শুভ্র নীল আকাশে সাদা বক উড়ে বেড়ালে প্রকৃতি পায় এক ভিন্ন মাত্রা। তাই হয়তো একজীবনে সাদা বক হয়ে উড়ে বেড়ানোর ইচ্ছের কথা শোনা যায় প্রকৃতিপ্রেমী আর কবি-সাহিত্যিকের সাহিত্য কর্মে। তবে এবার ডানা ছড়িয়ে নীল আকাশে সাদা বকের উড়াউড়ি নয়। ওই নীল আকাশের একটি সাদা বক পাখি বাধা পড়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের নুরাইনপুর বন্দরের স্টেশনারি ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিনের যত্ন-আত্মী আর ভালোবাসায়। অসুস্থ হলে চলে চিকিৎসা, কোনোক্রমে বকের নাক দিয়ে পানি পড়লে খাওয়ানো হয় নাপা।
স্থানীয়রা জানায়, পটুয়াখালীর বাউফলের আলগী নদীর কুল ঘেসা নুরাইনপুর বন্দর। বন্দরের স্টেশনারি ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিনের দোকানে সামনে মানুষের কোলাহল আর ভিড় উপেক্ষা করেও নিশ্চিন্তে দাঁড়িয়ে থাকে লম্বা গলার এক সাদা বক। কখনো বসে হেমায়েত উদ্দিনের পাশে চেয়ারের হাতলে। লম্বা গলা ঘুরিয়ে তাকায় তীক্ষ্ণ-মায়াবি দৃষ্টিতে। কখনো আবার দোকানের সামনে রাখা মগবাটি থেকে লম্বা ঠোটে তুলে খায় পছন্দের ছোটমাছ।

তারা জানান, দোকানের কোনো কিছুতে আসক্তি নেই পাখিটির। নষ্ট করে না কিছুই। নিয়মিত পছন্দের ছোট মাছ খেতে দেন তিনি। রাতেও থাকে দোকানের কোণে। দোকানের সামনে রাখা মগ, বাটি কিংবা নিজের হাতেও পাখিটিকে খাইয়ে দেন তিনি। ক্ষুধা পেলে ঠোঁটে জামা ধরে খুনসুটি করে। ধবধবে সাদা পালকে আদর করে হালকা লাল রঙ লাগিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ী হেমায়েত। বন্দরের ব্যাবসায়ীদের অনেকের চেনা জানা থাকলেও হঠাৎ দেখায় দূর-দূরান্তের ক্রেতা সাধারণের কাছে এটি যেন এক অবাক করা দৃশ্য।
ব্যবসায়ী হেমায়েত উদ্দিন (৩৮) জানায়, বন্দরের মসজিদ লাগোয়া ছোট্ট দোকানটিতে বছর চারেক ধরে স্টেশনারি ব্যাবসা করছেন তিনি। বকের বাড়ি হিসেবে পরিচিত পাশের মজিদ মৌলভি বাড়ির বশির মাওলানার বাগানের শতবর্ষী পুরোনো গাছে প্রায় ৪০ বছর ধরে শত শত ময়ুরপঙ্খি, রাঘঘা ও কুনি বকসহ ছয় প্রজাতির বক পাখির অভয়াশ্রম। চার-পাঁচ বছর ধরে এদের সঙ্গে অসংখ্য পানকৌড়ি পাখিও থাকতে শুরু করেছে। বাসা বেঁধে বাচ্চা দিচ্ছে।
তিনি জানান, হঠাৎ একদিন ঝড়ো বাতাসের শেষে বাড়ির পুকুরে পানি তুলতে গিয়ে গুইসাপে পাখনা ধরে একটি বকের ছানা টেনে নিয়ে যেতে দেখেন। পরে উদ্ধার করে শুশ্রুষা আর খাবার দিয়ে সুস্থ করে তোলেন ছানাটি। সেই থেকেই সখ্যতা তার ওই বক পাখিটির সঙ্গে। অদূরে কোথাও উড়ে গেলেও পাখিটি ভালোবাসার বন্ধনে ফিরে আসে আবার।
হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘আমি গুইসাপের আহার থেকে উদ্ধার করি বক পাখিটি। মাছ ধরে ধরে মুখে খাইয়ে দেই। সামন্য দূরে গেলেও আবার চলে আসে। আমি কোথাও গেলে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ক্ষুধা লাগলে পাঞ্জাবি, টুপি, দাঁড়ি ধরে টানাটানি করে। কোনোক্রমে নাকে পানি পড়লে নাপা খাওয়ায়ে দেই। ঠিক হয়ে যায়। পরিষ্কারের জন্য টিসু রাখি। আকাশে উড়িয়ে দিতে আমার কোনোই সমস্যা নেই, তবে সে (বক) নিজেই আবার ফিরে আসে।’
পরিবেশ ও প্রকৃতিবিষয়ক আন্দোলন সেভ দ্য বার্ড অ্যান্ড বি’র পরিচালক মালয়েশিয়া প্রবাসী মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘আকাশে পাখি উড়লে প্রকৃতি পায় এক ভিন্ন মাত্রা। যত্ন-আত্মী আর ভালোবাসায় বন্য প্রাণীদেরও বশে নেওয়া যায়। খাবারের লোভ আর ভালোবাসায় তারাও আটকায়। তবে বন্যরা বনেই সুন্দর। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা পায়। হেমায়েত ভাইয়ের উচিত বক পাখিটি আকাশে উড়িয়ে দেওয়া।’
এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. বদিউজ্জামান খান সোহাগ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি। বন্যপ্রাণী রক্ষা আইনে বক পাখিটি এখানে রাখার কোনো সুযোগ নেই। আমরা এটি উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও তাকে উড়িয়ে দিতে ব্যার্থ হয়ে পুনরায় ওই ব্যবসায়ীর দোকানের পাশের বকের বাড়ি হিসেবে পরিচিত মৌলভি বাড়ির বাগানে নিয়ে উড়িয়ে দেই। তবে মনে হচ্ছে পাখিটি আবারও হেমায়েতের কাছে ফিরে আসবে।’

2 hours ago
5









English (US) ·