ফরিদপুরে দুই মহাসড়কে দিনভর দীর্ঘ যানজট

23 hours ago 1

ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়ন কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করার প্রতিবাদে ভাঙ্গায় দিনব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। এতে ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে কমপক্ষে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগ সকাল থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ওই দুই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে এলাকাবাসী। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত যানজট ৪৫ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়। পরে সন্ধ্যার পর অবরোধ তুলে নেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে ভাঙ্গা থানার পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বিপুলসংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণের কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। জরুরি কিছু যানবাহন ছাড়া সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

হাইওয়ে পুলিশ, আন্দোলনকারী ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনকারীরা ভাঙ্গার বেশ কয়েকটি স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে। তারা টায়ারে আগুন জ্বালান, বাঁশ ও কাঠ ফেলেন, এমনকি ঘুমানোর চৌকি ফেলে মহাসড়ক বন্ধ করে দেন। মহাসড়কের ওপর ফুটবল, ক্রিকেট খেলে সময় কাটান। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বরইতলা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার, পুকুরিয়া থেকে তালমা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার, আর ঢাকার দিকে বগাইল টোলপ্লাজা থেকে এক্সপ্রেসওয়ের পুলিয়া পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা পৌরসভা থেকে জয় বাংলা পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট দেখা যায়। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে যানজট ও যানবাহনের সাড়ি কমপক্ষে ৪৫ কিলোমিটার এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এতে আটকে পড়া যাত্রীরা নিদারুণ দুর্ভোগে পড়েছেন। কেউ কেউ মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে গন্তব্যের রওনা দিয়েছেন।

ঢাকা-খুলনার মহাসড়কের বাসের যাত্রী ব্যবসায়ী আবুল হাসান মোল্লা বলেন, খুব ভোরে রওনা দিয়ে এখনো ভাঙ্গা পার হতে পারিনি। হাত-পা গুটাইয়া গাড়িতে বসে আছি। খাবার-পানি শেষ হয়ে গেছে। এমন ভোগান্তি সহ্য করা যায়না।

গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের রোগী করুনা রানী বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। দপুরে আমার হাসপাতালে ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। ভোরের দিকে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সকাল থেকে ভাঙ্গায় আটকে আছি। গাড়ি নড়েচড়ে না। শরীরটাও খুব খারাপ লাগছে। এখন বাড়িতে রাতের মধ্যে ফিরে যেতে পারব কিনা সেটাই ভাবতেছি।

দূরপাল্লার পরিবহন বাস চালক সেকেন্দার আলী জাগো নিউজকে বলেন, মহাসড়ক জুড়ে দীর্ঘ ৪৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তীব্র গরমে যানবাহনের চালকসহ যাত্রীরা নিদারুণ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। শিশু,বয়স্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ির মধ্যে বসে ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

প্রাইম ব্যাংকের বোয়ালমারী শাখার ম্যানেজার ওয়াহিদ জামান তিতাস জাগো নিউজকে বলেন, স্ত্রী অসুস্থ। ঢাকায় চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরছিলাম পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গার পুকুরিয়া এলাকায় অবরোধে আটকা পড়ি। পরে আন্দোলনকারীদের অনেক অনুরোধ করেও ছাড় পাইনি। বাধ্য হয়ে ফিরে ঢাকা হয়ে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরি পার হয়ে বাড়িতে ফিরছি। তাতে কখন বাড়িতে পৌঁছাতে পারবো ঠিক নেই। এরকম হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) রোকিবুজ্জামান বলেন, এরই মধ্যে দুই ইউনিয়নবাসী ফরিদপুর-বরিশাল, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে সড়ক বন্ধ করে দিয়েছে। এতে হাজার হাজার যাত্রীরা দুর্ভোগের পড়েছে। দীর্ঘ প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি।

ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রোকিবুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে ভাঙ্গার রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধ আজকের মতো তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে প্রচণ্ড যানজটে নাকাল যাত্রীরা। ধাপে ধাপে সব মহাসড়কগুলোতে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে স্বাভাবিক হতে সময় লাগবে। বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা থেকে আবারও সকল মহাসড়ক অবরোধ করা হবে বলে শুনতে পেয়েছি।

এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, দুই ইউনিয়নবাসীর স্মারকলিপি নিয়ে আমরা গত তিন দিন আগে নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো রেজাল্ট পাইনি। তবে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করা ঠিক হবে না।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, আন্দোলনকারীরা একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন, যা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এটা স্থানীয় সমস্যা নয়, জাতীয় সমস্যা। সমাধানও জাতীয় পর্যায়ে খুঁজে বের করতে হবে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে ফরিদপুর-২ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। পরদিন ৫ সেপ্টেম্বর দুই দফায় ওই দুই মহাসড়কের অন্তত সাতটি পয়েন্টে অবরোধ করা হয়।পরে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে সমাধানের জন্য গতকাল সোমবার(৮ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় দিয়ে মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী। এর মধ্যে সমাধান না হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আবার ওই দুটি মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।

এন কে বি নয়ন/এমএন/এএসএম

Read Entire Article