পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রয়াত বাবার স্মরণে ৫০০ রোগীকে ফ্রি চিকিৎসা দিলেন চিকিৎসক ছেলে। এসময় তার স্ত্রীও রোগী দেখেন। পাশাপাশি ওষুধ কিনতে হতদরিদ্র রোগীদের আর্থিক সহায়তাও করেছেন এ দম্পতি।
মঙ্গলবার (১৮ জুন) উপজেলার ধুলাস্বার ইউনিয়নের অনন্তপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী এ মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করেন ওই গ্রামের প্রয়াত ইউপি মেম্বার রফিকুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে ডা. আতিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ডা. ফারিয়া ফেরদৌস। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্বে ছিলো ‘মানবতার ডাক’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
চিকিৎসক ছেলে ও পুত্রবধূ দুজনই মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুরুষ ও মহিলা রোগীদের পৃথকভাবে ব্যবস্থাপত্র প্রদান, রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ডায়াবেটিস চেক-আপ, ডেন্টাল চেক-আপ, রক্তচাপ নির্ণয়সহ বেশ কয়েকটি রোগের ফ্রি চিকিৎসা দেওয়া এই ক্যাম্পে। নিজ গ্রামের পাশাপাশি আশপাশের ৪-৫টি গ্রামের বাসিন্দারা চিকিৎসা নিতে আসেন।
বালিয়াতলী ইউনিয়নের মাজেদা বেগম (৫৫) বেলেন, ‘কখনো কল্পনাও করিনি যে একসঙ্গে ডায়াবেটিস, ব্লাড, ডেন্টালসহ বেশকিছু রোগের চিকিৎসা গ্রামে বসে পাবো। এতে আমার অনেক উপকার হলো।’
নাসির নামের একজন রোগী বলেন, ‘আমাদের ভালো ডাক্তারের পরামর্শ পেতে বরিশাল যেতে হয়। সেখানে গিয়ে চিকিৎসা করাতে কমপক্ষে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। এত টাকা আমাদের নেই। তাই চিকিৎসা করাতে পারিনি। আজকে এখানে ফ্রিতে ডাক্তার দেখালাম। আমাদের অনেক উপকার করলো। দোয়া করি তার বাবার জন্য।’
এ বিষয়ে প্রয়াত রফিকুল ইসলাম হাওলাদারের বড় ছেলে মাওলানা মাহবুবুল আলম বলেন, ‘আমার বাবা সারাজীবন মানুষের সেবা করে এসেছেন। আমাদের ছয় ভাইকে মানুষ করেছেন। আমাদের প্রতি তার নির্দেশ ছিল আমরা যেন মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের পাশে থাকি। আমার ছোট ভাই একজন চিকিৎসক হওয়ায় এ আয়োজন করা হয়েছে। আমরা আজীবন এভাবে মানুষের পাশে থাকতে চাই।’
সার্বিক দায়িত্বে থাকা মানবতার ডাক সংগঠনের সভাপতি অহিদুল ইসলাম জানান, বালিয়াতলী, ধুলাসার, মিঠাগঞ্জ ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক রোগী বিনামূল্যে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পুত্রবধূ ডা. ফারিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘একজন চিকিৎসক হিসেবে আজকের দিনটি আমার কাছে স্পেশাল। কারণ আমি আমার শ্বশুরের স্বপ্ন পূরণে এই এলাকার প্রান্তিক, গরিব মানুষকে চিকিৎসা দিতে পেরেছি।’
এ বিষয়ে ডা. আতিকুল ইসলাম বলেন, বাবা বেঁচে না থাকলেও বাবার বয়সী অনেক গরিব মানুষ এখানে রয়েছেন, যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তাই বাবার স্মরণে আজ এলাকায় বিনামূল্যে মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়েছি। যারা হতদরিদ্র, ওষুধ কিনে খেতে পারেন না; তাদের কিছু টাকাও দেওয়া হয়েছে যাতে তারা ওষুধ কিনে খেতে পারেন।
আসাদুজ্জামান মিরাজ/এসআর/এমএস