দিনের পর দিন বাজারের দামি ক্রিম, সিরাম বা কেমিক্যালযুক্ত বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করেও অনেক সময় ত্বক বা চুলে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায় না। অথচ সৌন্দর্যের গোপন রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের রান্নাঘরেই। প্রতিদিন সকালে মাত্র এক গ্লাস কিশমিশ ভেজানো পানি পান করলে শরীরের ভেতরকার বিষাক্ত উপাদান দূর হয়, রক্ত বিশুদ্ধ থাকে এবং ত্বক পায় প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।
শুধু তাই নয়, এই পানির নিয়মিত অভ্যাস চুলের গোড়া শক্ত করে, কমায় চুল পড়া, আর ফিরিয়ে আনে হারানো প্রাণবন্ত দীপ্তি। প্রকৃতির এই সহজ উপহারই হয়ে উঠতে পারে আপনার দৈনন্দিন সৌন্দর্যচর্চার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনায় রয়েছে কিশমিশ ভেজানো পানি। অনেকেই এখন সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস কিশমিশ ভেজানো পানি পান করেন। তবে এটি নতুন কোনো ট্রেন্ড নয়,বরং বহু পুরোনো একটি প্রাচীন প্রক্রিয়া। ওজন কমানো থেকে শুরু করে হজমশক্তি বৃদ্ধি,কিশমিশের উপকারিতা দীর্ঘদিন ধরেই স্বীকৃত। তাই একে বলা হয় `সুপার ড্রিংক’।

পুষ্টিবিদদের মতে, শরীরের পাশাপাশি ত্বক ও চুলের যত্নেও এই পানীয় বিশেষভাবে কার্যকর। তাই দেশে তো বটেই, এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও কিশমিশ ভেজানো পানি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
কিশমিশ ভেজানো পানি কেন স্বাস্থ্যকর
কিশমিশ ভেজানো পানিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভিটামিনে রয়েছে। এতে ভিটামিন সি ও বিশেষ ধরনের বি ভিটামিন (যেমন বি৬ ও নিয়াসিন) থাকে। এছাড়া কিশমিশ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজের উৎস।
কিশমিশে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ফেনোলিক যৌগ ও ফ্ল্যাভোনয়েড, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফলে শরীর থাকে সতেজ, ত্বক হয় উজ্জ্বল।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কিশমিশ ভেজানো পানি ত্বক ও চুলের জন্য কী উপকার করে-
১.ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে
শরীরে টক্সিন জমে গেলে ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে, ফুসকুড়ি ও প্রদাহের সমস্যা দেখা দেয়। কিশমিশ ভেজানো পানি প্রাকৃতিকভাবে রক্ত পরিশোধনে সাহায্য করে এবং শরীরকে ডিটক্সিফাই করে। ফলে ত্বক হয় ভেতর থেকে হয়ে ওঠে পরিষ্কার, উজ্জ্বল ও দাগ-ছোপহীন।

২. অকাল বার্ধক্য রুখে দিতে পারে
চামড়া ঝুলে যাওয়া, উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলা কিংবা ত্বকে মেছতার দাগ-এগুলো ত্বকের বয়সজনিত পরিবর্তনের সাধারণ লক্ষণ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কোলাজেনের পরিমাণ কমে যায়, ফলে ত্বক তার স্বাভাবিক টানটান ভাব হারায় এবং ঝুলে পড়ে।
তবে নিয়মিত কিশমিশ ভেজানো পানি পান করলে এই বার্ধক্যজনিত সমস্যাগুলো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। কিশমিশে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় এবং কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফলে বলিরেখা ও চোখের নিচের ফোলাভাব গিয়ে ত্বক ফিরে আসে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা।
৩. চুলের ফলিকল মজবুত করে
চুল পড়া, খুশকি কিংবা চুলের ঘনত্ব কমে যাওয়ার মতো সাধারণ সমস্যা দূর করতে কিশমিশ ভেজানো পানি সাহায্য করে। এতে থাকা আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে হেয়ার ফলিকল বা চুলের গোঁড়া মজবুত করতে সাহায্য করে।
যাদের হরমোনজনিত কারণে চুল পাতলা বা ঝরে পড়ার প্রবণতা রয়েছে, তারা এক মাস কিশমিশ ভেজানো পানি পান করে উপকার পেতে পারেন। এটি চুলের গঠন শক্ত করে, স্ক্যাল্পে পুষ্টি যোগায় এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
৪. হরমোনজনিত সমস্যা দূর করে
পিরিয়ডের শুরু কিংবা শেষের সময়ে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এর প্রভাবে অনেকের ত্বকে ব্রণ, লালচে ভাব ও প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা দেয়।
এ সময় নিয়মিত কিশমিশ ভেজানো পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রাকৃতিক ফাইটো-নিউট্রিয়েন্টস শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়। ফলে ত্বক থাকে পরিষ্কার, ব্রণ নিয়ন্ত্রণে থাকে ও মুখে ফিরে আসে স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
কীভাবে তৈরি করবেন এবং কখন খাবেন
এক মুঠো (প্রায় ১০-২০টি) কিশমিশ ভালোভাবে ধুয়ে নিন। একটি গ্লাস বা কাপ গরম পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে উঠে খালি পেটে সেই পানি পান করুন এবং চাইলে কিশমিশগুলোও খেয়ে ফেলতে পারেন। নিয়মিত এক সপ্তাহ পান করলে বেশ ভালো উপকার পাবেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, হেলথলাইন, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক
আরও পড়ুন
শরীরে দ্রুত শক্তি পেতে কোন ফল কখন খাবেন
চোখের ডার্ক সার্কেল ও ফোলাভাব দূর করতে আই প্যাচ কি সত্যিই কাজ করে
এসএকেওয়াই/জেএস/জেআইএম

2 hours ago
4









English (US) ·