বাংলাদেশ এলডিসি গ্রাজুয়েশনের জন্য এখনো প্রস্তুত নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকেল ৫টা থেকে দেড় ঘণ্টা ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের বিজনেস কমিউনিটিতে যারা জড়িত আছেন তাদের প্রায় সকলে আজকে এখানে উপস্থিত। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে যে বড় বড় ব্যবসায়ীরা আছেন আজকে তারা সবাই এখানে আছেন। তাদের আসার পেছনে দুটো কারণ আছে। একটা হচ্ছে আমাদের এলডিসি গ্রাজুয়েশন এবং আরেকটা লেবার ইস্যু…এটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগে আগামী যে সম্ভাবনা আছে সেটাকে প্রটেক্ট করার জন্য, রক্ষা করার জন্য আমাদের কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, এই ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত উনাদের কথা শুনেছি, উনারা উনাদের সুবিধা অসুবিধাগুলো বলেছেন। এখান থেকে যেটা প্রতীয়মাণ হয় যে, এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যাওয়া এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বর্তমান এবং আগামীদিনে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে না। কারণ বাংলাদেশ এখন একটা বড় ধরনের আপরাইজিংয়ের পরে আমরা এখন কিন্তু দেশটার অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য সকলে মিলে কাজ করছি, এটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করা হচ্ছে। বিগত দিনে এলডিসির গ্রেজুয়েশনের পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিসংখ্যানগুলো দেওয়া হয়েছিল এগুলো প্রশ্নবিদ্ধ আছে।
আমীর খসরু বলেন, সবকিছু বিবেচনা করে যদি আমরা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যকে অব্যাহতভাবে এগিয়ে নিতে চাই এবং যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি, তাহলে এই মুহূর্তে এলডিসির গ্রাজুয়েশন স্থগিত রাখার বিষয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। তিনি উল্লেখ করেন, এটি স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয়তা আছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে এলডিসি বিষয়ে জাতিসংঘকে একটি চিঠি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ থাকবে, বাংলাদেশ কি সত্যিকারভাবে এখন প্রস্তুত- এ মুহূর্তে কি আমরা রেডি? তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে, যাতে জাতিসংঘের প্রতিনিধিরা এসে সরজমিনে বাংলাদেশে প্রস্তুতির অবস্থা সরাসরি দেখতে পারেন।
শ্রমিক ইস্যুতে আলোচনার প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, লেবার ইস্যুতে যে রেটিফিকেশন রয়েছে, তাতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে অন্যান্য ইউনিয়নের সংখ্যা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। এই পরিবর্তন শ্রমিকদের ভাগ্যের ওপর সত্যিকার অর্থে প্রভাব ফেলবে কিনা এবং ইউনিয়নগুলো কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে কিনা তা দেখা প্রয়োজন। তিনি সতর্ক করে বলেন, এসব বিবেচনা না করে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিলে আগামী দিনে দেশের ভেতরে ও বাইরে ভুল বার্তা গেলে তা থেকে বের হওয়া খুব কঠিন হবে।
বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমরা যারা শিল্প পরিচালনার দায়িত্বে আছি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত, আমাদের অনেকগুলো ব্যবসায়িক উদ্বেগ আছে। তবে বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হচ্ছে এলডিসি গ্রাজুয়েশন স্থগিতকরণের বিষয়টি এবং শ্রম আইন সংশোধন। তিনি জানান, শ্রম আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। টিসিসিতে মোট ১২৪টি পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে আমরা ১২২টি পয়েন্টে একমত হয়েছি। যে দুইটি পয়েন্টে আমরা একমত হতে পারিনি, তারও যৌক্তিক কারণ রয়েছে।
কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বর্তমানে ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াটি শুরু হয় মাত্র ২০ জন শ্রমিক আবেদন করলে। কিন্তু অনেক শিল্পে শ্রমিক সংখ্যা অনেক বেশি- কিছু শিল্পে ৫ হাজার, ৩ হাজার বা এমনকি ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক আছেন। সেখানে যদি শুধুমাত্র ২০ জনের ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় এবং প্রতিটি শিল্পে সর্বোচ্চ পাঁচটি রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়, তাহলে শিল্প কার্যকরভাবে টিকে থাকবে না। এটি আমাদের রুট লেভেলের বাস্তবসম্মত অভিজ্ঞতা। যারা দীর্ঘদিন শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, তারা পিছিয়ে পড়বেন যদি শুধু ২০ জনের ভিত্তিতে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, এতে করে দেখা যেতে পারে, যারা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেন বা ঝুট ব্যবসা করেন, তারা সুবিধা নেবেন। উদাহরণস্বরূপ, বাড়িওয়ালাদের শ্রমিক ২০-৫০ জনের উপস্থিতিতে রাতারাতি ট্রেড লাইনের রেজিস্ট্রেশন পেয়ে যেতে পারে, এবং এতে হাজার হাজার ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন তৈরি হবে। এটি আমাদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। তিনি যোগ করেন, বিএনপির মহাসচিব জাতিসংঘে যাচ্ছেন, যেখানে প্রধান উপদেষ্টাও উপস্থিত থাকবেন। যেহেতু মহাসচিবের মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ থাকবে, আমরা চাই এই বার্তাটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক।
বৈঠকে বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরান তানভিরুর রহমান, সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও নাসিম মনজুর, এফবিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ, প্রাণ গ্রুপের প্রধান আহসান খান চৌধুরী, বিকেএমইএ’র সভাপতি এম এ হাতেম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ) সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, বিজেএমইএ’র মহাসচিব রশিদ আহমেদ হোসাইনী, ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকিন আহমেদ প্রমুখ। বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এসএম ফজলুল হক প্রমুখ।