বন্যার পানিতে ডুবেছে দেড় হাজার বিঘার সবজিক্ষেত

2 weeks ago 7

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পাবনায় পদ্মার পানি বেড়েই চলেছে। এতে তলিয়ে গেছে তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির ফসল। নষ্ট হয়েছে দেড় হাজার বিঘা জমির সবজি ও কলাক্ষেত। এদিকে বাজারে সরবরাহ কমায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সবজির দাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই পদ্মার পানি। উজান থেকে প্রচণ্ড বেগে আসা তীব্র জলস্রোতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে নদী পাড়ের মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হিসেবে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন পদ্মায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। পানির উচ্চতা আর ১ মিটার বাড়লেই তা ছাড়াবে বিপৎসীমা।

পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সদর উপজেলার চরাতারাপুর, ভাঁড়ারা, দোগাছি, হেমায়েতপুর, গয়েশপুর, দাপুনিয়া, আতাইকুলা, সুজানগরের ভায়না, সাতবাড়িয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুণ্ডাসহ আরও বেশকিছু এলাকার পদ্মার চরের ও অন্যান্য নিচু জমি পানিতে ডুবে গেছে।

এসব এলাকার জমিতে ব্যাপকহারে মরিচ, কলা, কুমড়া, লাউকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দল, কড়লা, মিষ্টিকুমড়া ও মূলাসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়েছিলো। তবে গত ৩ থেকে ৪ দিনে এসব জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। এতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দর বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

বন্যার পানিতে ডুবেছে দেড় হাজার বিঘার সবজিক্ষেত

সরেজমিনে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভগীরথপুর, চর প্রতাপপুর, শানিকদিয়ার ও ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডাসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মার চরসহ এসব এলাকায় ব্যাপকহারে আবাদ হওয়া সব সবজি এখন পানির নিচে। কৃষকরা হাঁটু থেকে গলা পানিতে নেমে শেষবারের মত করলা, কুমড়া, লাউকুমড়া ও ধুন্দলসহ উৎপাদিত সবজি তোলার চেষ্টা করছে। এছাড়া সদ্য বোনা মূলা বেড়ে ওঠার আগেই বন্যার কবলে পড়েছে। ফলে সেগুলোও তুলে নিচ্ছে চাষিরা। ইতোমধ্যে পানির নাগাল পাওয়া সবজির গাছগুলো মরতে শুরু করেছে। পদ্মার চরের অধিকাংশ কলার জমি এখন পানির নিচে।

কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছরে পদ্মায় এমন পানি দেখেননি তারা। এমন অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে ধান, কলা ও মরিচসহ তাদের হাজার হাজার বিঘা জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। তাছাড়া চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের সংকট। এতে ঋণগ্রস্ত হয়ে পথে বসার আশঙ্কায় তারা।

এ ব্যাপারে চর প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক সানাউল্লাহ বলেন, পদ্মার চরে আমার ২৬০ বিঘা কলার জমি এখন পানির নিচে। অধিকাংশ জমিতে পানি কলা গাছের ওপরের অংশ অবধি উঠে গেছে। ২১ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছি। ৫ বিঘা মূলাসহ পানিতে ডুবে ১২ বিঘা জমির সব কিছু। লাখ লাখ টাকা লোন নিয়ে জমিতে চাষ করেছি। এই লোন কিভাবে শোধ করবো?

লক্ষ্মীকুন্ডার কৃষক হোসেন মালিথা জাগোনিউজকে বলেন, যার ৩০ বিঘা আবাদ আছে তার ২০, যার ২০ বিঘা তার ১৫ বিঘা সবজির জমিই পানি নিচে। আগাম জাতের সবজি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখার আশা করছিলাম। এক বিঘা মূলা আবাদে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ, বেচা বিক্রি ৭০-৮০ হাজার টাকা হবার কথা। সবজির অন্যান্য ৫ বিঘা থেকে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা ছিল। কিন্তু সবই এখন পানির নিচে।

দাপুনিয়া ইউনিয়নরে শাহদিয়ার এলাকার বিল্লার প্রামানিক ও মন্ডলপাড়ার শাহিনসহ কয়েকজন কৃষক বলেন, শতশত বিঘা জমির সবজি ডুবে গেছে। কিছু গাছ না ডুবলেও মরে যাচ্ছে। তাতে আমরা বড় ধাক্কা খেলাম। যে ক্ষতি হলো তাতে লোন শোধ দেবো কিভাবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। এদিকে বাজারে সবজি নেই। দাম দ্বিগুণ হবার পথে।

বন্যার পানিতে ডুবেছে দেড় হাজার বিঘার সবজিক্ষেত

ভগীরথপুরের জফির মাঝি বলেন, তিনটি নৌকা দিয়ে পদ্মার চরে কৃষকদের নদী পারাপার করি। এ ঘাট দিয়ে শুধু চর থেকেই কমপক্ষে ২০ গ্রামের শতশত কৃষক প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার সবজি আমার নৌকায় পার করতো। কিন্তু এখন এক লাখ টাকার সবিজও পার করা হচ্ছে না। বাজারে পণ্য যাচ্ছে কম, দাম তো বাড়বেই।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এক সপ্তাহ আগেও এক পিছ কুমড়ার দাম ছিল ১৮-২৫ টাকা, যা এখন ৪৫-৫০ টাকা। একইভাবে সব সবজির দাম বেড়েছে। ১৫০০ টাকার এক মণ করলা ৩ হাজার, ৩০ টাকার এক কেজি ঝিঙে ৭০ টাকা ও ৫০০-৭০০ টাকার এক মণ মূলা ১২০০ টাকা। এখন কমবেশি সবজি পাওয়া গেলেও পানি এভাবে বাড়তে থাকলে সেইসব এলাকা থেকে ২-৩ দিন পর আর সবজিই মিলবে না।

জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সুজানগর উপজেলার ৩ দশকি ৫, ঈশ্বরদীর ২৫ ও সদর উপজেলার ২৯৭ দশমিক ৫ হেক্টরসহ জেলার ৩২৬ হেক্টর জমি বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২০১ দশমিক ৫ হেক্টর জমির মরিচ, কলা ও সবজি আক্রান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জাগোনিউজেক বলেন, দ্রুতই যদি পানি নেমে যায় তবে অনেক জমিই বেঁচে যাবে। এছাড়া আমরা ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করছি। প্রয়োজনে তাদের প্রণোদনা বা সহযোগিতা দেয়া হবে। আর বন্যার প্রভাব যেনো বাজারে অতিরিক্ত না পড়ে সেদিকটাও আমরা লক্ষ্য রাখছি।

আলমগীর হোসাইন নাবিল/এনএইচআর/এএসএম

Read Entire Article