বাইক নিয়ে লম্বা ট্যুরে গেলে যেসব বিষয়ে নজর রাখা জরুরি

দীর্ঘ বাইক ট্যুর মানে শুধু রাস্তা পাড়ি দেওয়া নয় এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে উত্তেজনা, প্রকৃতি দেখা, স্বাধীনতার অনুভূতি আর একটু আধটু ঝুঁকিও। আর সেই ঝুঁকিটাকে যতটা সম্ভব কমিয়ে এনে নিরাপদে যাত্রা উপভোগ করাই একজন সেরা রাইডারের পরিচয়। লম্বা ট্যুরে বের হওয়ার আগে, চলার সময় এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু বিষয় মাথায় রাখলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। ১. রওনা হওয়ার আগে বাইকের পূর্ণাঙ্গ হেলথ চেকআপট্যুরে বের হওয়ার আগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাইকের সবকিছু ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া। ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক প্যাড, চেইন-সেট, কুল্যান্ট, এয়ার ফিল্টার, লাইমপাইপ, টায়ারের ধরন সব কিছুই যেন একবার ভালোভাবে দেখে নেওয়া হয়।এক বারের অবহেলা পুরো রাইডটাই নষ্ট করে দিতে পারে। তাই সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে কমপক্ষে বেসিক সার্ভিস এবং সেফটি চেক করানোই উত্তম। ২. টায়ার প্রেসার ভুল হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণশীত, গরম বা দীর্ঘ রাস্তা-যেখানেই যাও, টায়ারের প্রেসার ঠিক না থাকলে ব্রেকিং ডিস্ট্যান্স বেড়ে যায়, গ্রিপ কমে যায়, এমনকি ড্রিফটও করতে পারে। লো প্রেসার হলে টায়ার গরম হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকিও থাকে। তাই রওনা হওয়ার আগে এব

বাইক নিয়ে লম্বা ট্যুরে গেলে যেসব বিষয়ে নজর রাখা জরুরি

দীর্ঘ বাইক ট্যুর মানে শুধু রাস্তা পাড়ি দেওয়া নয় এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকে উত্তেজনা, প্রকৃতি দেখা, স্বাধীনতার অনুভূতি আর একটু আধটু ঝুঁকিও। আর সেই ঝুঁকিটাকে যতটা সম্ভব কমিয়ে এনে নিরাপদে যাত্রা উপভোগ করাই একজন সেরা রাইডারের পরিচয়। লম্বা ট্যুরে বের হওয়ার আগে, চলার সময় এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর মুহূর্ত পর্যন্ত কিছু বিষয় মাথায় রাখলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।

১. রওনা হওয়ার আগে বাইকের পূর্ণাঙ্গ হেলথ চেকআপ
ট্যুরে বের হওয়ার আগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বাইকের সবকিছু ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত হওয়া। ইঞ্জিন অয়েল, ব্রেক প্যাড, চেইন-সেট, কুল্যান্ট, এয়ার ফিল্টার, লাইমপাইপ, টায়ারের ধরন সব কিছুই যেন একবার ভালোভাবে দেখে নেওয়া হয়।এক বারের অবহেলা পুরো রাইডটাই নষ্ট করে দিতে পারে। তাই সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে কমপক্ষে বেসিক সার্ভিস এবং সেফটি চেক করানোই উত্তম।

২. টায়ার প্রেসার ভুল হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি দ্বিগুণ
শীত, গরম বা দীর্ঘ রাস্তা-যেখানেই যাও, টায়ারের প্রেসার ঠিক না থাকলে ব্রেকিং ডিস্ট্যান্স বেড়ে যায়, গ্রিপ কমে যায়, এমনকি ড্রিফটও করতে পারে। লো প্রেসার হলে টায়ার গরম হয়ে বিস্ফোরণের ঝুঁকিও থাকে। তাই রওনা হওয়ার আগে এবং মাঝে বিরতি নেয়ার সময় পিএসআই ঠিক আছে কি না চেক করা জরুরি।

৩. ব্রেক সিস্টেম ঠিক না হলে রাইডিং মানেই ঝুঁকি
ফ্রন্ট ও রিয়ার ব্রেক কতটা কাজ করছে, ব্রেক ফ্লুইড ঠিক আছে কি না, ডিস্ক গরম হলে শব্দ করছে কি না-এগুলো শুধু নিরাপত্তার জন্যই নয়, পুরো রাইডকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অপরিহার্য। বিশেষ করে পাহাড়ি রাস্তায় ব্রেকের মান এক কথায় জীবন রক্ষাকারী।

৪. রাতে বা কুয়াশায় চললে লাইটিং সেটআপ ঠিক থাকা জরুরি
অনেক রাইডার ট্যুরে বের হয়ে বুঝতে পারেন হেডলাইট আগের মতো উজ্জ্বল নেই। ভুল লাইটিং মানে সামনের রাস্তা দেখা কঠিন হয়ে যাওয়া আর তখন দুর্ঘটনার ঝুঁকি আকাশচুম্বী হয়ে যায়। হেডলাইট, ব্রেক লাইট, সিগন্যাল, হ্যাজার্ড সব ঠিক আছে কি না বের হওয়ার আগে টেস্ট করা উচিত।

৫. ওভারলোড ব্যাগেজ রাইডকে অস্থির করে তোলে
ট্যুর মানেই ব্যাগ, জ্যাকেট, তাঁবু, ফুড সবই নিতে হয়। কিন্তু ব্যাগ ভুলভাবে বা অতিরিক্ত ওজনে বাঁধলে বাইকের ব্যালান্স নষ্ট হয়। বেশিরভাগ দুর্ঘটনা হয় বাইকের ভারসাম্য হারিয়ে স্কিড করার কারণে। তাই ব্যাগেজ প্রোপার ওয়ে-তে টাইট করে বাঁধা এবং দুই পাশে সমান ওজন রাখাই নিরাপদ।

৬. গতির ওপর নিয়ন্ত্রণ ট্যুরের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা
লম্বা ট্যুরে দেখা যায় রাইডাররা হাইওয়ে পেলেই স্পিড বাড়িয়ে দেন, কিন্তু এখানেই ঘটে বড় ভুল। বেশি স্পিড মানে রাস্তায় হঠাৎ গর্ত, কুকুর, মানুষ বা গাড়ি আসলে ব্রেক করার সময় কম পাওয়া। সেফ স্পিড বজায় রাখা, রাস্তার ধরন দেখে গতি নির্বাচন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

৭. ক্লান্ত হয়ে রাইড করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ
ট্যুরে দীর্ঘ সময় রাইড করার কারণে ক্লান্তি আসে। চোখ ভারি হয়ে আসা, মনোযোগ কমে যাওয়া এগুলোই দুর্ঘটনার বড় কারণ। প্রতি ১.৫-২ ঘণ্টা পর ১০-১৫ মিনিট ব্রেক নেওয়া উচিত। পানি খাওয়া, শরীর স্ট্রেচ করা, প্রয়োজনে হালকা নাস্তা এগুলো মনোযোগ বাড়ায়।

৮. দলবেঁধে রাইড করলে ফর্মেশন মানা অত্যন্ত জরুরি
অনেকে ট্যুরে গ্রুপ রাইডিং করেন। কিন্তু এখানে ভুল বোঝাবুঝি হলে শৃঙ্খলা ভেঙে দুর্ঘটনা হয় বেশি। দলবেঁধে রাইডে ‘স্ট্যাগারড ফর্মেশন’ সবচেয়ে নিরাপদ ফ্রন্টে একজন লিডার থাকে, বাকিরা তার নির্দেশনা অনুসরণ করে। এতে দেখাশোনা, জায়গা নেওয়া এবং রেসপন্স-টাইম সবই সহজ হয়।

৯. পাহাড়ি বা বাঁকযুক্ত রাস্তার নিয়ম আলাদা
হিল এরিয়া বা সর্পিল রাস্তায় রাইড করা মানেই নতুন নিয়ম মানতে হবে। বাঁক নেওয়ার সময় বাইক মাপমতো ইনক্লাইন করা, বিপরীত দিকের গাড়ির আলো বোঝা, ব্লাইন্ড কার্ভে হর্ন দেয়া এগুলো জীবন বাঁচাতে পারে। একটু ভুল মানেই বড় দুর্ঘটনা।

১০. সঠিক রাইডিং গিয়ার পরা না হলে সব আয়োজনই বিফলে
হেলমেট, গ্লাভস, রাইডিং জ্যাকেট, নিস গার্ড এসব গিয়ার অনেকেই শুধু “লুকস” বলে মনে করেন। কিন্তু দুর্ঘটনার সময় এগুলোই পুরো স্কিন, হাড়, মাথাকে বাঁচায়। ট্যুরে বের হওয়ার সময়ে গিয়ার না পরলে রাইড অসম্পূর্ণ।

১১. আবহাওয়ার আপডেট দেখে রুট নির্বাচন
হঠাৎ বৃষ্টি, কুয়াশা, ধুলা এগুলো রাইডকে কয়েকগুণ ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। ট্যুরের আগে আবহাওয়ার আপডেট দেখে, প্রয়োজনে রুট চেঞ্জ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

১২. নিজের মানসিক প্রস্তুতি থাকাও জরুরি
লম্বা ট্যুর মানেই আনন্দ, কিন্তু একই সঙ্গে দায়িত্বও। রাইডের সময় মনোযোগ ধরে রাখা, ইগো-ড্রাইভিং না করা, জরুরি পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা এগুলোই সেফ রিটার্নের চাবিকাঠি।

আরও পড়ুন
বৃষ্টিতে বাইকের সাইলেন্সারে পানি ঢুকলে কী করবেন?  
বাইকের ‘এবিএস সিস্টেম’ আসলে কী জানেন?

কেএসকে

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow