বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী ধরনের সম্পর্ক চায় : জয়শঙ্কর
বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নয়াদিল্লির সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে প্রতিদিন ভারতকে দায়ী করা এবং একই সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রত্যাশা—এ দুটি বিষয় একসঙ্গে চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নয়াদিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সাহিত্য উৎসবে বক্তব্য প্রদানকালে জয়শঙ্কর এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন অন্তর্বর্তী সরকারের কেউ একজন উঠে এবং সবকিছুর জন্য ভারতকে দায়ী করে। যদি আপনি খবরগুলো দেখেন, তাহলে দেখবেন এসব খুবই হাস্যকর। একদিকে আপনি ভালো সম্পর্কের কথা বলবেন, আর অন্যদিকে প্রতিদিন সকালে উঠে সব দোষ আমাদের ওপর চাপাবেন—এটা সঠিক নয়।
জয়শঙ্কর বলেন, ভারত বাংলাদেশকে খুব স্পষ্ট একটি বার্তা দিয়েছে। ভারত চায়, এসব দোষারোপ বন্ধ হোক এবং স্বাভাবিক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বজায় থাকুক। তবে সীমান্তের ওপার থেকে ক্রমাগত আসা নেতিবাচক বার্তায় নয়াদিল্লি মোটেও সন্তুষ্ট নয়।
তিনি বলেন, তাদের (বাংলাদেশ) মনস্থির করতে হবে, তারা আমাদের সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক চায়। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে এবং এই সম্পর্কের শিকড় ১৯৭১ সালে। তাই আমাদের সম্পর্ক বিশেষ মর্যাদা পায়। কিন্তু কোনো দেশ যদি প্রতিদিন আমাদের দোষারোপ করতে থাকে, তাহলে সেটি সুসম্পর্কের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
বক্তব্যে ভারতের জন্য ‘খুব সমস্যাজনক’ দুটি বিষয় তুলে ধরেন জয়শঙ্কর। প্রথমত তিনি বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বেড়েই চলেছে। এটি এমন একটি বিষয়, যা আমাদের চিন্তার ওপর প্রভাব ফেলে এবং এটি নিয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে, যেটা আমরা হয়েছি।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে জয়শঙ্কর বলেন, তাদের নিজেদের রাজনৈতিক পরিস্থিতি রয়েছে, যা আমরা বুঝি। তবে দিন শেষে দুই দেশই প্রতিবেশী। বাংলাদেশ কী ধরনের সম্পর্ক চায়, তা তাদেরই নির্ধারণ করতে হবে।
জয়শঙ্কর আরও বলেন, নয়াদিল্লি কোনোভাবেই চায় না, বাংলাদেশ থেকে প্রতিকূল বার্তা আসুক। নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো নিয়ে ভারতকে দোষারোপ করা এবং একই সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার প্রত্যাশা করা বাস্তবসম্মত নয়।
পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বর্তমান বাস্তবতা প্রতিফলিত করে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পর্যায়ে কিছু অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে, যা দুই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।