বগুড়া হবে পূর্ণাঙ্গ রপ্তানি হাব

2 months ago 6

এক সময় ধান চালের মোকাম হিসেবে পরিচিত ছিল বগুড়া। কিন্তু সময় বদলেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে এখন রপ্তানির এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র সেই বগুড়া। আলু, ভুট্টা, রাইস ব্র্যান অয়েল, ডিজিটাল স্কেল, জালি টুপি, রাজকীয় পোশাক, হস্তশিল্প ও সবজির বীজ থেকে শুরু করে নানা পণ্য যাচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। এসব রপ্তানির পেছনে কী কাজ করছে? কীভাবে বদলে গেল এক সময়ের কৃষিনির্ভর এ জেলা। এসব প্রশ্ন নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলামের সঙ্গে।

জাগো নিউজ: এক সময়ের ধান চালের মোকাম বগুড়া কীভাবে রপ্তানির কেন্দ্রে পরিণত হলো?

সাইরুল ইসলাম: আমরা এখন শুধু দেশের বাজারে সীমাবদ্ধ নই। বগুড়া থেকে উৎপাদিত বহু পণ্য বিশ্বের নানা প্রান্তে যাচ্ছে। এতে যেমন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও বগুড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

জাগো নিউজ: বগুড়ার কোন পণ্যগুলো সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে এবং কোন কোন দেশে যাচ্ছে?

সাইরুল ইসলাম: ইউরোপের অন্তত ১৮ দেশ যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, জাপান, চীন, রাশিয়া, কাতার, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত রয়েছে। এসব দেশে বগুড়ার পণ্য নিয়মিত যাচ্ছে। এছাড়া কৃষিপণ্য যেমন আলু, ভুট্টা, মরিচ, দেশি শিং ও পাবদা মাছ, ফুলকপি, বাঁধাকপির বিপুল চাহিদাও রয়েছে দেশের বাইরে। পাশাপাশি বীজের মধ্যে করলা, পুঁইশাক, পালং, টমেটো ও শসার বীজ যাচ্ছে। আর প্রক্রিয়াজাত পণ্যের মধ্যে রাইস ব্র্যান অয়েল রয়েছে রপ্তানির শীর্ষে।

বগুড়াকে পূর্ণাঙ্গ রপ্তানি হাবে রূপান্তর করা হবে

জাগো নিউজ: প্রযুক্তিপণ্যও কি বগুড়া থেকে রপ্তানি হয়?

সাইরুল ইসলাম: অবশ্যই। ডিজিটাল স্কেল, ট্রান্সফরমার, সেচ পাম্প, ধান মাড়াই যন্ত্র, টিউবওয়েল—এসব প্রযুক্তিপণ্যও রপ্তানি হচ্ছে। পাশাপাশি হস্তশিল্প ও পোশাক পণ্যের মধ্যে জালি টুপি, রাজকীয় পোশাক, হুডি, সোয়াট শার্ট, নকশিকাঁথা এবং এমনকি পরচুলাও (রিম) বিদেশ যাচ্ছে।

জাগো নিউজ: রপ্তানির আর্থিক চিত্র কী বলছে?

সাইরুল ইসলাম : ২০১৭ সালে পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছিল এক কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালে আয় ছিল পাঁচ কোটি ৮৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৮৮ মার্কিন ডলার। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছিল সাত কোটি ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৩২ মার্কিন ডলার। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালে পণ্য রপ্তানি কিছুটা ভাটা পড়ে। ফলে রপ্তানি আয় দাঁড়ায় পাঁচ কোটি ২৬ লাখ ২১ হাজার ৯৪ মার্কিন ডলারে। পরে ২০২১ সালে পাঁচ কোটি ৭৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩১২ মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে পাঁচ কোটি ৭২ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৯ মার্কিন ডলার, ২০২৩ সালে তিন কোটি ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮৫ মার্কিন ডলার এবং ২০২৪ সালের পণ্য রপ্তানিতে আয় হয় প্রায় চার কোটি মার্কিন ডলারের পন্য রপ্তানি হয়েছে। এছাড়া ২০২৫ এর ছয় মাসে ইতোমধ্যে দুই কোটি মার্কিন ডলার আয় ছাড়িয়েছে। দেশে ডলার সংকটসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গেল দুই বছরে রপ্তানি বাণিজ্যে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দিলেও এখন সংকট কেটে যাচ্ছে।

জাগো নিউজ: রাইস ব্র্যান অয়েল রপ্তানির অগ্রণী প্রতিষ্ঠান কারা?

সাইরুল ইসলাম: এ খাতে শীর্ষে রয়েছে মজুমদার প্রডাক্টস লিমিটেড। তাদের ‘স্বর্ণা’ ব্র্যান্ড মালয়েশিয়া, নেপাল ও রাশিয়ায় যায়। এছাড়াও তামিম এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েস্টার্ন এগ্রো প্রডাক্টস, কিবরিয়া ট্রেডার্স, এ আর এন্টারপ্রাইজ, আলাল এগ্রো ফুড প্রডাক্টস সবাই নিজ নিজ খাতে সফলভাবে কাজ করছে।

জাগো নিউজ: কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি?

সাইরুল ইসলাম: রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদনে কাঁচামালের সংকট রয়েছে। বিশেষ করে ধানের কুঁড়া সব সময় পাওয়া যায় না। ফলে কেউ কেউ এখন রাইস ব্র্যান বাদ দিয়ে ভুট্টার দিকে ঝুঁকছেন। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে মান নিয়ে আমরা আপস করছি না।

জাগো নিউজ: সবজি বা বীজের চাহিদা বিদেশে কেমন?

সাইরুল ইসলাম: মাশওয়া এন্টারপ্রাইজ ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ অন্যান্য সবজি রপ্তানি করছে। এই মুহূতে বগুড়ার সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া এ আর এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় সবজি বীজ নিয়মিত যাচ্ছে। এখন ইতালি ও যুক্তরাষ্ট্রেও রপ্তানির প্রস্তুতি চলছে। বগুড়ার সাগর ট্রেডার্স তাদের নিজস্ব ক্ষেতের উৎপাদিত আলু শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পাঠাচ্ছে।

জাগো নিউজ: পোশাক ও হস্তশিল্পের অবস্থা কী?

সাইরুল ইসলাম: প্রতিবছর বগুড়া থেকে ১০০ কোটি টাকার জালি টুপি রপ্তানি হয়। রাজকীয় পোশাক যাচ্ছে কাতার ও সৌদি আরবে। হস্তশিল্পে গ্রামীণ নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। ইউরোপে যাচ্ছে নকশিকাঁথা ও অন্যান্য হস্তশিল্প। এ সেক্টরে নারী উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

বগুড়াকে পূর্ণাঙ্গ রপ্তানি হাবে রূপান্তর করা হবে

জাগো নিউজ: ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় চেম্বার কী করছে?

সাইরুল ইসলাম: রপ্তানিকারকদের তথ্য সহায়তা, প্রশিক্ষণ, সার্টিফিকেট অব অরিজিন দিয়ে সহযোগিতা করছি। অনেকেই এখন ঢাকার পরিবর্তে বগুড়া চেম্বার থেকেই সার্টিফিকেট নিচ্ছেন—এটা বড় অর্জন।

জাগো নিউজ: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সাইরুল ইসলাম: আমাদের লক্ষ্য বগুড়াকে একটি পূর্ণাঙ্গ রপ্তানি হাবে রূপান্তর করা। সরকার যদি অবকাঠামোগত সহায়তা ও পণ্য পরিবহনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে, তাহলে বগুড়া দেশের অর্থনীতিতে আরও বড় অবদান রাখতে পারবে। ডলার সংকটের এই সময়ে আমরা যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনছি, সেটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।

জাগো নিউজে: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
সাইরুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এএইচ/জিকেএস

Read Entire Article