দেশের চলমান সংকটে সরকারের আত্মবিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মন্তব্য করেছেন সম্মিলিত নাগরিক সমাজের সভাপতি ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। তিনি বলেন, প্রশাসনের বল প্রয়োগের প্রক্রিয়া জাতিকে এক করতে পারে না। এখানে বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু সমাধান হবে না।
বুধবার (৩১ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘বাংলাদেশ বিরাজমান সংকট: উত্তরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, সরকারকে আত্মবিশ্লেষণ করে ঠিক করতে হবে যে কী কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হলো। সরকারের কথায় কোনো ভুল ছিল কি-না। আর কোনো অবস্থায় এই প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের বল প্রয়োগের ভিত্তিতে হলে হবে না। কারণ বল প্রয়োগের প্রক্রিয়া জাতিকে এক করতে পারে না। এখানে বল প্রয়োগের মাধ্যমে কোনো সুষ্ঠু সমাধান হবে না।
আরও পড়ুন
- ইলিশ উৎপাদনে ১১ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম
- ১৭ জুলাই সাঈদের ছবি পোস্ট, দুদিন পর নিজেই গুলিতে নিহত হন মামুন
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ বলেন, স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ আছে যাদের সংকটের সময় পাওয়া যায় না। যা আমরা এখন দেখছি। ছাত্রসমাজ যৌক্তিক দাবির জন্য যে আন্দোলন করছিল তা তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় বহু প্রাণহানি হয়েছে। যারা নিহত হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি আমাদের সমাবেদনা থাকবে।
দেশের ক্ষয়ক্ষতি যে পরিমাণ হয়েছে তা হতে উত্তরণে অনেক সময় লাগবে জানিয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশে বর্তমানে বহু সংকট চলছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট এবং রাজনৈতিক সংকট আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনিক সংকট আমাদের এখানে আছে। আমাদের এখানে প্রশাসনের কাজ করার কথা সেভাবে হচ্ছে না। যখন কাউকে কাস্টডিতে নিয়ে কোনো বক্তব্য নেওয়া হয় তখন স্বাভাবিকভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু তারপরও সেটা করা হয়। এগুলো তামাশা বাদে আর কিছু না।
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, এরপর আছে দর্শনগত সংকট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ আমাদের যে চারটি স্তম্ভ আছে সেগুলো এখন সংকটে আছে। যে ঘটনা বাংলাদেশে হয়েছে সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ আক্রমণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আক্রমণ। আমাদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা আছে, আমাদের গণতন্ত্রের চেতনা আছে, সমাজতান্ত্রিক চেতনা আছে। মোট কথা আমরা দর্শনগত সংকটে আছি।
ড. কাজী খলীকুজ্জামান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা সাধারণের সহযাত্রী হতে পারছি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের সবাইকে সহযাত্রী হতে হবে। আমাদের সঠিক তথ্য প্রবাহের সংকট আছে। মানুষের কাছে এত বেশি ভুল তথ্য যাচ্ছে যার কারণে এর মধ্য থেকে আমরা সঠিক তথ্য পাচ্ছি না।
এসময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, গত জুলাই মাসের শুরু থেকে দেশের যে অবস্থা দেখছি তাতে অবস্থা ভালো থাকার কথা না। এখন বাংলাদেশে এক প্রকার দুরবস্থা চলছে। যার ফলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এর কারণ দেশ চালানো নীতির সমস্যার কারণে।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক মহাপরিচালক ম. হামিদ বলেন, আজকে যে অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক সংকট, রাজনৈতিক সংকট, তারচেয়েও বড় যেটা অস্তিত্বের সংকটের কথা উঠেছে এ বিষয়ে বেশি করে ভাবতে হবে। আমরা নিজেদের আত্মতুষ্টি নিয়ে অনেকদিন কাটিয়েছি। আমাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা-দক্ষতা নিয়ে আমরা যতটা ভেবেছি যে, আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি সেটা যে টি যে কতটা মেকি ছিল, ঠুনকো ছিল সেটা ছোট ছোট ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণ পেয়ে গেলো।
তিনি আরও বলেন, বিটিভিতে কয়েকদফায় হামলা ও লুট হয়েছে। অর্থাৎ একটা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয়ে পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে এবং সেগুলোর চারপাশে যে ধরনের সুযোগ থাকা দরকার সেখানেও পেশাদারিত্বের অভাব রয়েছে। এই জায়গাগুলো আমাদের ভাবতে হবে।
ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে এমন কিছু ঘটতে পারে সেটা সরকার কেন বুঝতে পারলো না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। এখন ছাত্রদের আন্দোলনে থাকার যৌক্তিকতা নেই। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ কেউ আন্দোলন সংগঠিত করার চেষ্টা করছে।
আরএএস/এসএইচএস/এএসএম