‘ভূমির আকার পরিবর্তন করা যাবে না’ সরকারের স্পষ্ট এমন আইনি নির্দেশনা থাকলেও ফরিদপুরের পৌর সদরে উর্বর ও ফসলি জমিকে পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। এতে করে জেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ।
দিনরাত বিরতিহীনভাবে পুকুর খনন করে সে মাটি আবার বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় দেখা যায়, পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের মৃগি মৌজায় জমির মালিক হানিফ মোল্লা ব্যবসায়ী শহিদকে (৩৮) দিয়ে নিজ ফসলি জমি কাটছেন। জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া ভেকু দিয়ে মাটি কেটে এলাকার বিভিন্ন ভাটায় মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে বিস্তীর্ণ ফসলি ক্ষেত, কোথাও ধান ও গম আবার কোথাও সরিষা ক্ষেত। এরই মাঝে স্থানীয় জমির মালিক হানিফ মোল্যা কৃষি জমিতে ভূমি আইনের তোয়াক্কা না করেই ভেকু দিয়ে পুকুর খননের কাজ শুরু করেছে। ভেকু দিয়ে উত্তোলন করা মাটি ট্রাকে করে যাচ্ছে আশপাশের ভাটাতে। মাঠের মধ্যের জমি হওয়ায় রাস্তা না থাকায় ব্যবহার করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য ক্ষেতের জমি। এতে করে মাঠের অন্যান্য ক্ষেত মালিকরা তাদের ফসলি জমি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। এর জন্য কৃষি জমি ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ বিষয়ে এলাকাবাসী প্রশাসনকে বার বার অবগত করলেও মিলছে না কোনো সমাধান।
পার্শ্ববর্তী জমির মালিক হাসান খান কালবেলাকে বলেন, আমাদের এলাকাই এই মাঠটিই একমাত্র কৃষি জমি এবং এখানে আমরা ফসল উৎপাদন করি। আমার জমির পাশে এভাবে পুকুর খনন করার ফলে পরে পুকুরের পাড় ধসে যে কোনো সময় আমার ক্ষেত নষ্ট হতে পারে। ভূমিখেকো হানিফ মোল্যাকে বারবার অবগত করলেও কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করেন না।
পার্শ্ববর্তী জমির আরেক মালিক ফরহাদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, হানিফ মোল্লা ফসলি জমির মাটির রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে আমাদের এলাকার ফসলি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অথচ এই কৃষি জমি থেকে আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। এ বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করা হয়েছে, তবে অদৃশ্য শক্তি বলে তিনি তার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এর সঠিক প্রতিকার চাই।
অভিযুক্ত জমির মালিক হানিফ মোল্লা কালবেলাকে বলেন, আমার পুরোনো পুকুর সংস্কারের জন্য ডিসি অফিস বরাবর একটি লিখিত আবেদন দিয়েছি। তবে এখনো কোনো অনুমতি পাইনি। আশা করছি অনুমতি পেয়ে যাব।
অনুমতি ছাড়া মাটি কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো ইটভাটায় মাটি দিচ্ছি না। বরং বিভিন্ন স্থান ভরাটের কাজে আমার কাছ থেকে অনেকেই মাটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
ফসলি জমির মাটি উত্তোলনের বিষয়ে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াসির কবির বলেন, মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। স্থানীয় ইউএনওকে অবগত করা হবে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।