জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী সময়ে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও (বিসিবি)। নতুন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ফারুক আহমেদ বলেছিলেন, বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধন করাও তাদের অন্যতম একটি কাজ।
বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য এরই মধ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটির চেয়ারম্যান পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর বিসিবির পরিচালক হয়ে আসা নাজমুল আবেদিন ফাহিম। বাকি চার সদস্যের কেউই ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট নন।
পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠনতন্ত্র সংশোধনের একটি খসড়া প্রস্তাব বিসিবি সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন। এখনও এই খসড়াটি পর্যালোচনার জন্য বিসিবির কার্যনির্বাহী কমিটিতে উত্থাপন করা হয়নি। উত্থাপন হওয়ার পর কার্যনির্বাহী কমিটি পর্যালোনার পর খসড়া অনুমোদন দেবে এবং সেটা চূড়ান্তভাবে পাশ হবে বিসিবির এজিএমে।
তবে গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাবে যে বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে তা নিয়ে একজোট হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকরা। তাদের দাবি সংশোধনী প্রস্তাবগুলো বাতিল করতে হবে। বিসিবি পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে নাজমুল আবেদিন ফাহিমকে। অন্যথায় তারা প্রিমিয়ার লিগ এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশ না নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন।
আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে হোটেল পূর্বানীতে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে সিসিডিএমভূক্ত ঢাকার ৭৬টি ক্লাব ক্রিকেটের কর্মকর্তারা। সেখান থেকেই বিসিবি পরিচালক থেকে নাজমুল আবেদিন ফাহিমের পদত্যাগের দাবি তোলা হলো।
খসড়া সংশোধনীতে বিসিবির সাধারণ পরিষদে ক্যাটাগরি-২ এ সিসিডিএমভূক্ত ৭৬ ক্লাব থেকে কাউন্সিলর (৭৬জন) কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিসিবির কার্যনির্বাহী কমিটিতে ৭৬ ক্লাব প্রতিনিধি বা কাউন্সিলের মধ্য থেকে এখন যে ১২জন পরিচালক নির্বাচিত হন, সেই সংখ্যাটা ১২ থেকে ৪-এ নামিয়ে আনার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সিসিডিএমকে বিলুপ্ত করারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে সংশোধনীতে।
ক্রিকেট সংগঠকরা মনে করছেন, বিষয়টি ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে মর্যাদা ও ঐতিহ্যের প্রতি চরম অবমাননা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আজ বিকেলে হোটেল পূর্বানীতে ঢাকার ক্লাবগুলো যে মতবিনিময় সভা আয়োজন করে, সেখানে বক্তারা গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী বাতিলের দাবি তোলা হয়েছে। খুব শিগগিরই বোর্ড সভাপতির সাথে বসে তারা এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক দাবি জানাবে।
মত বিনিময় সভায় ক্লাব কর্মকর্তারা হুমকি দিয়ে জানিয়ে দেন, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী বাতিল করা না হলে তারা প্রিমিয়ার লিগ এবং প্রথম বিভাগ লিগে অংশগ্রহণ করবে না।
ক্রিকেট কর্মকর্তাদের একটাই কথা, ঢাকার ক্লাব বাঁচলে দেশের ক্রিকেটাররা বাঁচবে না, ক্রিকেটাররা না বাঁচলে দেশের ক্রিকেটও বাঁচবে না। ক্লাব ক্রিকেটে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ক্লাবগুলো। এই বিনিয়োগ না হলে ক্রিকেটাররা বাঁচবে না। তাদের কথা, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটিতে ক্রিকেটের কেউ নেই। অথচ আমরা দেশের ক্রিকেটের মেইন স্টেকহোল্ডার। সেখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব আরও বাড়ানো দরকার; উল্টো তিনি (ফাহিম) কমিয়ে দিয়েছেন। আমরা এটা মানি না। এই খসড়া প্রস্তাব বাতিল করতে হবে এবং বোর্ড থেকে তাকে (নাজমুল আবেদিন ফাহিম) অপসারণ করতে হবে। না হয় আমরা প্রিমিয়ার ক্রিকেট ও প্রথাম বিভাগ লিগে অংশ নেবো না।’
উল্টো মতবিনিময় সভা থেকে দাবি তোলা হয়েছে, বর্তমানে ক্লাব ক্রিকেট থেকে বিসিবি পরিচালনা পর্ষদে যে ১২জন পরিচালক রয়েছে, সেখান থেকে বাড়িয়ে সংখ্যাটা ১৫-তে উন্নীত করার।
মত বিনিমিয় সভার সভাপতিত্ব করেন বিসিবির সাবেক যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বাবু। সঞ্চালনা করেন সিসিডিএমের সাবেক কর্মকর্তা ও উত্তরা ক্লাবের সেক্রেটারি সৈয়দ বোরহান হোসেন পাপ্পু। লিজেন্ড অব রুপগঞ্জের সত্তাধিকারী লৎফুর রহমান বাদল, মোহামেডানের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার ও আবাহনীর সাবেক কর্মকর্তা জিএস হাসান তামিম, লালমাটিয়া ক্রিকেট ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আদনান রহমান দিপন এবং সাবেক বিসিবি পরিচালক ও বাংলাদেশ বিমান ক্রিকটে দলের শীর্ষ কর্মকর্তা আলী আহসান বাবুসহ ঢাকার ক্লাব ক্রিকেরে নিবেদিতপ্রাণ কর্মকর্তারা।
এআরবি/আইএইচএস