ষা কতটুকু আছে? এটা না থাকলে কী প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন আপনি?
নুরুল হক: যতটুকু জানি, প্রাথমিকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ধর্ম বই নেই। কিন্তু সপ্তাহে একদিন শিক্ষক নির্দেশিকা দেখে তাদের ক্লাস নেওয়া হয়; শেখানো হয়। তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ধর্ম বই আছে এবং সপ্তাহে দুই-তিনদিন ক্লাসও হয়। সেখানে কোরআন পাঠ, সুরা মুখস্ত, হাদিসের পাঠ আছে। এগুলো একজন ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত বা বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ শিক্ষক যদি না পড়ান তাহলে শিক্ষার্থীরা কিছুই শিখবে না। তারা সুরা-ক্বিরাত না শিখে মাধ্যমিক স্তরে উঠে যাবে।
দ্বিতীয়ত বাংলাদেশের মানুষ ধর্মকে ধারণ করেন; ধর্মপ্রাণ। তারা সন্তানদেরও ধার্মিক ও সৎ-নিষ্ঠাবান মানুষ হিসেবে বড় করতে চান। এখন প্রাথমিকে যদি ধর্ম শিক্ষা না থাকে, তাহলে অনেক বাবা-মা সন্তানকে সেখান থেকে নিয়ে আশপাশের মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেবেন। এতে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী কমে যাবে।
আরও পড়ুন
‘মাদরাসার শিক্ষার্থীদের কোয়ালিটি আছে, সেটা স্বীকার করা উচিত’
ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবিতে ১৯ দিন ধরে অবস্থান শিক্ষকদের
প্রাথমিকে ধর্ম শিক্ষকের বিষয়ে কী ভাবছে সরকার
‘কিছু তথ্য আমি পেয়েছি, যেখানে শিক্ষার্থী কম থাকায় দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় একীভূত বা মার্জ করে ফেলা হয়েছে। অথচ তার আশপাশের কোনো কোনো নুরানি মাদরাসায় মাসে ৫ হাজার টাকা বেতনেও সন্তানকে ভর্তি করাচ্ছেন অভিভাবকরা। এর পেছনে বড় কারণ সাধারণ শিক্ষার সঙ্গে ধর্ম শিক্ষা থাকা বা না থাকা। প্রাথমিকে যেভাবে; যা শেখানো হচ্ছে সেটা হয়তো অভিভাবকরা পছন্দ করছেন না।’
জাগো নিউজ: নুরানি মাদরাসায় কী শেখানো হয়? সেখানে কি শিশুরা সাধারণ শিক্ষাটা পাচ্ছে? মানে ইংরেজি, বাংলা, গণিত…?
নুরুল হক: হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। এখন অধিকাংশ নুরানি মাদরাসায় কাঙ্ক্ষিত মানের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা প্রাথমিকের চেয়েও সেখানে বেশি শিখছে। নুরানিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত সবই শেখানো হচ্ছে। পাশাপাশি আরবিও শিখছে সেখানে। প্রাথমিকে বিনামূল্যের শিক্ষা; অর্থাৎ বেতন নেই, পরীক্ষার ফি নেই; আবার দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা, উপবৃত্তি আছে; বছর শেষে আবার বৃত্তি পরীক্ষা আছে। এতকিছু রেখেও অভিভাবকরা সন্তানকে নুরানি মাদরাসায় পাঠাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বোর্ড চেয়ারম্যান হিসেবে আমি খোঁজ রাখি। দেখেছি, কোনো কোনো নুরানি মাদরাসা আর ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি নিতে পারছে না। তাদের যতটা সক্ষমতা, তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মাদরাসায় ধরনা দিচ্ছে। এতে স্পষ্ট যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় ঝুঁকছেন। কারণ মাদরাসায় আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে ধর্মীয় শিক্ষাটাও পাচ্ছে। এখন যদি প্রাথমিকে ধর্ম শিক্ষাকে অপশনাল (ঐচ্ছিক) করে ফেলা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছি।
এএএইচ/ইএ/জিকেএস
What's Your Reaction?