বরিশালে চাঁদাবাজির সময় কথিত দুই সাংবাদিক আটক

9 hours ago 10

সাংবাদিক পরিচয়ে শিক্ষককে জিম্মি করে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে আটক হয়েছেন দুই কথিত সাংবাদিক। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর বেলস পার্ক এলাকা থেকে তাদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে গঠিত অ্যাকশন কমিটি।

আটক হওয়াদের একজনের নাম মারুফ এবং অন্যজন রাসেল। তাদের মধ্যে মারুফ নিজেকে ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বাধীন সংবাদ পত্রিকার বরিশাল ব্যুরো প্রধান হিসেবে পরিচয় দেন। অন্যজন স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবি করেন।

ভুক্তভোগী বরিশাল নগরীর উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মার্টিন সৌরভ চৌধুরী বলেন, মারুফ নামের ওই যুবকসহ কয়েকজন নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আমার বিরুদ্ধে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ তোলেন। আমি তাদের এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলি। তারা সেটা না করে আমার বিরুদ্ধে নিউজ করাসহ প্রশাসনিকভাবে হেনস্তা করবে বলে ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করে।

তিনি বলেন, দুপুরে বিষয়টি সমঝোতার জন্য বেলস পার্ক এলাকায় একটি রেস্টুরেন্টে তাকে ডাকা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি বরিশালে কর্মরত মূল ধারার গণমাধ্যম কর্মীদের জানালে তারা এসে মারুফ নামের ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার কথাবার্তায় অসংলগ্নতা খুঁজে পান। এরপর মারুফ ও তার সহযোগী রাসেলকে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল প্রেস ক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদক ও অপসাংবাদিকতা প্রতিরোধে গঠিত অ্যাকশন কমিটির সদস্য খান রুবেল বলেন, বরিশালে দিন দিন অপসাংবাদিকতা বাড়ছে। কিছু লোক নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বুম হাতে নিয়ে মানুষদের হয়রানি এবং চাঁদাবাজি করে।

তিনি বলেন, অপসাংবাদিকতা রোধে সম্প্রতি বরিশাল প্রেস ক্লাব, রিপোর্টার্স ইউনিটি, সাংবাদিক ইউনিয়নসহ মূল ধারার গণমাধ্যমকর্মীদের ১৫ সংগঠনের সমন্বয়ে অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয়। এর আগে এই কমিটি যৌভাবে অপসাংবাদিকতার বিরুদ্ধে বিবৃতিও দিয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে উদয়ন স্কুলের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, বরিশাল ইলেকট্রনিক মিডিয়া জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেনসহ গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই যুবককে চাঁদাবাজিকালে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে তাদের কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।

বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, সাংবাদিকতা করুন সমস্যা নেই। কিন্তু সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে কোনো প্রকার চাঁদাবাজি, হয়রানি চলবে না। এর বিরুদ্ধে আমরা সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অ্যাকশনে নেমেছি। দুই চাঁদাবাজকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের অ্যাকশন শুরু হলো। ভবিষ্যতেও যারা মহান পেশা সাংবাদিকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে চাইবে, চাঁদাবাজি করতে যাবে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অ্যাকশনে যাবো।

বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, দুজন ভুয়া সাংবাদিককে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন সাংবাদিকরা। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এদিকে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, মারুফ এবং রাসেল নামের ওই দুই কথিত সাংবাদিকের নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা বিভিন্ন ফেসবুক এবং পত্রিকার বুম নিয়ে গোটা বরিশাল দাপিয়ে বেড়ান। প্রাইভেটকারে ঘোরেন। সংবাদের অযোগ্য এমন ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানি এবং তাদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

Read Entire Article