ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকায় নির্ধারিত আসন্ন বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র দপ্তর আলোচনা (এফওসি)’র সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে আলোচনা করতে পারে।
বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র তৌফিক হাসান একথা বলেন। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে।
শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ঢাকা থেকে পালানোর পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন। জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় গণহত্যাসংক্রান্ত অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।
তৌফিক হাসান বলেন, শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পায়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা দিল্লির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করব এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পেলেই বিদ্যমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুসারে আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করব।’
পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন এবং তার ভারতীয় সমকক্ষ বিক্রম মিসরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠকে তাদের নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। এতে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য প্রত্যর্পণসহ ব্যাপক দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে।
দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) পর্যালোচনার বিষয়ে হাসান বলেন, এই চুক্তিগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।
তিনি বলেন, ‘সকল প্রাসঙ্গিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করা অপরিহার্য এবং যে কোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়নে সময় লাগবে।’ গত ১০০ দিনে অগ্রগতি সীমিত হলেও, আগামী মাসগুলোতে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির’ আশাবাদ রয়েছে।
ভারতীয় ভিসাসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে হাসান বলেন, ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র চালু রয়েছে কিন্তু বর্তমানে মেডিকেল ও স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারত জনবলের অপর্যাপ্ততার কথা উল্লেখ করে তা দ্রুত নিরসনের আশা প্রকাশ করেছে।
মুখপাত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু ভারতীয় মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।
হাসান বলেন, ‘এই বিষয়টি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের নজরে আনা হয়েছে এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এই ধরনের প্রচারণা অনাকাঙ্ক্ষিত।’
ঢাকা ও করাচির (পাকিস্তান) মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের বিষয়ে হাসান জানান, সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ অনুরোধ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রয়েছে এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ যথাসময়ে অগ্রগতির বিষয়ে অভিহিত করা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে হাসান ৭৯তম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সক্রিয় কূটনীতির কথা তুলে ধরেন, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ২৫টি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন।
বাংলাদেশ জাতিসংঘে উচ্চপর্যায়ের একটি সাইড ইভেন্টেরও আয়োজন করেছিল, যেখানে ড. ইউনূস সব স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে সম্মেলনসহ ৩টি উদ্যোগের প্রস্তাব করেছেন।
সম্প্রতি ড. ইউনূস জাতিসংঘ মহাসচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
হাসান বলেন, বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ‘মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হওয়ার মাধ্যমে এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়েছে।