বাজারে কয়েকদিন আগেও তেলের তীব্র সংকট থাকলেও প্রত্যেকটি দোকানে থরে থরে সাজানো বোতলজাত সয়াবিন তেল। অথচ যে যেভাবে পেরেছেন, ক্রেতাদের কাছ থেকে বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে বেশি রেখেছেন। তবে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে বাজারে বিপুল পরিমাণ তেলের সরবরাহ রয়েছে। ক্রেতারা মনে করছেন, ঈদকে টার্গেট করেই এতদিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছিল। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানি তেল কম দেওয়ার কারণেই সংকট তৈরি হয়েছিল।
বুধবার (২৬ মার্চ) সকালে ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানগুলোতে বিপুল পরিমাণ তেল রয়েছে। অনেকে দোকানের সামনে কয়েক পিস বোতলজাত সয়াবিন সাজিয়ে রাখলেও পেছনের গোডাউনে রেখে দিয়েছেন অনেক তেল। তেল না পেয়ে ক্রেতা ফেরত যাচ্ছেন না। বোতলে লেখা মূল্যে অনুযায়ী বিক্রি চলছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, তখন সব কোম্পানি বাজারে তেল বিক্রি কমিয়ে দিয়েছিল। কোম্পানির প্রতিনিধিরা খুচরা বিক্রেতাদের সবসময় বলেছে, উৎপাদন কমের কারণে তেল সরবরাহ কম। তেল না পেয়ে বিক্রেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল ক্রেতারা। এই সুযোগে বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা তেল পেতে বিভিন্ন পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দেয়। তাদের কথামতো বিভিন্ন পণ্য কেনার পর মিলেছে কয়েক বোতল তেল। বাজারে তেলের বিপুল চাহিদা থাকা সত্বেও কোম্পানি থেকে তেল পাওয়া যায়নি।
রানা সাহা স্টোরের মালিক রানা সাহা জাগো নিউজকে বলেন, তেল উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোতে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যও উৎপাদন করা হয়। অনেক খাদ্যপণ্য বাজারে খুব কম বিক্রি হয়। তেলের তীব্র সংকটের সময় প্যাকেটের পোলাও চাল, হলুদ-মরিচের গুঁড়া, লবণ, বোতলজাত সরিষার তেল, প্যাকেট আটা ও চাপাতিসহ বিভিন্ন পণ্য কেনার শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তবুও চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, তেল সরবরাহ কম জানিয়ে বাজারে স্লো আইটেম পণ্যগুলো বিক্রি করা হয়েছে। ঈদের আগ মুহূর্তে বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে সব দোকানে প্রচুর তেল রয়েছে। ঈদে বিক্রি বাড়াতে অনেক কোম্পানি বাকিতেও তেল বিক্রি করছেন। তারা বলছেন, তেলের অভাব নেই। যত ইচ্ছে তেল নেন, ঈদের পর বিক্রি করে টাকা দেবেন।
মানিক পাল নামের আরেকজন বিক্রেতা বলেন, দোকানের সামনে তেল রাখার বেশি জায়গা নেই। তাই সামনের অংশে কম সাজিয়ে রাখলেও গোডাউনে প্রচুর তেল রয়েছে। বর্তমানে যত ইচ্ছা তেল কিনতে পারছি। ক্রেতাদের কাছে বোতলে লেখা মূল্যের চেয়ে এক টাকাও বেশি রাখা হচ্ছে না।
বিভিন্ন নিত্যপণ্যের সঙ্গে তেল কিনছিলেন নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগেও তেল না পেয়ে এক দোকান থেকে আরেক দোকানে ঘুরতে হয়েছে। এ সুযোগে বাড়তি দামে বিক্রি করেছেন অনেক অসাধু বিক্রেতা। তবুও আমরা বাধ্য হয়ে কিনেছি। তবে এখন যেকোনো দোকানে গেলেই তেলের দেখা মেলে।
মিজানুর রহমান নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বিভিন্ন অসাধু বিক্রেতা ঠুনকো অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রির চেষ্টা করেন। বাজারগুলোতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অভিযান চালানোর পর বিভিন্ন পণ্য সাময়িকভাবে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি হলেও আবার বেড়ে যায়। এজন্য বাজার মনিটরিং জোরদারের পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান চালানো প্রয়োজন।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস ছালাম বলেন, বর্তমানে বাজারে তেলের সরবরাহ বেড়েছে। ন্যায্য দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নজরদারি রয়েছে।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এএইচ/এএসএম