স্বপ্নে দেখলেন তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছে। ঘুম ভাঙার পরপরই তিনি গভীর নিঃশ্বাস ফেলেন। এরপর হাতের কাছে থাকা ফোন থেকে কল দিলেন তার মাকে, যাকে তিনি তার জন্মদাত্রী মা বলেই জানতেন। কিন্তু তমুনা নামের এই নারী সাংবাদিক তখনও জানতেন না, রূপকথার মতো কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে তার জীবনে।
জর্জিয়ার নারী তমুনা মুসেরিদজে। ছোটবেলা থেকেই তার সন্দেহ ছিল তিনি দত্তক কন্যা। আর এই সন্দেহ থেকেই ২০১৬ সালে নিজের প্রকৃত বাবা-মার সন্ধান শুরু করেন তিনি। মাকে ফোন দিয়ে তিনি তার দত্তক নেওয়ার বিষয়ে জানতে চান। তার বাবার নাম-পরিচয়ও জানতে চান, যা কেবল তাকে দত্তক নেওয়া মা-ই জানাতে পারেন। কিন্তু তাতে মেলেনি কোনো সদুত্তর।
সেই মায়ের মৃত্যুর পর, ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে নিজের নামে একটি জন্মনিবন্ধনপত্র খুঁজে পান তমুনা। যাতে জন্ম তারিখ ভুল লেখা ছিল। এতে তমুনার মনে সন্দেহ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নিশ্চিত হন, আসলেই তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। এরপর নিজের জন্মদাতা বাবা-মাকে খুঁজে বের করতে ফেসবুকে একটি অনুসন্ধান গ্রুপ খোলেন তমুনা।
পেশায় সাংবাদিক এই নারী পরবর্তীতে অনুসন্ধান শুরু করেন, যেখানে তিনি জর্জিয়ার একটি শিশু পাচার কেলেঙ্কারি উন্মোচন করেছিলেন। সেখানে তিনি দেখতে পান, অনেক বছর ধরেই বাবা-মার কাছে মিথ্যা বলে নবজাতকদের বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। বাবা-মাকে বলা হতো, তাদের নবজাতক মারা গেছে। তমুনা নিজেও ভাবতেন, ছোটবেলায় হয়তো তিনিও চুরি হয়ে গিয়েছিলেন প্রসূতি মায়ের কোল থেকে।
তমুনার অনুসন্ধানে কিছুটা অগ্রগতি হয় গত গ্রীষ্মকালে। হঠাৎ তিনি তার ফেসবুক গ্রুপে একটি ক্ষুদেবার্তা পান জর্জিয়ার এক বাসিন্দার কাছ থেকে। তিনি জানান, তারা এমন একজন নারীকে চিনতেন, যিনি তার গর্ভাবস্থার কথা লুকিয়ে ১৯৮৪ সালের সেপ্টেম্বরে সন্তানের জন্ম দেন। আশ্চর্যজনকভাবে তিনি যে তারিখটির কথা বলেছিলেন, সেটি তমুনার জন্মতারিখের সঙ্গে মিলে যায়। তখন তার বিশ্বাস জন্মে যে, হয়তো ওই নারীই তমুনার আসল মা।
তমুনা সঙ্গে সঙ্গেই সেই নারীর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি জানান, পেটে সন্তান আসার কথা গোপন করেছিলেন, এমন একজন নারীকে তিনি চেনেন, যিনি সম্পর্কে তার চাচি। তমুনা ফেসবুকে দেখতে পান, যে নারীটি তাকে মেসেজ করেছিলেন, এমনকি তার পরিবারের বেশ কিছু সদস্য তার ফেসবুকে রয়েছেন। তারা আসলে তমুনার রক্তের সম্পর্কের।
তমুনা আর দেরি না করে আসল মাকে ফোন করেন। কিন্তু ওই নারী সবকিছু অস্বীকার করে বসেন। এতে ঘাবড়ে না গিয়ে ডিএনএ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেন তমুনা। যে মেয়ে তাকে ফোন দিয়ে খবরটি দিয়েছিল, তার কাছ থেকেই সংগ্রহ করা হয় টেস্টের নমুনা। ডিএনএ টেস্টের ফলাফলে দেখা যায়, ওই মেয়েটি আসলে তারই চাচাতো বোন।
এই প্রমাণ দিয়েই পরবর্তীতে মাকে সত্য বলতে বাধ্য করেন তমুনা। তার কাছ থেকে জন্মদাতা বাবার নাম জানতেও সক্ষম হন তিনি। জানা যায়, তার বাবার নাম গুরগেন খোরাভা নামের এক ব্যক্তি। ছিল না প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক। তাই সেই শারীরিক সম্পর্ক অনেকটা দুর্ঘটনার মতো। পরে তমুনা তার জন্মদাতা বাবা ও অন্যান্য পরিজনের সাথেও দেখা করেন। সেই ভিডিও ও ছবি দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।