তার হঠাৎ চলে যাওয়া কাঁদিয়েছে লাখো ভক্তকে। আজও তার নাম উচ্চারিত হলে চোখ ভিজে ওঠে ভক্তদের। তরুণ প্রজন্মের বহু নায়কের কাছে তিনি আজও আইকন, অনুকরণীয়। সালমান শাহ বেঁচে থাকলে আজ তার বয়স হতো বাংলাদেশের সমান, ৫৪ বছর। হয়তো আজ তার জন্মদিন ঘিরে ভক্তরা আয়োজন করত বর্ণাঢ্য উৎসব।
তার জন্মদিন উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্তে ভক্তদের গড়ে ওঠা ‘সালমান শাহ ফ্যান ক্লাব’-এর সদস্যরা আজও আয়োজন করেন স্মরণসভা ও উদযাপন। সিলেট শহরের শেখঘাটে তার দাদার বাড়ি আর দারিয়াপাড়ায় নানার বাড়ি এখনো ভক্তদের কাছে তীর্থক্ষেত্রের মতো। সেই বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউজ’। তার নানা অভিনয় করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ। অভিনয় করেছেন তার মা নীলা চৌধুরীও। হয়তো সেই উত্তরাধিকার থেকেই সালমান অভিনয়ে আসেন।
প্রথম সিনেমাতেই হিট সালমান-মৌসুমী জুটি
চলচ্চিত্রে আসার আগেই গান গাইতেন তিনি। স্কুলজীবনে ছিলেন বন্ধুমহলে পরিচিত সংগীতশিল্পী। ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাশও করেছিলেন ১৯৮৬ সালে। এরপর নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ে পথচলা শুরু। মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ অভিনয় করে দারুণ প্রশংসা পান।
- আরও পড়ুন
রিয়া মণিকে নিয়ে ঢাকা ছেড়ে বগুড়ায় স্থায়ী হলেন হিরো আলম
অসহায় ১৫০০ পরিবারের পাশে শাহরুখ খান
‘আন্ধার’ সিনেমায় দেখা যাবে আফসানা মিমিকে
তবে তার অভিনয়ের আসল ঝলক আসে বড় পর্দায়। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে মৌসুমীর বিপরীতে অভিষেক হয় তার। সেখান থেকেই শুরু হয় কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প। আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়ে একের পর এক হিট ছবি উপহার দেন সালমান শাহ। শাবনূরের সঙ্গে তার জুটি হয়ে ওঠে অমর, যা আজও বাংলা সিনেমার সেরা জুটির তালিকায় প্রথম সারিতে।
স্ত্রী সামিরার সঙ্গে সালমান শাহ
জীবদ্দশায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অন্তরে অন্তরে’, ‘সুজন সখী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহামিলন’, ‘আশা ভালোবাসা’, ‘বিচার হবে’, ‘প্রিয়জন’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তুমি আমার’, ‘মায়ের অধিকার’, ‘স্নেহ’, ‘দেনমোহর’সহ অসংখ্য ছবির সাফল্য তিনি নিজে উপভোগ করেছিলেন। মৃত্যুর পরও তার অভিনীত ‘সত্যের মৃত্যু নেই’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভিতর আগুন’সহ অনেক ছবিই দর্শকের হৃদয় জয় করে নেয়।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার আকস্মিক মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে দেশ। সেই শূন্যতা আজও পূরণ হয়নি। কোনোদিন হবেও না। কারণ সালমান শাহ কেবল একজন নায়ক ছিলেন না, তিনি হয়ে উঠেছিলেন একটি সময়, আবেগ ও প্রেমের প্রতীক।
ঢাকাই সিনেমার সফল জুটি সালমান-শাবনূর
বাংলাদেশের সমান বয়সী সালমান শাহ আজও তাই কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে আছেন কোটি ভক্তের হৃদয়ে। তার প্রজন্মের পর আর কয়েক প্রজন্মের কাছেও তিনি সেরা নায়ক, না পাওয়ার এক হাহাকার। যেন স্বাধীনতার মতোই তিনিও চিরকাল অমলিন ও অবিরাম।
এলআইএ/আরএমডি/ইএ