আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক স্বৈরাচার পালিয়েছেন। তবে বাংলাদেশে দেখা গেছে, শুধু স্বৈরাচারই পালিয়ে যাননি, তার ৩০০ সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য, পুলিশ, দলীয় নেতাকর্মী; এমনকি মসজিদের ইমাম ও নিজেদের শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বলে দাবি করা উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও পালিয়েছেন।
গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীর মরদেহ পোড়ানো এবং ৪ আগস্ট একজনকে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর।
তাজুল ইসলাম বলেন, এ বিচার কেবল একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, এটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি শক্ত বার্তা যে দেশটি আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারে বিশ্বাসী। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত শক্তিশালী বা প্রভাবশালী হোক না কেন। এ বিচার হবে একটি ইতিহাস। এটি হবে সেই সব মানুষের আত্মত্যাগের সম্মাননা, যাঁরা ন্যায়বিচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এ ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ করবেন, বাংলাদেশ একটি ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক ও আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ রাষ্ট্র।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে মামলাটির আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার আছেন।
গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ মামলার আট আসামি পলাতক।
ট্রাইব্যুনালের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এ মামলায় নির্মোহ, নিরপেক্ষ, নির্ভুল ও দৃঢ় বিচার নিশ্চিত করুন। দোষীদের যথাযথ শাস্তি দিন, যাতে জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে। কারণ, আমরা এমন একটি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ন্যায়বিচার কেবল একটি রায় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। অপরাধী যত বড়ই হোক, কৃতকর্মের বিচার থেকে কেউ রেহাই পাবে না।’
আসামিদের বিরুদ্ধে সংগৃহীত প্রমাণ কেবল বিশ্বাসযোগ্যই নয়, বরং অকাট্য ও স্বতন্ত্র ব্যাখ্যার প্রয়োজনীয়তার ঊর্ধ্বে বলে উল্লেখ করেন তাজুল। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের সামনে উপস্থাপিত প্রমাণগুলো অস্পষ্ট তথ্যের বিচ্ছিন্ন টুকরো নয়, বরং অবিচ্ছিন্ন ও সুদৃঢ় প্রমাণশৃঙ্খল। যার প্রতিটি অংশ পরবর্তী অংশকে আরও দৃঢ়তর করে। এ প্রমাণের সামগ্রিকতা হচ্ছে চাক্ষুষ সাক্ষ্য, ডিজিটাল রেকর্ড, সরকারি যোগাযোগ ও ফরেনসিক প্রতিবেদন।
এফএইচ/একিউএফ/জিকেএস