গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মাসুদ ভূঁইয়া পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করেছেন ফিলিপাইনের ‘ব্ল্যাক সুগার কেইন’ জাতের আখ। একেবারে প্রথমবারেই দেড় বিঘা জমিতে চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। পেয়েছেন আশানুরূপ ফলন। খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। আখ বিক্রির আশা করছেন ৪-৫ লাখ টাকা।
ফিলিপাইনের এ জাতের আখ চিনি বা গুড় তৈরির জন্য নয় বরং এটি খাওয়ার উপযোগী। দেখতে কালো-খয়েরি হলেও খেতে বেশ মিষ্টি ও রসালো। দেশীয় আখের তুলনায় এটি অনেক নরম হওয়ায় সরাসরি চিবিয়ে খাওয়ার জন্য খুব জনপ্রিয়। মাসুদ জানান, একবার বীজ রোপণ করলে তিন-চার বছর ধরে ফলন পাওয়া যায়।
তিনি বলেন, ‘আমি ইউটিউবে দেখে আগ্রহী হই। পরে টাঙ্গাইল থেকে কাটিং সংগ্রহ করে নিজ জমিতে লাগাই। স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে নিয়মিত সহযোগিতা পেয়েছি। প্রথম বছর সবকিছু নতুন হওয়ায় খরচ বেশি হয়েছে। তবে আগামী বছর থেকে খরচ কমবে, লাভ বাড়বে।’
রামচন্দ্রপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব কৃষক নেহার উদ্দিন শেখ বলেন, ‘প্রথমে সন্দেহ ছিল এই আখ টিকবে কি না। কিন্তু এখন দেখি আখ বেশ লম্বা, খেতেও ভালো। এলাকার ছোট-বড় সবাই কিনছেন। এমনকি পাইকাররাও বাগান কিনে নিতে চাচ্ছেন।’
ত্রিশোর্ধ্ব কৃষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘মাসুদের আখ চাষ দেখে উৎসাহ পেয়েছি। আমি নিজেও তার কাছ থেকে কাটিং নিয়ে চাষ শুরু করেছি।’ একই কথা জানালেন ওই গ্রামের সুমন পালোয়ান।
আরও পড়ুন
ফরিদপুরে কালো আখ চাষে মফিজুরের বাজিমাৎ
আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন শরীয়তপুরের চাষিরা
মাসুদের এ উদ্যোগ এখন আশপাশের অনেক কৃষককে আগ্রহী করে তুলেছে। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর কালীগঞ্জে প্রায় ১ হেক্টর জমিতে এ আখ চাষ হয়েছে।
মোক্তারপুর ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজিজুর রহমান রুবেল বলেন, ‘মাসুদ কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছেন। তার সফলতা দেখে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’
উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এ জাতের আখ নরম ও মিষ্টি হওয়ায় কিছু পোকামাকড়ের সমস্যা হয়, বিশেষ করে মাজরা পোকার। আমরা নিয়মিত তদারকি করছি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছি।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘ফিলিপাইনের এ আখ চাষ করে মাসুদ লাভবান হয়েছেন। এতে খরচ কম, লাভ বেশি। নতুন উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করবে। কৃষি অফিস থেকে তাকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।’
আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/জেআইএম