প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া

1 hour ago 5

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ব্যথানাশক ওষুধ তৈরির এক অভিনব পদ্ধতি নিয়ে সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া ইশেরিকিয়া কোলাই বা ই. কোলাইকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন, যাতে এটি প্লাস্টিকজাত এক উপাদান খেয়ে তা হজম করে দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যথানাশক ওষুধ উৎপাদন করতে পারে।

এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ-এর কেমিক্যাল বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক স্টিফেন ওয়ালেস।

তিনি বলেন, ই. কোলাই-কে এই ধরনের পরীক্ষায় প্রথমেই বেছে নেওয়া হয়। কারণ এটি দীর্ঘদিন ধরে বায়োটেকনোলজি গবেষণায় পরীক্ষিত একটি ওয়ার্কহর্স বা প্রধান সহকারী জীবাণু।

অধ্যাপক ওয়ালেস এর আগে একই ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ভ্যানিলা ফ্লেভার এবং পয়ঃনালার চর্বিজমা (ফ্যাটবার্গ) থেকে পারফিউম তৈরি করার সফলতা পান।

ই. কোলাই মূলত মানুষের অন্ত্রে পাওয়া একটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়া। যদিও এর কিছু ধরন মানুষের অসুস্থতার কারণ হতে পারে, কিন্তু অ-প্যাথোজেনিক বা নিরাপদ কিছু স্ট্রেইন দীর্ঘদিন ধরে গবেষণাগারে ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এই ব্যাকটেরিয়াটি শিল্পে জৈবিক কারখানা হিসেবে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, এটি ব্যবহার করে ইনসুলিন তৈরি করা হয়, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যক। এছাড়াও জ্বালানি ও দ্রাবক তৈরির নানা রাসায়নিকও তৈরি করা হয় এটির মাধ্যমে।

১৮৮৫ সালে জার্মান শিশু চিকিৎসক থিওডর ইশেরিখ প্রথম এই ব্যাকটেরিয়াটি আলাদা করেন।

এটি দ্রুত বেড়ে ওঠে, সহজে পরীক্ষাগারে চাষ করা যায় এবং জেনেটিকভাবে সহজে পরিবর্তন করা যায়।

১৯৪০-এর দশকে ই. কোলাই-এর মাধ্যমেই আবিষ্কৃত হয় ব্যাকটেরিয়ার ‘জেনেটিক রিকম্বিনেশন’ বা জেন বিনিময়, যা বিপ্লব ঘটায় জীববিজ্ঞানে।

১৯৭০-এর দশকে এটিই প্রথম জীব যা জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মাধ্যমে পরিবর্তন করা হয়। ১৯৭৮ সালে ই. কোলাই ব্যবহার করে প্রথম কৃত্রিম মানব ইনসুলিন তৈরি হয়।
১৯৯৭ সালে এটিই প্রথম দিকের জীব যার পুরো জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাডাম ফেইস্ট বলেন, অন্যান্য জীবাণুর সঙ্গে কাজ করার পর বুঝি ই. কোলাই কতটা সহজ, টেকসই এবং কার্যকর। এটি নানা ধরনের খাদ্য উপাদানে বেড়ে উঠতে পারে, সহজে জমিয়ে রাখা যায়, আবার জাগিয়েও তোলা যায়।

জিনকো বায়োওয়ার্কস-এর সিনিয়র ডিরেক্টর সিনথিয়া কলিন্স বলেন, বর্তমানে বড় পরিসরে উৎপাদনের জন্য অনেক জীবাণু ব্যবহার করা গেলেও, ই. কোলাই এখনো একটি ভালো বিকল্প, বিশেষ করে যদি উৎপাদিত বস্তুটি এর জন্য উপযোগী হয়।

তিনি যোগ করেন, এই ব্যাকটেরিয়া দিয়ে অনেক কিছু উৎপাদন সম্ভব, এমনকি যদি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়, তাহলেও ইঞ্জিনিয়ারিং করে সেগুলো সহনীয় করা যায়।

এই উদ্ভাবন দেখিয়ে দেয় কীভাবে জীববিজ্ঞানের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণকারী প্লাস্টিককেও ভবিষ্যতে মূল্যবান ওষুধে রূপান্তর করা যেতে পারে। ই. কোলাই সেই রূপান্তরের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।

সূত্র: বিবিসি

এমএসএম

Read Entire Article