বরিশালে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ চাষ। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে এ সবজি চাষে। জেলার বিভিন্ন স্থানের বিস্তৃত চরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এ সবজি। আশানুরূপ ফলনও পাচ্ছেন কৃষক। তারা বলছেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে ক্যাপসিকাম চাষে কৃষি অর্থনীতির সোনালি ইতিহাস হতে পারে দক্ষিণাঞ্চল।
বরিশাল সদর উপজেলার লড়াইপুর চর ঘুরে দেখা গেছে, শীতকালীন সবজি, তরমুজ, ফুট বা বাঙ্গির পাশাপাশি কয়েক একর জমিজুড়ে ক্যাপসিকামের চাষ হয়েছে। আবাদের সময় অনুসারে দুইবার ফলন সংগ্রহও করা হয়েছে প্রতিটি গাছ থেকে। আরও কয়েক থোকা ক্যাপসিকাম বড় হচ্ছে গাছে।
ক্যাপসিকাম চাষি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘লড়াইপুরে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেছি। যা থেকে এখন পর্যন্ত দুইবার ফলন তুলেছি। আরও ২-৩ বার ফলন উত্তোলন করা যাবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ১২ বছর ধরে ক্যাপসিকাম চাষ করছি। চাষের উপযোগী স্থান চরের জমি। চরে রোদ বেশি পাওয়ায় খুব ভালো ফলন দেয়। প্রচুর পানিও দিতে হয়। চরে রোদ আর নিকটবর্তী খাল থেকে পানি সহজেই সরবারহ করা যায়। তাই ভালো ফলন পাওয়া যায়।’
চাষি মুনছুর মিয়া বলেন, ‘ক্যাপসিকাম চাষ খুবই ব্যয়বহুল। ১ কেজি বীজ কিনতে ২ লাখ ৮০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা লাগে। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ করতে ৬-৭ লাখ টাকা খরচ হয়। বাজারে যে দাম আছে; সে অনুসারে কৃষক দাম পান না। প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা দরে আড়তে দিয়ে আসি। বাজারে প্রতি কেজি ১৫০-২২০ টাকা বিক্রি হয়।’
তিনি বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কখনোই সহায়তা করে না। খোঁজ-খবরও নেয় না। নিজেদের টাকায় জমি ভাড়া নিয়ে উৎপাদন করে বিক্রি করি। সরকার যদি বীজ বা স্বল্প সুদে ঋণ দিতো, তাহলে হয়তো কৃষিকাজ করে টিকে থাকা যেত।’
শুধু লড়াইপুর চরেই নয়; মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, মুলাদীর চরেও চাষ হচ্ছে ক্যাপসিকাম। বরগুনার আমতলী, তালতলী ও পাথরঘাটার চরে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ক্যাপসিকাম চাষ শুরু হয়েছে। পটুয়াখালী ও ভোলায় আগে থেকেই চাষ হচ্ছে।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, বরিশাল বিভাগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৬ হেক্টর জমিতে মোট ১ হাজর ৩৫৩ মেট্রিক টন ক্যাপসিকাম উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২ হেক্টর এবং ভোলায় ৭৪ হেক্টর জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ হয়। গড়ে প্রতি হেক্টরে ৭ দশমিক ৮০ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে। এ ছাড়া বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা জেলায় উৎপাদন হলেও এখন পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জরিপে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের উদ্যান বিশেষজ্ঞ জিএমএম কবীর খান বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোয় ক্যাপসিকাম চাষ আশাব্যাঞ্জক। অনেক চাষি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। আমরা চাষিদের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকি। এলাকা ও মৌসুমভিত্তিক ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করি। স্বল্প পরিসরে ক্যাপসিকাম চাষ করে সফলতা পাওয়ায় পরিমাণ আরও বাড়বে। সঠিক মূল্য পেলে চাষ করে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে।
এসইউ/জিকেএস