আগে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের সর্দি-জ্বর বা মৌসুমি সংক্রমণ নিয়ে চিন্তিত থাকতেন, এখন সেখানে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ ক্রমশ বাড়ছে। যেসব রোগ একসময় শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা যেত, এখন তা অল্পবয়সী বিশেষত বাচ্চাদের শরীরেও বাসা বাঁধছে। অর্থাৎ, বাচ্চাদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যার ধরন আজকাল দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে।
ইন্ডিয়ান জার্নাল অব কার্ডিও ডায়াবেটোলজি অ্যান্ড মেটাবলিক ডিজিজেস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুযায়ী, ভারতে বর্তমানে ৬ মিলিয়নেরও বেশি বাচ্চা অতিরিক্ত ওজনের শিকার এবং প্রায় ২ দশমিক ৪ মিলিয়ন এরই মধ্যে ওবেসিটি বা মোটা হয়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছে। আরও ভয়াবহ দৃশ্য হলো, শিশুদের ওবেসিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ৪৪ শতাংশ ডায়াবেটিস ও ২৩ শতাংশ হৃদরোগের ঘটনা। এমনকি ১০-১২ বছর বয়সেই অনেক বাচ্চার মধ্যে ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
শিশু বিশেষজ্ঞ রাহুল ভার্মা (ডিরেক্টর, পেডিয়াট্রিক্স, নিওনাটোলজি ও জেনারেল পেডিয়াট্রিক্স, স্যার এইচ.এন. রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হাসপাতাল)-এর মতে, গত দশকে জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। বেশি সময় স্ক্রিনের সঙ্গে কাটানো, শারীরিক কসরত কম হওয়া, ঘুমের অনিয়ম, সহজলভ্য অস্বাস্থ্যকর জাঙ্ক ফুড খাওয়া—সব মিলিয়ে শিশুদের মধ্যে এক ‘পারফেক্ট স্টর্ম’ তৈরি হয়েছে। এর ফলে কম বয়সেই বাড়ছে ওজন, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ এমনকি ফ্যাটি লিভারের মতো জটিলতা।
আধুনিক খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব
ড. ভার্মা জানাচ্ছেন, আধুনিক খাদ্যাভ্যাস, ফাস্ট ফুডই শিশুদের স্বাস্থ্য সমস্যার অন্যতম বড় কারণ। এই খাদ্যাভ্যাসে প্রাধান্য পাচ্ছে আল্ট্রা-প্রসেসড ফুড, চিনি মিশ্রিত পানীয়, পরিশোধিত গ্রেইনস, ভাজাভুজি ও স্ন্যাকস। কিন্তু খুবই কম রয়েছে শাকসবজি, ফলমূল ও গোটা শস্যজাতীয় খাবার।
পাশাপাশি নানা পরিসংখ্যান আরও আশঙ্কাজনক। ইউনিসেফ-এর শিশু পুষ্টি বৈশ্বিক প্রতিবেদন-২০২৫ অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের অতিরিক্ত ওজনের হার বেড়েছে ১২৭ শতাংশ এবং কিশোর-কিশোরীদের স্থূলতার হার বেড়েছে ২৮৮ শতাংশ। এই পরিবর্তন শুধু ওজন বাড়াচ্ছে না, সঙ্গে এনেছে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও মানসিক সমস্যার আশঙ্কাও।
সমাধান কোথায়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাড়িতে রান্না করা সুষম খাবার, বেশি ফলমূল ও সবজি খাওয়া, জাঙ্ক ফুড ও চিনি মিশ্রিত পানীয় কমানো, প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা শারীরিক অনুশীলন বা খেলাধুলা—এসব অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ডা. ভার্মা জোর দিয়ে বলেন, আজকের শিশুদের অভ্যাসই আগামী দিনের স্বাস্থ্য গড়ে দেবে। তাই বাবা-মা, শিক্ষক এবং নীতিনির্ধারকদের একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। তার ভাষায় ছোট ছোট দৈনন্দিন পরিবর্তন—কম স্ক্রিন টাইম, বেশি আউটডোর অ্যাকটিভিটি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার ধীরে ধীরে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র : দ্য ওয়াল