বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজেরারা

1 month ago 9

ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রামের বাসিন্দা হাজেরা বেগম। পানির তোড়ে সড়ক ভেঙে তছনছ হয়ে যায় তার বসতঘর। এরপর থেকে ছেলেসন্তান ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে মানবেতর দিন পার করছেন তিনি। হাজেরা বেগমের আকুতি—‘আমি আর কিছু চাই না, শুধু ঘরটি ঠিক করে দিন’।

বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে ফেনী। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের জগতপুর গ্রাম। এ গ্রামের মুহুরী নদীর পার্শ্ববর্তী একটি সড়কের ১৭টি স্থানে ভেঙে গেছে। ধসে পড়েছে বহু ঘরবাড়ি, নষ্ট হয়েছে ফসলি জমি। মারা গেছে হাঁস-মুরগিসহ গৃহপালিত পশু।

বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজেরারা

বন্যাকালীন নিজের দুর্বিষহ স্মৃতি তুলে ধরে হাজেরা বেগম বলেন, ‘আমার তিনটা বাচ্চা। দুইটাই শিশু। সঙ্গে থাকেন বৃদ্ধ শাশুড়ি। যখন পানি আসে আমরা হাহাকার শুরু করে দিই। বাঁচার জন্য ছাদে উঠেছি। আমি সাঁতার জানি না। একটা নৌকায় করে স্কুলে গেছি। আমার শাশুড়ি ভাবছে আমরা মারা গেছি। এজন্য আমার শাশুড়ি পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করতে গেছে।’

পানির স্রোতে বিলীন হওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে এভাবেই আহাজারি করছিলেন হাজেরা বেগম। বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরি নদীর পানির চাপে সড়ক ভেঙে স্রোতে ভেসে যায় হাজেরার সুখের আসবাবপত্র। ভেঙে যায় থাকার ঘরসহ চারটি ঘর। ছাগল, হাঁস, মুরগি সবই চলে গেছে বানের জলে। এখন তিন সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ঘর ঠিক করার সম্বলটুকুও নেই তার।

বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজেরারা

কৃষিকাজ করে তিলে তিলে এই সংসার গড়েছেন হাজেরা ও তার স্বামী ওমর ফারুক। বন্যায় সব হারিয়ে এখন পথে বসেছে পরিবারটি।

হাজেরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন ঘরে দাঁড়াবো সে জায়গাটাও নেই। খাট নেই, চেয়ার নেই, কাঁথা নেই, বালিশ নেই। কীভাবে কাজ করবো? আমার ছেলে- মেয়েরে কী দেবো? ওদের তো বইখাতা সব ভাসি গেছে। বাচ্চারা মানষের বাড়িতে (অন্যের বাড়িতে) আছে। দয়া করে আমার ঘরটা ঠিক করে দেন, যাতে থাকতে পারি।’

বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজেরারা

হাজেরা বেগমের প্রতিবেশী মর্জিনা আক্তারের ঘরও ভেসে গেছে স্রোতে। সঙ্গে ভেসে গেছে আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র। রান্নাঘরও ভেঙে গেছে। থাকার ঘরের অবস্থা নাজুক। সব হারিয়ে নিঃস্ব মর্জিনা বেগম। অসুস্থ হয়ে পড়েছেন মর্জিনার স্বামী নুরুল আমিন। তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত মর্জিনাও এখন অন্যের সাহায্যের অপেক্ষায়।

মর্জিনা বেগম বলেন, ‘চাইল ডাইল ভাসি গেছি হানির (পানির) স্রোতে। যে ক্ষয়ক্ষতি হইছে বাই (ভাই) কিচ্ছু নাই অ্যার। ব্যাক কিছু নষ্ট অই গেছে। হাকঘরডাও (রান্নাঘর) টানি নিছে, কিচ্ছু নাই আর। এখন আপনেরা যদি সাহায্য করেন আন্ডা বাঁচি। আপনেরা সাহায্য করেন। আন্ডা (আমরা) খুব অসহায়।’

বন্যায় সব হারিয়ে নিঃস্ব হাজেরারা

হাজেরা-মর্জিনার মতো জগতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি পরিবারের সব কিছু বিলীন হয়েছে বন্যায়। বন্যার পানি নেমে গেলেও ঘরবাড়ির বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে সইতে পারছেন না বাসিন্দারা। শোকে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ বুকে পাথর বেঁধে নির্বাক তাকিয়ে আছেন লন্ডভন্ড হওয়া ঘরবাড়ির দিকে। এখন সাহায্য ও পুনর্বাসন ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানোর উপায় নেই পরিবারগুলোর।

জগতপুর এলাকার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার দুইটা ছাগল ভেসে গেছে। হাঁস-মুরগি সব গেছে। ২০ মণ ধানও গেছে। এখন শুধু দক্ষিণের ঘরের পিলারগুলো আছে। খাওয়ার কিছু নাই। বাজার করবো টাকা নাই।’

জানতে চাইলে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির তালিকা করে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পাশাপাশি আমাদের ত্রাণ কার্যক্রম চলমান। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ এলে পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।

আবদুল্লাহ আল-মামুন/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article