দেশের শেয়ারবাজারে ফের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজারে একটু ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দেখা মিললেও পরক্ষণেই আবার দরপতন হচ্ছে। ফলে বড় লোকসানের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবস বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর)- প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। ফলে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। ফলে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক কমেছে। অবশ্য ডিএসই’র মতো এ বাজারটিতেও বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
এর আগে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। তবে বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের কিছুটা ঊত্থান হয়। অবশ্য চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিব রোববার আবারও শেয়ারবাজারে ঢালাও দরপতন হয়। সোমবার দাম কমার তালিকায় বেশি প্রতিষ্ঠান থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়ায় মূল্যসূচক কিছুটা বাড়ে। তবে মঙ্গলবার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশি প্রতিষ্ঠান। অবশ্য এক মাস পর বাজারটিতে লেনদেন ছয়শ কোটি টাকার ঘরে নেমে আসে।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলে। কিন্তু লেনদেনের শেষদিকে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমে যায়। ফলে দাম কমার তালিকা বড় হওয়ার পাশাপাশি, সবকটি মূল্যসূচক কমেই দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১২৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৯টির। আর ৮৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১০৩টির দাম কমেছে এবং ৪৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ২৯টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ৪৪টির দাম কমেছে এবং ৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪২টির এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৬টির দাম কমেছে এবং ২২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৯২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৭ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১২৭ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৯১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
মূল্যসূচক কমলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৩৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৬৭৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
এ লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের শেয়ার। কোম্পানিটির ৪১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সি পার্ল বিচ রিসোর্টের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার। ২৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সামিট এলায়েন্স পোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- টেকনো ড্রাগস, সোনালি পেপার, এনভয় টেক্সটাইল, ওরিয়ন ইনফিউশন, লাভেলো আইসক্রিম, রবি এবং প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৮ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৬ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৯টির এবং ৩৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
এমএএস/এমএএইচ/জেআইএম