ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা তলিয়ে গেছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা স্বপ্ননগরে এখন হাঁটু পর্যন্ত পানি। এমন জলাবদ্ধতায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন বসবাসরত ২৫০ পরিবার।
গত এক সপ্তাহ যাবত তারা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে বসবাস করছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চরকাতলাসুর গ্রামে ৩৩ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয় স্বপ্ননগর নামে একটি আবাসন এলাকা। এখানে ২৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। ভূমিহীন পরিবারগুলোর ঠাঁই দেওয়া হয় এলাকাটিতে। তবে সরকার ঘোষিত উপহারের এই ঘরগুলো নিচু জায়গায় নির্মাণ করাতে পানিতে সেখানকার বাসিন্দারা পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, যে জায়গায় স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে গত ১৫ বছর পূর্বে মধুমতি নদীর পানি প্রবাহ ছিল। পরবর্তীতে সেখানে চর জেগে উঠেছে। সেই জেগে ওঠা চরের মধ্যেই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২৫০টি ঘর।
দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাওয়ার পাকা সড়কে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত পানি। প্রতিটি গলিতেও পানি প্রায় হাঁটু সমান। বেশির ভাগ ঘরের মেঝেতে ঢুকে পড়েছে পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে রান্নাঘর, টয়লেট। এতে নোংরা পানির দুর্গন্ধে অসহনীয় হয়ে পড়েছে এলাকার পরিবেশ। ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সুপেয় পানির অভাব ও নোংরা-দুর্গন্ধযুক্ত পানির স্পর্শে বাড়ছে ডায়রিয়া, চর্মরোগহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ। একই সঙ্গে দেখা দিয়েছে সাপ ও নানা ধরনের পোকামাকড়ের আনাগোনা। পানিবন্দি হওয়ার কারণে অনেকটাই বেকার হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
স্বপ্ননগরের বাসিন্দা সুফিয়া বেগম বলেন, মধুমতিতে বাড়িঘর, ভিটেমাটি,জমিজমা সব কেড়ে নিয়েছে। পরে সরকার এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই হয়েছে। ঘরের মধ্যে পানি। রান্নাঘর, টয়লেট সব তলিয়ে গেছে। ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারি না।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা মো. সাবু শেখ বলেন, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। নিদারুণ কষ্টের মধ্যে বসবাস করছি। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেনি।
মোসাম্মৎ সেলিনা বেগম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সাপ-পোকামাকড়ের আনাগোনা দেখা দিয়েছে। ভয়ে রাতে ঘুম হয় না। টয়লেটের ময়লার রিং পানিতে তলিয়ে গেছে। খুব অসুবিধা হচ্ছে। দুর্গন্ধে ঘরে থাকা যায় না। এছাড়া রান্নার চুলা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঠিকমতো রান্নাবান্না করতে পারছি না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বিল্লাল মোল্যা বলেন, তারা দিন আনে দিন খায়। সকালে কাজে বের হয়, আর সন্ধ্যায় বাড়ি আসেন। সারাদিন তারা বাইরে থাকেন। কিন্তু এখন তারা ঠিকমতো কাজকর্ম করতে পারছেন না। খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।
জানতে চাইলে গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান সাইফুল ইসলাম বলেন, আশ্রায়ণ প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরৈ করা হয়েছে। সাহায্য সহযোগিতার জন্য তালিকাটি উপজেলা প্রশাসনের নিকট জমা দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল ইকবাল বলেন, স্বপ্ননগর আশ্রয়ণ প্রকল্পে জলাবদ্ধতার বিষয়টি জানতে পেরেছি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়টি খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারিভাবে সহায়তা করার চেষ্টা করা হবে।
এন কে বি নয়ন/এমএন/এএসএম