বাংলাদেশি পর্যটকশূন্য কলকাতার নিউমার্কেট, ধুঁকছেন ব্যবসায়ীরা

2 hours ago 3

নতুন বছরের শুরুতে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ নামে পরিচিত নিউমার্কেট চত্বরে বাংলাদেশি পর্যটক কম থাকায় বন্ধ হতে চলছে খাবার হোটেল থেকে শুরু করে রকমারি শাল-কাপড়ের দোকান। নিউমার্কেট চত্বরের কিড স্ট্রিট, রয়েড স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, কলিন লেন, টটি লেন, মারকুইস স্ট্রিটসহ নিউমার্কেট এলাকায় ছোটবড় প্রায় সব ব্যবসায়ী বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর নির্ভরশীল।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছরের জুলাই থেকেই পরিস্থিতি একটু একটু খারাপ হতে শুরু করে। আর চলতি ফেব্রুয়ারিতে পরিস্থিতি খারাপ থেকে অতি খারাপে দাঁড়িয়েছে। টানা ছয় মাস এই এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যাবসা কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। এই অবস্থায় কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন, কেউ বা গোটানোর কথা ভাবছেন। করোনা মহামারি চলাকালেও কলকাতায় এই মিনি বাংলাদেশের অবস্থা এতটা খারাপ হয়নি।

নিউমার্কেট এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় টেবিল পেতে যারা মোবাইলের সিম বিক্রি করতো, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে তাদেরও মাথায় হাত। হাতে টানা রিক্সা থেকে মোড়ের ফলের দোকান- সবারই এক অবস্থা।

অন্যদিকে, বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মুদ্রা বিনিময়ের দোকান। যে কয়টি ‍মুদ্রার দোকান আছে, সেগুলোও বন্ধের মুখে। তাছাড়া তলানিতে নেমেছে কলকাতা-ঢাকা রুটের বাসযাত্রীর সংখ্যাও। প্রতিদিন যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ টি বাসের চলাচল ছিল, তা এসে দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ১০টিতে।

নিউমার্কেটের একটি পরিচিত খাবারের হোটেল ‘ধানসিঁড়ি রেস্টুরেন্ট’। মাস কয়েক আগেও দিনে গড়ে তিনশোর মতো বাংলাদেশি পর্যটক আসতেন এখানে। দম ফেলার ফুরসত পেতেন না হোটেলের কর্মীরা। সেই হোটেলে এখন কার্যত মাছি মারতে হচ্ছে। দিনে মেরেকেটে মাত্র ২০-২৫ জন মানুষ এই হোটেলে খেতে আসছেন।

হোটেলটির কর্মী অশোক মজুমদার বলেন, গত ১৫ বছর ধরে তারা এই হোটেল ব্যবসায় রয়েছে। ব্যবসায় অনেক উত্থান-পতন এসেছে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিকও হয়েছে। কিন্তু এবার বোধহয় আর খুব সহজে স্বাভাবিক হচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, এই জায়গাটা বাংলাদেশি পর্যটকদের উপর বেশি নির্ভরশীল। আর এখন বাংলাদেশি পর্যটক নেই বললেই চলে। তাই রান্না কম করতে হচ্ছে। আগে আমাদের হোটেলে দিনে কমপক্ষে ৩০০ বাংলাদেশি পর্যটক খেতে আসতেন, সেখানে এখন আসছেন ২০-২৫ জন। এরকম চলতে থাকলে হোটেল ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।

নিউমার্কেট চত্বরে বাংলাদেশি পর্যটক আসলেই তাদের পছন্দের কাশ্মীরি শাল (চাদর) কিনে নিয়ে যান। দেশে ফিরে আত্মীয়-স্বজনদের উপহার হিসেবে দিতেন এই পোশাক। সেই কাশ্মীরি শালের দোকানও বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে বন্ধের মুখে।

মারকুইস স্ট্রিটে কাশ্মীরি শালের দোকান রয়েছে শ্রীনগরের বাসিন্দা নিসর আহমেদ খানের। গত ২৫ বছর ধরে ভাড়ায় চলেছে‘কাশ্মীর আর্ট বাজার’ নামে তার দোকান। শেষ আট বছর ধরে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেছেন ছেলে মুহাম্মদ তালেব। বছর কয়েক আগে করোনার কঠিন সময় পেরিয়েছেন। ভারতসহ গোটা বিশ্বে তার প্রভাব পড়লেও কখনো ব্যবসা বন্ধ করার কথা ভাবতে হয়নি তাদের। কিন্তু বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে এখন সেই ভাবনা ভাতে হচ্ছে।

২৫ বছর বয়সী গ্রাজুয়েট মুহাম্মদ তালেব বলেন, বাংলাদেশ থেকে যেসব নাগরিক আসছেন, তারা মূলত মেডিকেল ভিসায় আসছেন। চিকিৎসা করিয়ে দেশে ফেরার সময় তাদের হাতে যদি অর্থ থাকে, তবেই কেনাকাটা করছেন। এ ধরনের গ্রাহকদের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়াটা কঠিন।

তিনি জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দুই দেশের মধ্যে যে শীতলতা এসেছে, তাতে গত আড়াই দশক ধরে চালানো ব্যবসা বন্ধ করে কাশ্মীরে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে নিউ মার্কেটে তাদের একটি দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

বর্তমানে এই দোকানের জন্য মাসে ৯০ হাজার রুপি ভাড়া গুনতে হয় তালেবকে। কিন্তু সম্প্রতি এমন অনেক দিন গেছে, যেদিন খদ্দরের অভাবে কেনাবেচাই করতে পারেননি। ফলে এভাবে চলতে থাকলে দোকান বন্ধ করে উপত্যকায় গিয়ে শালের দোকানে কাজ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না বলে জানান তালেব।

ডিডি/এসএএইচ

Read Entire Article