বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে স্বল্পতম লিড টাইম চান জাপানি ক্রেতারা

2 hours ago 5

বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে স্বল্পতম লিড টাইম নিশ্চিত করতে কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও বন্দর পরিচালনায় দক্ষতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাপানি ক্রেতারা। তারা বলেছেন, দ্রুত ও কার্যকর আমদানি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম আধুনিকায়ন এবং প্রশাসনিক জটিলতা কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

সোমবার (১০ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ও সংগঠনের বোর্ড সদস্যদের কাছে এ আহ্বান জানান।

বৈঠকে জাপানি ক্রেতারা বলেন, দ্রুত ও কার্যকর আমদানি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা গেলে উভয় দেশের বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত ও প্রতিযোগিতামূলক হবে।

জাপান টেক্সটাইল ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (জেটিআইএ) একটি প্রতিনিধিদল সোমবার বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে জাপানি ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে উচ্চমূল্যের, ফ্যাশনেবল পোশাক আমদানির বিষয়ে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

জাপান টেক্সটাইল ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদলে ছিলেন এমএন ইন্টার-ফ্যাশন লিমিটেডের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তোশিনা কাওয়াই, কোয়া কোম্পানি লিমিটেডের প্রশাসনিক বিভাগের ইসেই নোজাওয়া, তোয়োশিমা অ্যান্ড কোং লিমিটেডের ওভারসিজ অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার শিঙ্গো ইগামী, দ্য জাপান টেক্সটাইলস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নোরিহিরো কোমিয়া, এআইটি করপোরেশনের ওসাকা সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার মিনামি কোজিরো।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে বিজিএমইএর পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সহ-সভাপতি ইনামুল হক খান (বাবলু), সহ-সভাপতি মো. শিহাব উদ্দোজা চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, নাফিস-উদ-দৌলা, সুমাইয়া ইসলাম, ফাহিমা আক্তার, জোয়ারদার মোহাম্মদ হোসনে কমার আলম, রুমানা রশীদ ও মোহাম্মদ সোহেল।

বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি, বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে জাপানে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধিতে উভয় পক্ষ কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হয়।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের পোশাকশিল্প এখন কৌশলগতভাবে বাজার বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়েছে এবং এক্ষেত্রে জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় বাজার।

তিনি বলেন, পোশাকশিল্প এখন মৌলিক কটনভিত্তিক পণ্য থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সিনথেটিক ফেব্রিক্স এবং টেকনিক্যাল টেক্সটাইলভিত্তিক পোশাকে স্থানান্তরের মাধ্যমে পণ্যের অফারকে উচ্চ-মূল্যের বিভাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য একনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

তিনি জাপানি ক্রেতাদের প্রতি বাংলাদেশ থেকে পোশাক সোর্সিং বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানান।

বৈঠকে জেটিআইএ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধি, সামাজিক ও পরিবেশগত কমপ্লায়েন্স এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা ও কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন।

তারা বলেন, উচ্চমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায়, জাপানের ক্রেতারা এখন উচ্চমূল্যের এবং ফ্যাশনেবল পণ্যের জন্য বাংলাদেশকে একটি সোর্সিং গন্তব্য হিসেবে আস্থায় নিয়েছেন।

আলোচনায় সাপ্লাই চেইনকে আরও মসৃণ ও দ্রুততর করার উপায়গুলো গুরুত্ব সহকারে উঠে আসে। জেটিআইএ প্রতিনিধিদল বিশেষ করে উল্লেখ করেন যে, জাপানি ক্রেতারা সংক্ষিপ্ততম লিড টাইমের মধ্যে পণ্য আমদানির ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। লিড টাইম হ্রাসের সুবিধার্থে, তারা বাংলাদেশের কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালন দক্ষতা আরও বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেন।

বিজিএমইএ নেতারা জাপানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণের জন্য জেটিআইএ প্রতিনিধিদলের সহযোগিতা কামনা করেন। এর প্রত্যুত্তরে প্রতিনিধিদলটি জানান যে তারা বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই জাপান সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন।

বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক বাজার প্রবণতা সংক্রান্ত তথ্য ও গবেষণা শেয়ার করা জন্যও প্রতিনিধিদলটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বৈঠকে পোশাক রপ্তানিতে মার্কিন শুল্কের প্রভাব, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সম্ভাব্য প্রভাবসহ পোশাকশিল্প সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা করেন।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, উত্তরণের পরেও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য জেটিআইএর মাধ্যমে জাপান সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানান। তিনি মত প্রকাশ করেন যে, এই সুবিধাটি ইপিএ অথবা পিটিএর মতো একটি পারস্পরিকভাবে লাভজনক কাঠামোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে।

বৈঠকে উভয় সংগঠনই পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা এবং জাপানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন।

আইএইচও/এমএমএআর/এমএস

Read Entire Article