বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতার শাস্তি মওকুফ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

2 hours ago 8

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রাফি এক বছর আগে পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় তার শাস্তি মওকুফ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমের হাতে আসে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আপনি (রিফাত হোসেন) প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা (মানোন্নয়ন) ২০২৩-এ অসদুপায় অবলম্বন করায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বিদ্যমান শৃঙ্খলা বিষয়ক বিধি ও শৃঙ্খলা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আপনাকে ‘পরীক্ষায় অসদুপায় ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বিধিমালা-২০১৮’ এর ৪ ব্যাখ্যা (খ) উপবিধি অনুযায়ী মানোন্নয়ন পরীক্ষা ও অধ্যয়নরত সেমিস্টারের কন্টিনিউয়াস অ্যাসেসমেন্টসহ সেমিস্টার ফাইনালের সকল কোর্সের পরীক্ষা বাতিল এবং পরবর্তী ব্যাচের (Next available batch) সঙ্গে বাতিলকৃত সেমিস্টারের পরীক্ষা দিতে পারবেন মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। পরবর্তীতে আপনি শাস্তি মওকুফের আবেদন করায় জুলাই-আগস্ট এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় আপনার শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। উল্লেখ্য, এ সুযোগ শুধুমাত্র একবারের জন্য বিবেচিত হবে।’

এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সূত্রে জানা যায়, গত ২৫.০২.২০২৪ তারিখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২২-২০২৩ সেশনের ২০২৩ সালের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় (মানোন্নয়ন) PHY 1101 (Engg. Physics) বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসেন রিফা, বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর মোবাইলে ধারণকৃত ইমেজ থেকে মূল উত্তরপত্রে লেখার সময় কক্ষ পরিদর্শকের নিকট ধরা পড়েন। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রধান পরিদর্শক শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে পাঠান। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ জারি করা হলে শিক্ষার্থী তার জবাব প্রদান করেন।

আরও জানা যায়, রিফাতের অপরাধ সংক্রান্ত বিষয়াদির ওপর কার্যকরী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার জবাবপত্রসহ যাবতীয় দলিলাদি বিভাগের নিকট পাঠানো হয়। এছাড়া তার জব্দকৃত মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে সংরক্ষিত রাখা হয়৷

সূত্রে জানা যায়, রিফাত একসময় বেরোবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়ার রাজনীতি করতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সংযুক্ত হতে দেখা গেছে তাকে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ১ বছর আগে পরীক্ষায় মোবাইল নিয়ে অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কার হয়েছে, এখন জুলাই অভ্যুত্থানের দোহাই এবং দলীয় প্রভাব দেখিয়ে মওকুফ পাওয়া ও পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণার শামিল। প্রশাসনের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের নিন্দা জানাই এবং এরসঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নেওয়ার জোর দাবি জানাই।

এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা রিফাত হোসেন রিফা বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন আমার কাছে মোবাইল পাওয়ায় তৎকালীন আওয়ামী লীগের দোসররা আমাকে বহিষ্কার করে। আমি ছাত্রদল করায় আমার ওপর আরও বেশি চওড়া হয়। সেজন্য আমি শৃঙ্খলা বোর্ডে আবেদন করি। আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে সেটি আমি উল্লেখ করি।

জুলাই-আগস্ট বিবেচনায় শাস্তি মওকুফের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আহত শিক্ষার্থী হিসেবে আবেদন করেছি। সে হিসেবে তারা বিবেচনা করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, বিষয়টি এখনো ফাইনাল নয়। শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নিলেও এটি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট অনুমোদন পেলে তারপর সে পরীক্ষায় বসতে পারবে।

এক বছর আগে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীকে কীভাবে জুলাই-আগস্ট বিবেচনায় শৃঙ্খলা বোর্ড শাস্তি মওকুফের সিদ্ধান্ত নেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সে জুলাই বিপ্লবের আহত শিক্ষার্থী। সেই হিসাবে এটি বিবেচনা করা হয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. মো. তানজিউল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। এখনো অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন বাকি আছে। আর চিঠিতে ভাষাগত কিছু ভুল রয়েছে, রোববার সেটি ঠিক করে পুনরায় দেওয়া হবে।

ফারহান সাদিক সাজু/এফএ/এএসএম

Read Entire Article