ফুয়াদের জন্য আসন ছাড়লে কপাল পুড়বে সেলিমা-জয়নুলের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ ও মুলাদী) আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি। এতে রাজনীতির মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। কে হবেন এই আসনের প্রার্থী তা নিয়ে জেলায় চলছে তুমুল আলোচনা। গুঞ্জন রয়েছে, আসনটি আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে সক্রিয় আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান এবং দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেলিমা রহমান এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তখন জয়নুল আবেদীন হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুজনই পরাজিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছে। এবারও সেলিমা ও জয়নুল মনোনয়ন চান এই আসনে। বরিশাল-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘এ বিষয়ে আসলে আমার বলার তেমন কিছু নেই। দল যাকে চূড়ান্ত করবে, আমরা তাকেই মেনে নেবো। হয়তো তা

ফুয়াদের জন্য আসন ছাড়লে কপাল পুড়বে সেলিমা-জয়নুলের

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ ও মুলাদী) আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি দলটি। এতে রাজনীতির মাঠে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে। কে হবেন এই আসনের প্রার্থী তা নিয়ে জেলায় চলছে তুমুল আলোচনা।

গুঞ্জন রয়েছে, আসনটি আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদকে ছেড়ে দিতে পারে বিএনপি। এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পেতে সক্রিয় আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সেলিমা রহমান এবং দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেলিমা রহমান এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। তখন জয়নুল আবেদীন হয়েছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুজনই পরাজিত হন জাতীয় পার্টির প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপুর কাছে। এবারও সেলিমা ও জয়নুল মনোনয়ন চান এই আসনে।

বরিশাল-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘এ বিষয়ে আসলে আমার বলার তেমন কিছু নেই। দল যাকে চূড়ান্ত করবে, আমরা তাকেই মেনে নেবো। হয়তো তারা চিন্তাভাবনা করছেন। আমরা যেহেতু দুজনই সিনিয়র, তাই একটু সময় নিচ্ছে।’

মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। তাই সব সময়ই আমরা আশাবাদী। আশাবাদী না হলে রাজনীতির মধ্য দিয়ে দেশ ও মানুষের কল্যাণ করা যায় না।’

মনোনয়ন প্রশ্নে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘মনোনয়ন যে কেউ চাইতেই পারেন। যদি কেউ দল করেন, তাকে দলের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। সেই থেকে এই এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করেছি। দল মনোনয়ন দিলে সাধারণ মানুষ তাদের ভোটের মাধ্যমে আমার কাজের মূল্যায়ন করবে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি হয়তো কৌশলগত কারণেই এ আসনটি খালি রেখেছে। এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ জোট বা সমঝোতার অংশ হিসেবে দলটি এ আসন ছেড়ে দিতে পারে।

নির্বাচনি এলাকা ঘুরে জানা গেছে, ব্যারিস্টার ফুয়াদের দলীয় নেতাকর্মীরা সক্রিয়তাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সব মিলিয়ে বরিশাল-৩ আসনটি এখন জেলার সবচেয়ে আলোচিত নির্বাচনি আসনে পরিণত হয়েছে।

ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হওয়া ছাড়াই শত শত কোটি টাকার কাজ এই এলাকার জন্য এনেছি। এলাকার উন্নয়নে রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, টিউবওয়েল বসানোর জন্য শত শত কোটি টাকার কাজ করছি। আমার বিশ্বাস, এই এলাকার মানুষ এগুলা সম্মান করবে, মূল্যায়ন করবে।’

বরিশাল-৩ আসনটি বিএনপি ও জাতীয় পার্টির আসন হিসেবেই দেখা যায়। কারণ এ আসনে দুই দলের প্রার্থীরা চারবার করে বিজয়ী হয়েছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুবার ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী একবার নির্বাচিত হয়েছেন।

এ আসনে অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবরকে প্রার্থী ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামী। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য।

অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাম্মদ বাবর জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে আমি আশাবাদী। জয়ী হলে অবশ্যই জনগণের লাভের কথা ভেবে বাবুগঞ্জ-মুলাদীতে উন্নয়ন করবো।’

এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (বরিশাল বিভাগ) উপাধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম। ২০১৮ সালেও তাকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

মাওলানা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দল মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, নির্বাচনি পরিবেশ বজায় থাকে, তাহলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।’

সুযোগ থাকলে এ আসনে প্রার্থী দিতে পারে জাতীয় পার্টি। এক্ষেত্রে ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারটি নির্বাচনের তিনবারের সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু আবারও প্রার্থী হতে পারেন। যদিও তিনি প্রার্থী হলে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন না দুই উপজেলার স্থানীয় বিএনপির নেতারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বরিশাল-৩ আসনে ইতিহাস বারবার একটিই বার্তা দিয়েছে ‌‌‘বিভাজন মানেই পরাজয়’। এবারও যদি বিএনপি অতীতের সেই শিক্ষা কাজে না লাগাতে পারে, তাহলে ২০০৮ সালের ইতিহাস আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে।

ভোটাররা বলছেন, দল নয় যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন তারা। বাবুগঞ্জ এলাকার ভোটার শাহজাহান খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘যিনি আমাদের জন্য কাজ করবেন, আমাদের পাশে থাকবেন তাকেই ভোট দেবো।’

বরিশাল-৩ আসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মোতাহার উদ্দিন ও ১৯৭৯ সালে এম এম নজরুল ইসলাম জয়ী হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হন জাতীয় পার্টির মো. আব্দুল বারেক। এরপর ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনে বিএনপি থেকে জয়ী হন মোশাররফ হোসেন মংগু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সেলিমা রহমান ও জয়নুল আবেদীনকে হারিয়ে জয়ী হন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির টিপু সুলতানের কাছে হেরে যান গোলাম কিবরিয়া টিপু। পরের দুটি নির্বাচনে আবার এমপি নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু।

এ আসনে ভোটার সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার ৯২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৪৬ জন, নারী ভোটার এক লাখ ৫৩ হাজার ২৪৫ জন, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার একজন।

এসআর/এমএমএআর/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow