প্লাস্টিক পণ্যে ঝুঁকছে মানুষ, ঐতিহ্য হারাচ্ছে বাঁশ-বেতশিল্প

4 hours ago 6

বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকার প্রধান উৎস হিসেবে এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরের প্রায় অর্ধশত পরিবার। এই বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র বর্তমানে তাদের জীবিকার প্রধান বাহক।

কিন্তু দিন দিন প্লাস্টিকের পণ্যের দিকে মানুষের ঝুঁকে যাওয়া ও বাঁশের তৈরি বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ায় ভালো নেই এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগররা।

হরিপুর উপজেলা থেকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঁশশিল্প। বাঁশের তৈরি পণ্যের কদর আর তেমন নেই বললেই চলে। ঐতিহ্য হারাতে বসেছে এই শিল্পটি। গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও, এখন বিলুপ্তির পথে শিল্পটি।

একটা সময় বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র ছাড়া বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো। এখন সময়ের বিপরীতে বদলে গেছে চিরচেনা সেই চাহিদা। এরপরেও উপজেলার লহুচাঁদ, বনবাড়ি, চৌরঙ্গী, হরিপুর, কাঠালডাংগী, শিয়াল্লড় গ্রামের মানুষ ঐতিহ্য ধরে রাখাসহ জীবন ও জীবিকার তাগিদে বাঁশ আর বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন।

বর্তমানে স্বল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিকসামগ্রী পাওয়াতে কদর বেড়ে যাওয়ায় কুটিরশিল্পের চাহিদা এখন আর তেমন নেই। তা ছাড়াও চাহিদার তুলনায় ঘাটতি পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ। এখন আর আগের মতো বাড়ির আশপাশে বাঁশের ঝোপ রাখছে না কেউ, সেগুলো কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ দালান তৈরি করছে মানুষ, তাই কাঁচামাল আর আগের মতো সহজেই পাওয়া যায় না। বাজারগুলো দখল করেছে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিলসহ বিভিন্ন দ্রব্য। এ ছাড়া প্লাস্টিক ও অন্যান্য দ্রব্যের পণ্য টেকসই ও স্বল্পমূল্যে পাওয়ায় সাধারণ মানুষের চোখ এখন সেগুলোর ওপর।

জেলার সবচেয়ে বড় বাজার যাদুরানীতে বাঁশের আসবাবপত্র বিক্রি করতে আসা কাকনি রায় বলেন, এখন আমাদের তৈরি বাঁশের জিনিসপত্র তেমন কেউ একটা কেনে না। আমরা কিছুসংখ্যক পরিবার শিল্পটিকে পারিবারিক ঐতিহ্য হিসেবে এই শিল্পকে ধরে আছি। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও পূর্বপুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা। বর্তমানে কাঁচামালের দাম হওয়ায় আমাদের তৈরিকৃত পণ্যেরও দাম বেশি নিতে হয়। প্রতিহাটে যা বিক্রি করি তা দিয়ে সংসার চালানো আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাড়িয়েছে। সরকার যদি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেন তাহলে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন কাটাতে পারবো।

বাশঁবাড়ি গ্রামের নতুন চন্দ্র ভৌমিক জানান, আমি প্রায় ৪০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই শিল্পের চাহিদা। মূল্যবৃদ্ধি, বাঁশের চাষাবাদ কমে যাওয়া আর অন্যদিকে প্লাস্টিক, সিলভার ও মেলামাইন জাতীয় হালকা টেকসই সামগ্রী নাগরিক জীবনে গ্রামীণ হস্তশিল্পের পণ্যকে হটিয়ে দিয়েছে। এখন এ কাজ করে জীবন চালানো কঠিন।

হরিপুরে পরিবেশবাদী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অক্সিজেনের সভাপতি মোজাহেদুর ইসলাম ইমন বলেন, মানুষ যেভাবে আধুনিক শিল্প কারখানা ও বাড়ি ঘর তৈরির জন্য বনায়ন ধ্বংস করছে সেই জায়গা থেকে বাঁশ গাছও আজও বিলুপ্তির পথে। এই গাছ ও এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সবারই সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি।

Read Entire Article