বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে শূন্য থেকে যাওয়া পদগুলোতে নিয়োগের জন্য দ্রুত বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
রোববার (২৪ আগস্ট) দুপুরে সুপারিশ না পাওয়া প্রার্থীরা রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের বোরাক টাওয়ারের এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। তাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে কার্যালয়ের ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।
তবে ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে প্রার্থীরা ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। পরে তারা চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদনপত্র জমা দিয়ে সেখান থেকে চলে যান।
প্রার্থীদের অভিযোগ, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা সুপারিশবঞ্চিত হয়েছেন। সেজন্য দ্রুত বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শূন্যপদে ১৫ হাজার সুপারিশবঞ্চিত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
আবেদনে প্রার্থীরা উল্লেখ করেন, তারা ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে নিবন্ধিত প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেছিলেন। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা সুপারিশবঞ্চিত হয়েছেন। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে নিবন্ধন সনদ অর্জনের পরও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ ৫৮ হাজার পদ শূন্য রাখা হয়েছে।
- আরও পড়ুন
- যোগ্য প্রার্থী না থাকায় শূন্যই থেকে গেলো ৫৮৪১৫ শিক্ষক পদ
- এ সপ্তাহেই প্রাথমিকে সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি
- শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ হবে: উপদেষ্টা
প্রার্থীরা আরও জানান, এতসংখ্যক পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও ১৮তম নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রায় ১৫ হাজারের মতো প্রার্থীর শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বিপর্যস্ত হয়েছে। মেধা ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েও চূড়ান্ত নিয়োগ না পাওয়ায় এ বিশাল সংখ্যক প্রার্থী এখন প্রচণ্ড হতাশা, মানসিক চাপসহ পারিবারিক ও সামাজিক নিগ্রহের শিকার। যেহেতু নতুন পদ্ধতিতে ১৯তম পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাই সনদের মেয়াদ থাকা শর্তে ১৮তম নিয়োগবঞ্চিত প্রার্থীদের সুপারিশ নিশ্চিত করার পর ১৯তম সার্কুলার দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
এনটিআরসিএ’র কার্যালয়ের ফটক ধরে প্রায় দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ফাতেমা বিনতে নূরকে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রিলি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে নিবন্ধন সনদ অর্জন করেছি। মেধার মাধ্যমে এ সনদ। এখন এ সনদ দিয়ে যদি শিক্ষক না হতে পারি, তাহলে লাভটা কী?’
তিনি বলেন, ‘আমাকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে, তা জানি না। আমার সাবজেক্টে নাকি শূন্যপদ কম। তাহলে আমাকে নিয়োগের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হবে না কেন? সামনে তো নিয়োগের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। তাহলে আমি কি সনদ অর্জন করেও আর শিক্ষক হতে পারবো না? তাহলে এ সনদ কেন দিলো সরকার আমাকে?’
এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শূন্যপদ ছিল এক লাখ ৮২২টি। পরে ৭৮০টি পদের চাহিদা বাতিল করা হয়। ফলে শূন্যপদ ছিল এক লাখ ৪২টি। এ পদের বিপরীতে নিয়োগের সুপারিশ পেতে আবেদন করেন ৫৭ হাজার ৮৪০ জন। তাদের মধ্যে ৪১ হাজার ৬২৭ জনকে মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়ায় ৫৮ হাজার ৪১৫টি পদ শূন্য থেকে গেছে।
এদিকে, ফাঁকা থাকা পদগুলো কীভাবে পূরণ করা যায়, সে সংক্রান্ত একটি সুপারিশমালা প্রস্তুত করেছে এনটিআরসিএ। এটি খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএ’র চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রার্থীদের আবেদন পেয়েছি। তারা যে দাবিগুলো করেছেন, তা বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি শূন্য থাকা পদগুলো বিশেষ বিজ্ঞপ্তি বা অন্য কোনোভাবে পূরণ করা যায় কি না, তা নিয়ে এনটিআরসিএ কাজ করছে। শিগগির এ নিয়ে প্রার্থীদের জানানো হবে।
এএএইচ/ইএ/জিকেএস