প্রার্থিতা হারিয়ে বিএনপি নেতার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

5 hours ago 9

যদি আমার বাইরে কাউকে নমিনেশন দেওয়া হয় তাহলে এ সিট-ই পাবে না বিএনপি। আর সেই ক্ষমতাও কারও নেই। মাদারীপুর-১ আসনে এমপি বানাতে হলে আমাকেই নমিনেশন দিতে হবে। আমার বাইরে কারও জনসমর্থন ও লোকজন নেই। 

মঙ্গলবার (০৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন থেকে নাম স্থগিত হওয়ার পর এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করে কথা বলছিলেন মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন স্থগিত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লা। 

কামাল জামান মোল্লা বলেন, ‘এলাকার জনসমর্থন আমার সঙ্গে আছে, আমি কাজ করছি, দল আমাকে নমিনেশন দিয়েছে, দেবে। আমার কনফিডেন্স আছে।’

জানা গেছে, কামাল জামান মোল্লা শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তার নাম ঘোষণা করার পর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাচ্চরে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাঙচুর করে মনোনয়ন না পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা। 

এরই সূত্র ধরে মঙ্গলবার কামাল জামান মোল্লার নাম স্থগিত ঘোষণা করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার (০৩ নভেম্বর) গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ সংসদীয় আসনের মধ্যে মাদারীপুর-০১ (শিবচর উপজেলা) আসনেও মনোনয়নপ্রাপ্ত কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণা করা হয়। অনিবার্য কারণবশত ঘোষিত মাদারীপুর-০১ (শিবচর উপজেলা) আসন ও দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম স্থগিত রাখা হলো।

এ বিষয়ে কামাল জামান মোল্লা বলেন, উনি (সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী) একশ থেকে ১২০ জন নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছে। আমি যদি প্রতিহত করতে যাইতাম আমার ওই এলাকারই ৫ হাজার লোক যেত। কিন্তু আমি সবাইকে নিষেধ করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তারাই ৩০ মিনিটের মধ্যে সব ঠিক করে দিয়েছেন। এ ছাড়া নমিনেশন অনেকেই চায় কিন্তু অনেকে পায় আবার অনেকে পায় না, এ ঘটনা আগেও অনেক ঘটেছে। তবে আমরা প্রতিহত করতে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি, তাই যাইওনি।

তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন স্থগিত করছে কিনা তা আমি এখনো জানি না, তবে শুনেছি। এজন্য বিষয়টি জানার জন্য ঢাকায় যাচ্ছি। তবে স্থগিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থী কামাল জামান মোল্লা ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বর্তমানে তিনি শিবচর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিকভাবে তার পরিবারও বেশ প্রভাবশালী।

তার ভাই লতিফ মোল্লা শিবচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অপরদিকে তার দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকী মাদারীপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২০১৮ সালে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন।

উল্লেখ্য, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে বিএনপির পক্ষ থেকে মাদারীপুরের দুটি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জামান কামাল নুরুদ্দিন মোল্লার নাম এবং মাদারীপুর-৩ (কালকিনি, ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে আনিসুর রহমান খোকন তালুকদারের নাম ঘোষণা করা হয়। 

তবে মাদারীপুর-১ আসনের কামাল জামান মোল্লার নাম ঘোষণার পরপরই অপর মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। একপর্যায়ে লাভলু সিদ্দিকীর সমর্থকরা সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধরা কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর চালায় এবং ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করে রাখে। 

এতে যান চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদর উপজেলা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রার্থী হিসেবে এখনো কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি।

Read Entire Article