‘বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল’
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক ভূ-স্বর্গ। আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছে এদেশের আপামর জনতা। যেখানে নেই কোনো হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্ব, নেই কোনো জাতি-ধর্মের বিদ্বেষ।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন। স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সামাজিক সহাবস্থান এতই মধুর যে সবাই এখানে এক পরিবারের মতো আছি। আমাদের ঈদে তারা আসে, তাদের পূজা-পার্বনে আমরা যাই। এক আড্ডা থেকে আজানের ধ্বনি শুনে মুসলিম যাচ্ছে মসজিদে, প্রার্থনার সময় হয়ে গেছে বলে খ্রিস্টান যাচ্ছে গির্জায়, হিন্দু যাচ্ছে মন্দিরে পূজা দিতে আর বৌদ্ধগণ যাচ্ছে তাদের প্রার্থনাগৃহ প্যাগোডায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন নিদর্শন দুনিয়ার ইতিহাসে বিরল।
তিনি বলেন, আমরা মুসলমান, হিন্দু,বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মিলে দেশ স্বাধীন করেছে। এদেশের মালিক আমরা সবাই। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সহ্য করতে পারছে না একটি স্বার্থান্বেষী মহল। তারা বারবার চেয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে। কিন্তু এদেশের সচেতন মানুষ বারবার তাদের হীন প্রচেষ্টাকে ভেস্তে দিয়েছে। তবে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র ও গণহত্যাকারী হাসিনা সরকারের পতনের পর উনি যখন দেশ ছেড়ে পলায়ন করেন তখন তার চেলা-চামুণ্ডারা এদেশে বসে সংখ্যালঘু কার্ড খেলার নীলনকশা আঁকতে থাকে এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে ছাত্রজনতার এক মহাবিপ্লবকে নসাৎ করার উদ্দেশে তথাকথিত ‘প্রতিবিপ্লবের’ নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে থাকে।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তারা হিন্দুদের মন্দিরগুলোকে টার্গেট করে। কিন্তু ছাত্র-জনতা তাদের এই ষড়যন্ত্রকেও রুখে দিয়েছে। এখন তারা ভারতকে ব্যবহার করছে। ভারতের গণমাধ্যম এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারে নেমেছে। আমাদের তারা যখন পেটান, আমাদের সন্তানদের হত্যা করেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের হয়। আর মার খেলে হয়ে যান সংখ্যালঘু, এটাতো মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, ভারত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলে অথচ তারা বাবরি মসজিদ গুঁড়িয়ে দিয়ে রাম মন্দির বানায়। মানবতার কথা বলে অথচ ফেলানিদের হত্যা করে কাঁটাতারে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। দেশের শান্তি বিনষ্ট করতে পতিত স্বৈরাচার দেশের বাইরে বসে অব্যাহত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে, এখন তাদের টার্গেট সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক নষ্ট করা। যুগ যুগ ধরে দেশে মধ্যে যে সম্প্রীতির সেতুবন্ধন তা যেন কোনো ষড়যন্ত্রই ফাটল ধরাতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। ভারতই হাসিনাকে মহা স্বৈরাচারী বানানোর মূল কারিগর।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ভারতের দাসত্ব করার জন্য দেশ স্বাধীন হয়নি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনে আগ্রাসী ভারতকেও রুখে দিতে পারবে লড়াকু বাঙালি। ভারতই বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রদায়িক দেশ, তারা নিজেদের দেশে সংখ্যালঘুদের অত্যাচার নিপীড়ন করে। তাদের কোনো অধিকার নেই আমাদের দেশের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করার।
ড. আবুল ফাতাহ মোহাম্মদ মুহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনায় আরও অংশ নেন ড. একেএম মাহবুবুর রহমান, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক, থোয়াই চিং মং শাক, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের থিওফিল রোজারিও, সাংবাদিক বাছির জামাল, শায়খ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী প্রমুখ।