বাঁশের খুঁটি দিয়ে ভবন নির্মাণ করছিলেন আ.লীগ নেতা

2 months ago 24

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে স্টিলের পরিবর্তে বাঁশের খুঁটি দিয়ে হাট-বাজার ভবনের ছাদ ঢালাই করার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার মীর সেরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ভবনটি নির্মাণ করতে দুই দফায় নোটিশ করলেও তোয়াক্কা করেননি ঠিকাদার। বাধ্য হয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। 

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গ্রামীণ হাট-বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সমেশপুর দোতলা হাটভবন নির্মাণকাজে এসব অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। 

অভিযুক্ত ঠিকাদার বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি পরপর দু’দফায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন।   

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. রোকন উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ভবনের ছাদ ঢালাইয়ে এমএস পাইপের সাটারিং করার কথা থাকলেও কাঁঠ ও বাঁশ দিয়ে সাটারিং করে ঢালাই করা হয়েছিল। বারবার বলা স্বত্বেও ঠিকাদার কোনো নিয়ম মানছিলেন না। গত সপ্তাহে বাধ্য হয়ে আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।  

বেলকুচি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রামীণ বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমেশপুর হাট-বাজার ভবন নির্মাণে টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘লিটন এন্টারপ্রাইজ’ চুক্তিবদ্ধ হয়। একই বছর জুন মাসে দ্বিতল এ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। 

শিডিউল মোতাবেক ভবনের ছাদ ঢালাইয়ে স্টিলের এমএস পাইপ দিয়ে সাটারিং করার জন্য ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠের খুঁটির সাটারিং দিয়ে ছাদ ঢালাই শুরু করে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়। পাশাপাশি স্থানীয় সরকার বিভাগও নিয়মতান্ত্রিকভাবে কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দফায় দফায় চিঠি দেয় এবং মৌখিকভাবে নির্দেশনা দেয়। কিন্তু ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা মীর সেরাজুল ইসলাম কোনোকিছু তোয়াক্কা না করে দাপটের সঙ্গে বাঁশের খুঁটি ও কাঠের সাটারিং দিয়ে ঢালাইকাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। এদিকে ভবনটির নির্মাণের মেয়াদ ছিল চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল। মেয়াদ পার হয়ে ৭ মাস অতিবাহিত হলেও ৪০ শতাংশ কাজও সম্পন্ন হয়নি বলে জানিয়েছে এলজিইডির কর্মকর্তারা। 

স্থানীয়দের অভিযোগ আওয়ামী লীগ সেরাজুল ইসলাম নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে দায়সারাভাবে ভবনটির নির্মাণ করে চলে যেতে চাইছেন। তবে নিম্নমানের ভবন নির্মাণ করা হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি থেকে যাবে। কোনোভাবেই যেন নিম্নমানের কাজ না করা হয় এমনটাই দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার আওয়ামী লীগ নেতা মীর সেরাজুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বাঁশ সাঁটারে ব্যবহার করলে কী সমস্যা? স্টিল সাঁটার ব্যবহার করব কিনা তা আমার ব্যাপার। ভবন ভেঙ্গে গেলে ক্ষতিপূরণ আমাকে দিতে হবে, তাতে অন্যের সমস্যা কী? এ ছাড়া এ বিষয়ে অফিস সব জানে ও সমন্বয় করে কাজ কারা হচ্ছে। 

বেলকুচি উপজেলা প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ভবনটির ছাদ ঢালাইয়ে স্টিলের খুঁটি দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদার সেটা বাঁশ ও কাঠ দিয়ে করছেন। গত অক্টোবর মাসে মানসম্মত সামগ্রী ব্যবহার ও শিডিউল মোতাবেক কাজ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুদফায় চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ঠিকাদার এখন পর্যন্ত বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঢালাইয়ের জন্য ফ্রেম করেছে। বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ঢালাই দিলে এই ধরনের বড় মানের ভবনের জন্য ক্ষতি সাধন হতে পারে। এভাবে নির্মাণ হলে ভবনের স্থায়িত্বকাল কমিয়ে দেয়। এ কারণে কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

সিরাজগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, সেখানে কোনোভাবেই বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাটারিং দেওয়া যাবে না। ৭ দিনের মধ্যে বাঁধ ও কাঠের সাটারিং খুলে ফেলার জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।

Read Entire Article