ফারুক হাসানের ওপর হামলাকারীদের জামিনের নিন্দা জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। সিনিয়র সহ-সভাপতির ওপর হামলা করা ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও প্রোপাগান্ডার প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি। এতে ফারুক হাসান সেদিনের হামলার বর্ণনা দেন এবং দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) দুপুর আড়াইটায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান হামলাকারীদের পরিচয় ও হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আমাদের স্পষ্ট কথা, দোষীদের ছাড় দেওয়া চলবেনা। গণঅভ্যুত্থানে দুই শ্রেণীর মানুষ আহত হয়েছে। আন্দোলনের পক্ষে এবং আন্দোলন প্রতিরোধ করতে গিয়ে।
গণঅভ্যুত্থানের বিরুদ্ধের শক্তি এখন আহতলীগে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরা কখনো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে জিম্মি করছে, কখনো আহতলীগের মধ্য থেকে উপদেষ্টা দাবি করছে, কখনো সড়ক অবরোধ করছে। প্রকৃত আহতরা হাসপাতালের বিছানায়। আর অপরাধীরা বিভিন্ন জায়গায় কুকর্ম করছে।
যারা ফারুক হাসানের ওপর হামলা করেছে তাদেরকে হাসিনার প্রেতাত্মা বলে উল্লেখ করেছেন রাশেদ খান। তিনি বলেন, এদের কোনো ছাড় নেই, ক্ষমা নেই। যদি এরা জামিন পায়, তবে ধরে নিব, এটা কোনো ছোটখাটো বিষয় না।
বড় উদ্দেশ্য নিয়েই ফারুক হাসানের ওপর হামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, ওবায়দুল কাদেরের পালিয়ে যাওয়া, শেখ পরিবারের সদস্যদেরকে আটক করা কিংবা শহিদ পরিবারের ক্ষতিপূরণ ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসার ব্যাপারে কথা বললেই আজকাল মার খেতে হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে হতেই শোনা যায়, অপরাধীরা গ্রেফতারের ১১ ঘণ্টার মাথায় জামিন পেয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাশেদ খান বলেন, ফারুকের ওপর হামলার মামলায় গ্রেফতার আসামিরা জামিন পেয়েছে। অথচ ফারুক এখনো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। ৩৭৯, ৩২৬, ৩০৭- জামিন অযোগ্য এসব ধারায় মামলা হলেও বিচার বিভাগের ওপর প্রভাব খাটিয়েই জামিন নিয়েছে তারা। এখন প্রমাণিত হলো হামলায় রাঘববোয়ালদের সংশ্লিষ্টতা ও ইন্ধন ছিল। বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে, এই রাষ্ট্রের পরিবর্তন এই সরকার করবে, এটা আমি আর বিশ্বাস করি না। রাষ্ট্র সংস্কারের নামে ক্ষমতার চেয়ারের স্বাদ নেওয়ার সময়সীমা এরা দীর্ঘায়িত করবে। এর বাইরে আর কোনো কিছু করতে পারবে না।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমার ওপরে যারা শহীদ মিনারে হামলা চালিয়েছে তারা কেউই আহত নন কিংবা শিক্ষার্থী নন। তারা পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাসী। সরকার এই সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতেও গড়িমসি করেছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে যে, এই হামলাকারীদের সঙ্গে তাদের ভালো একটা কানেকশন আছে। তারা আমার কাছে লোক পাঠিয়েছিল আপস করার জন্য। কিন্তু আমি জানিয়েছি ভুলের ক্ষমা হয়, অপরাধের কোনো ক্ষমা হয় না। কিন্তু আমি হাসপাতালে বিছানায় কাতরাচ্ছি, এই অবস্থায় তারা জামিন পেয়ে গেল? এই কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা? এই রাষ্ট্রের আদৌ সংস্কার হবে?
গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন বলেন, ফারুক হাসানের ওপর হামলা এবং হামলাকারীদের জামিনের মধ্যে দিয়ে এটাই প্রমাণিত হয় বিচার বিভাগ এখনো স্বাধীন হয়নি। প্রকাশ্য দিবালোকে শহীদ মিনারে ফারুক হাসানের ওপর হামলা হয়েছে। সেই হামলার ভিডিও থাকার পরেও আসামিদের জামিন দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থা ছিল আওয়ামী লীগ শাসনামলে। তাহলে আর কিসের সংস্কার হলো জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে?
তিনি বলেন, আমাদের রক্তের মধ্যে দিয়ে আজকের এই জুলাই-আগষ্টের বিপ্লব হয়েছে। আর আজ আমাদের ফারুক হাসানের ওপর হামলা! এটা কোনোভাবেই গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা মেনে নিবে না।
সংবাদ সম্মেলনের সময় গণঅভ্যুত্থানে আহত নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এএমএ/জিকেএস