বাঙালির অন্তর্গত বৈরিতা: আমাদের পরাজয়ের অদৃশ্য শত্রু

পৃথিবীর বহু জাতি সময়ের সঙ্গে নিজেদের চরিত্রকে শানিত করেছে, নৈতিকতাকে রাষ্ট্রশক্তির মূল ভিত্তি বানিয়েছে; কিন্তু আমাদের অঞ্চলে এখনও ব্যক্তিস্বার্থ, অনৈতিকতা, প্রতারণা, দলাদলি ও গাদ্দারি যেন গভীর শিকড় গেড়ে বসে আছে। জাতি হিসেবে আমরা প্রায়ই নিজেরাই নিজেদের পথ রুদ্ধ করি—যা ইতিহাসের বহু ঘটনায় স্পষ্ট। অন্যদিকে পৃথিবীর কিছু দেশ আছে, যারা শক্তিশালী সেনাবাহিনী বা অর্থবলের কারণে নয়—সচ্চরিত্র, দেশ প্রেম আর নৈতিকতার শক্তিতে নিজেদেরকে বাইরের প্রভাব থেকে অটল রেখেছে। আমরা কি সেই শক্তি অর্জনের পথে আছি, নাকি নিজেদের দুর্বলতার দাসত্বেই আটকে আছি—এ প্রশ্নই আজ আমাদের দারুণভাবে চিন্তিত করে। আমরা পেতে চাই কিন্তু ধরে রাখতে পারি না। আমরা উপদেশ দেই কিন্তু তা মানি না। এ এক বিচিত্র বিষয়। বাঙালি জাতির চরিত্র এবং স্বভাব খুবই বিচিত্র এবং পৃথিবীর অন্য অনেক দেশ থেকে বেশ আলাদা। আমার প্রায়ই মনে হয়— আমরা সর্বদা আমাদের নিজেদের সাথেই কলহে লিপ্ত থাকি। একজন বা একদল অপরের শত্রু ভাবি এবং নিজেরাই নিজেদের পরাজিত করি। আমাদের ভেতরের দুর্বলতা এবং নেতিবাচক চরিত্রগুলি যেমন অনৈতিকতা, প্রতারণা, গদ্দারি, ঠকবাজি, অসততা আমাদের সবচেয়ে বড় শত

বাঙালির অন্তর্গত বৈরিতা: আমাদের পরাজয়ের অদৃশ্য শত্রু

পৃথিবীর বহু জাতি সময়ের সঙ্গে নিজেদের চরিত্রকে শানিত করেছে, নৈতিকতাকে রাষ্ট্রশক্তির মূল ভিত্তি বানিয়েছে; কিন্তু আমাদের অঞ্চলে এখনও ব্যক্তিস্বার্থ, অনৈতিকতা, প্রতারণা, দলাদলি ও গাদ্দারি যেন গভীর শিকড় গেড়ে বসে আছে। জাতি হিসেবে আমরা প্রায়ই নিজেরাই নিজেদের পথ রুদ্ধ করি—যা ইতিহাসের বহু ঘটনায় স্পষ্ট। অন্যদিকে পৃথিবীর কিছু দেশ আছে, যারা শক্তিশালী সেনাবাহিনী বা অর্থবলের কারণে নয়—সচ্চরিত্র, দেশ প্রেম আর নৈতিকতার শক্তিতে নিজেদেরকে বাইরের প্রভাব থেকে অটল রেখেছে। আমরা কি সেই শক্তি অর্জনের পথে আছি, নাকি নিজেদের দুর্বলতার দাসত্বেই আটকে আছি—এ প্রশ্নই আজ আমাদের দারুণভাবে চিন্তিত করে। আমরা পেতে চাই কিন্তু ধরে রাখতে পারি না। আমরা উপদেশ দেই কিন্তু তা মানি না। এ এক বিচিত্র বিষয়।

বাঙালি জাতির চরিত্র এবং স্বভাব খুবই বিচিত্র এবং পৃথিবীর অন্য অনেক দেশ থেকে বেশ আলাদা। আমার প্রায়ই মনে হয়— আমরা সর্বদা আমাদের নিজেদের সাথেই কলহে লিপ্ত থাকি। একজন বা একদল অপরের শত্রু ভাবি এবং নিজেরাই নিজেদের পরাজিত করি। আমাদের ভেতরের দুর্বলতা এবং নেতিবাচক চরিত্রগুলি যেমন অনৈতিকতা, প্রতারণা, গদ্দারি, ঠকবাজি, অসততা আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই আমাদের আর বাইরের শত্রুর প্রয়োজন নেই।

আমি প্রায়ই উপলব্ধি করি- কখনো সামান্য টাকার লোভে, কখনো সামান্য পদমর্যাদার প্রলোভনে, কখনো শুধু ব্যক্তিস্বার্থের কারণে—আমরা নিজের দেশকে বা নিজেদের সৎ আর সাহসী দেশপ্রেমিকদের শত্রুর হাতে তুলে দেই, তাদেরকে কোণঠাসা করে ফেলি। সেটা আমরা প্রায়শই দেখি- যেমন দেখেছি ১৯৭১ এবং বিগত ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট শাসনে। ইতিহাসের নানা সময়ে অসংখ্য “নিজ মানুষ” বিদেশি শক্তির দালালি করেছে। যেন আমাদের শত্রুর আলাদা করে অস্তিত্বের প্রয়োজনই ছিল না—আমরাই নিজেদের বিকিয়ে করে দিতে সক্ষম।

পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেখানকার নাগরিক কখনও নিজেদেরকে বিদেশী শক্তির কাছে বিক্রিত হয়নি বা এখনও হয় না। যাদের নাগরিকরা সংগঠিতভাবে, দীর্ঘ সময় ধরে, এবং বৃহৎ পরিসরে কখনও বিদেশী শক্তির দালালি বা বিক্রীত আচরণে লিপ্ত হয়নি। কারণ তারা উচ্চ জাতীয় চেতনা, ঐতিহাসিক গৌরব, সাংস্কৃতিক স্থিতি, এবং নৈতিক দায়িত্ববোধকে সবার উপরে গুরুত্ব দেয়।

বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতার জন্য কিছু দেশের উদাহরণ দেই-

১। জাপানঃ জাপানে Samurai Ethos এবং Bushido-র কারণে দাসত্ব বা দালালির ঐতিহ্য নেই। জাপানি সমাজে বিদেশী শক্তির পক্ষে দেশদ্রোহিতা প্রায় অজানা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও জাপানি নাগরিকরা শত্রুর পক্ষে কাজ করেনি। “Bushido” (বুশিদো) হল সামুরাই নীতি— যেখানে চরিত্র, আনুগত্য, আত্মসম্মান, দেশপ্রেম, ত্যাগ—এই মূল্যবোধ মানুষকে বিদেশী শক্তির কাছে বিক্রির ধারণাকে অগ্রাহ্য করেছে। জাপানিদের জাতীয় পরিচয় এত শক্তিশালী যে দালালি বা বিশ্বাসঘাতকতা সামাজিকভাবে অকল্পনীয়। তাই জাপানকে প্রায়শই বলা হয়: “A nation impossible to subvert.”

দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই চরিত্র, নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধের সংকটে ভুগছে। জাতি যত বড়ই হোক, মানুষ যদি চরিত্রহীন, অসৎ এবং স্বার্থান্ধ হয়ে পড়ে, তাহলে সেই জাতির অগ্রগতি টেকসই হয় না। আর যদি নাগরিকরা সৎ, দায়িত্বশীল, নীতিবান এবং দেশপ্রেমে একনিষ্ঠ হয়—তাহলে ছোট দেশও বড় শক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।

২। ইসরায়েলঃ ইজরায়েলের জনগণ দেশরক্ষাকে ধর্মীয় ও অস্তিত্বগত দায়িত্ব হিসেবে দেখে। ইসরায়েলি নাগরিকদের মধ্যে বিদেশী শক্তির হয়ে কাজ করার প্রবণতা প্রায় নেই বললেই চলে। কারণ, দেশ রক্ষাকে তারা অস্তিত্বের লড়াই মনে করে। Mossad, IDF–এর প্রতি আনুগত্য অত্যন্ত উচ্চ। জাতিগত ইতিহাস তাদের শিখিয়েছে যে দেশের বিরুদ্ধে কাজ মানে নিজের অস্তিত্ব ধ্বংস। ফলে বিদেশী শক্তির কাছে “বিক্রি হওয়া” ধারণাটি সমাজে লজ্জাজনক ও চরম দেশদ্রোহ।

৩।  উত্তর কোরিয়াঃ উত্তর কোরিয়া রাজনৈতিকভাবে চরম নিয়ন্ত্রিত, সেখানে দালালি প্রায় অসম্ভব। এটি স্বাভাবিক অর্থে ‘চরিত্রের দৃঢ়তা' নয়, বরং রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর কারণে হয়েছে। উত্তর কোরিয়ায় দেশের বাইরে তথ্য যায় না। নাগরিকরা রাষ্ট্রকে ভয় ও আনুগত্যের মিশ্রণে দেখে। বিদেশী শক্তিকে সহায়তা করা প্রায় অসম্ভব; ধরা পড়লে শাস্তি ভয়াবহ। ফলে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা বিদেশী দালালি নাগরিকদের মধ্যে দেখা যায় না।

৪। ভুটানঃ ভুটান ছোট দেশ, কিন্তু উচ্চ নৈতিকতা ও জাতীয় গর্ব তাদের প্রতীক। ভুটানিরা “Gross National Happiness” মূল্যবোধে বিশ্বাসী। সেখানে দুর্নীতি কম, ফাঁকিবাজি নেই, রাজনৈতিক আনুগত্য অনেক শক্তিশালী। তারা সংখ্যায় কম হলেও তাদের নাগরিকেরা বিদেশী শক্তিকে সাহায্য করা বা দেশ বিক্রি করার প্রবণতা দেখায় না। ভুটান “ক্যারেক্টার-স্ট্রং নেশন” হিসেবে পৃথিবীতে প্রশংসিত।

৫।  সুইজারল্যান্ডঃ  সুইজারল্যান্ডে নিরপেক্ষতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধ বিশ্বমানের। সুইস নাগরিক সমাজে রাজনৈতিক সচেতনতা, ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধ এত শক্তিশালী যে তারা দেশের বিরুদ্ধে বিদেশী শক্তির সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী নয়। এই প্রথা সুইজারল্যান্ড দীর্ঘকাল ধরে থাকতে পেরেছে কারণ তাদের নাগরিকদের চরিত্র শক্তিশালী, এবং তারা “জাতিকে বিক্রি” করার প্রবণতা রাখে না।

৬। আইসল্যান্ডঃ  এরা ছোট জাতি, কিন্তু উচ্চ সামাজিক সততার অধিকারী। এই দেশে দুর্নীতি প্রায় নেই। নাগরিকদের মধ্যে দেশভাগ বা দেশদ্রোহের মনোভাব নেই। বিদেশী শক্তির পক্ষে কাজ করার কোনো ঐতিহাসিক বড় কোন উদাহরণ পাওয়া যায় না।

৭। রুয়ান্ডাঃ ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যার এক মর্মন্তুদ উদাহরণ। মাত্র ১০০ দিনের মধ্যে প্রায় ৮ লাখ মানুষ হত্যা করা হয়—হুতু ও তুতসি জাতিগোষ্ঠীর বিভেদ এতই তীব্র হয়ে উঠেছিল যে প্রতিবেশী প্রতিবেশীকে হত্যা করেছিল। রাষ্ট্র ভেঙে পড়ে, সমাজ অচল হয়ে যায়, আর মানুষের বিশ্বাস—সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে রুয়ান্ডার নেতৃত্ব এবং জনগণ নিজেদের চরিত্র আর ভুল ধারণা বদলে ফেলেছে। রুয়ান্ডার নেতৃত্ব তিনটি কাজকে সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছিল ১) ঘৃণার রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ২) একক জাতীয় পরিচয় তৈরি করা (Rwandan Identity) ৩) নাগরিককে ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও সততার চর্চা শেখানো। ফলে এই দেশে এখন হুতু–তুতসি পরিচয় বৈধ কথোপকথনেও তেমন ব্যবহৃত হয় না। রাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে একটা মাত্র বার্তা দেয় আর সেটা হলো “আমরা আগে রুয়ান্ডান, তারপর অন্য পরিচয়।” রুয়ান্ডা আজ আফ্রিকার সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্ত, সবচেয়ে নিরাপদ, সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোর একটি। ইউএন ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পরিমাপে রুয়ান্ডা “Africa’s Cleanest and Safest Country” হিসেবে স্বীকৃত।

উদাহরণ গুলি এই কারণে দিলাম যে, আমাদের তুলনায় এসব দেশগুলি কীভাবে এত ভাল গুণাবলির অধিকারী হয়েছে। বিষয়টি আমাকে খুবই ভাবায়। আর আমাদের দেশ? হাজার হাজার মানুষ নিজের স্বার্থের জন্য বাইরের দেশের সাথে আঁতাত করে নিজেদেরই মানুষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে, সম্পদ পাচার করছে, খুন এবং গুম করছে। দাসত্বের এই মানসিকতা যেন বহু প্রাচীন, এবং দুঃখজনকভাবে আজও সে স্বভাব বদলায়নি।

আমি দেখেছি আমরা বিলাসিতার প্রতি তীব্র আকর্ষণ রাখি, অথচ আমাদের আর্থিক সামর্থ্য তেমন নেই। নৈতিক সংকটও প্রকট—ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি আনুগত্য দাবি করলেও অনেকে ঘুসকে নিত্য দিনের অভ্যাসে পরিণত করেছি।  অন্যের সম্পদ দখল করা আমাদের এক ধরনের অধিকারে পরিণত হয়েছে।  এক কাপ চা, একটি শাড়ি বা লুঙ্গি, একটি কম্বল, সামান্য অর্থ, কিংবা কিছু অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে আমরা নিজের ভোট, মতামত, সততা, নীতি সব বিক্রি করে ফেলতে পারি। নিজের স্বার্থ আর লোভের স্থান দেশের মূলধারার রাজনীতি, ধর্ম, নৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি গুণাবলির ঊর্ধ্বে চলে যায়। অন্যকে ছোট করা, নিন্দা করা, মিথ্যা বলা, অন্যায় ভাবে বঞ্চিত করা, সামান্য কারণে মারামারি—এ যেন আমাদের দৈনন্দিন সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে।

আমরা নিতে জানি, দিতে জানি না। দেশের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে নিজের সুবিধা বড় হয়ে ওঠে। সময় বদলায়, ফ্যাশন বদলায়, প্রয়োজন বদলায়—কিন্তু চরিত্রের মূল ভিত্তি খুব একটা বদলায় না।

সব কিছু মিলে আমি মনে করি— একটি জাতির প্রকৃত শক্তি তার বাহিনী, পতাকা বা অতীত গৌরব থেকেই শুধু আসে না। দেশের শক্তি আসে মানুষের চারিত্রিক গুণাবলি (Good Citizen Character), সততা, দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেম থেকে। যদি এই ভিত্তিই দুর্বল হয়ে যায়—তাহলে কোনো ইতিহাস, কোনো বাহিনী, কোনো কাগুজে দেশপ্রেমই একটি জাতিকে রক্ষা করতে বা উন্নতির সোপানে নিতে পারে না।

দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশই চরিত্র, নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্ববোধের সংকটে ভুগছে। জাতি যত বড়ই হোক, মানুষ যদি চরিত্রহীন, অসৎ এবং স্বার্থান্ধ হয়ে পড়ে, তাহলে সেই জাতির অগ্রগতি টেকসই হয় না। আর যদি নাগরিকরা সৎ, দায়িত্বশীল, নীতিবান এবং দেশপ্রেমে একনিষ্ঠ হয়—তাহলে ছোট দেশও বড় শক্তি হয়ে ওঠার ক্ষমতা রাখে।

একটি জাতির ভাগ্য বদলায় তখনই, যখন সাধারণ মানুষ অসাধারণ সিদ্ধান্ত নেয়— অসততার বিরুদ্ধে “না”, অন্যায়ের বিরুদ্ধে “না”, আর দেশের পক্ষে “হ্যাঁ” বলতে শেখে। আমরা যদি চাই, আগামী প্রজন্মের বাংলাদেশ হবে

দুর্নীতিমুক্ত, মানবিক, সুশৃঙ্খল এবং চরিত্রবান নাগরিকদের একটি রাষ্ট্র। পরিবর্তন দূরের কোনো স্বপ্ন নয়; এটা শুরু হয় আজকের দিনের সিদ্ধান্ত থেকে—আমি সৎ হবো, আমি দায়িত্বশীল হবো, আমি আমার দেশকে বিক্রি করব না।

জাতির উন্নতি বা পতন—দুটোরই শুরু হয় ভেতর থেকে। যেদিন আমরা নিজের চরিত্র, নৈতিকতা এবং দায়িত্ববোধকে ব্যক্তিস্বার্থের উপরে স্থান দিতে শিখব, সেদিনই আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র এবং ভবিষ্যৎ—সবকিছু বদলে যাবে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা।

এইচআর/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow