বানরের উৎপাতে দিশাহারা গ্রামবাসী

4 hours ago 8

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশঘেঁষা গ্রামের মেঠোপথ। পা বাড়াতেই চোখে পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে বানর। ঘরের চালা, ফসলের ক্ষেতজুড়ে বিভিন্ন বয়সের বানরের ছোটাছুটি। দেখলে মনে হয় যেন বানরের অভয়াশ্রম। প্রায় এমন চিত্রই দেখা যায় বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের মাদার্শী গ্রামে।

গ্রামবাসী বলছেন, গত কয়েক বছরে বহুগুণ বেড়েছে বানরের সংখ্যা। তবে এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই বন কিংবা প্রাণিসম্পদ বিভাগের। সরকারিভাবে খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় বানরের খাবার জোগান হচ্ছে গ্রামবাসীর ঘরে রান্না করা খাবার এবং ক্ষেতের ফসল থেকে। এসব রক্ষা করতে গিয়ে কোনো কোনো সময় বানরের হামলার শিকার হচ্ছেন গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। এসব কারণে দিশাহারা গ্রামবাসী। 

মাদার্শী গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, প্রায় ৬-৭ বছর আগে একদল বানর এসে আশ্রয় নেয় মাদ্রার্শী গ্রামে। তাদের আশ্রয়স্থল ছিল স্থানীয় একটি আশ্রমে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে বানরের সংখ্যা। বর্তমানে গ্রামজুড়ে বানর কত হাজার, তা জানা নেই স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, বানর দলবেঁধে খাবার খাচ্ছে গ্রামের শাকসবজিসহ ফসলের মাঠে। বয়স্ক বানরের সঙ্গে রয়েছে বহু বাচ্চা। লাউশাক, টমেটো, শালগম, ফুলকপি, কাঁচাকলা, গাজরসহ সব ধরনের শাকসবজি মাঠে বসেই খেয়ে শেষ করছে। ধাওয়া দিলেই পার্শ্ববর্তী পানের বরজে আশ্রয় নিচ্ছে তারা। আবার কিছু বানর বসে আছে বাড়ির চালায় কিংবা গাছের ডালে।

স্থানীয় বাসিন্দা সবিতা রাণী ও রীতা বলেন, প্রতিদিন সকাল, দুপুর ও বিকেলে খাবারের সন্ধানে দলবেঁধে আসে বানর। প্রতিটি দলে কম করে হলেও এক থেকে দেড়শ বানর থাকে। এভাবে এসে খেয়ে শেষ করে ফেলছে ফসল। আর ঘরের দরজা খোলা পেলেই ভেতরে ঢুকে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, আলু এমনকি রান্না করা খাবার হাঁড়িসহই নিয়ে যাচ্ছে। তাই সব সময় বন্ধ করে রাখতে হচ্ছে ঘরের দরজা। আবার মানুষশূন্য ঘর এবং দোকানের ফাঁকা দিয়েই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে বানর।

একই গ্রামের বাসিন্দা শাহে আলম জানান, বানরের সংখ্যা বাড়লেও তাদের খাবারের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি সরকারিভাবে। ফলে মানুষের ঘরে ঘরে ঢুকে খাবার নিয়ে যাচ্ছে বানরের দল। বাধা দিলে বানরের দলবদ্ধ হামলার শিকার হচ্ছেন গ্রামের মানুষ। সম্প্রতি তার ঘরের একটি এলইটি টিভিও ভেঙে ফেলেছে বানরের দল। এখন যে অবস্থা তাতে শিশু সন্তান নিয়ে গ্রামে বসবাস করাই যেন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বানরের জন্য সরকারিভাবে খাবারের ব্যবস্থা করা হলে গ্রামবাসী এ অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মাওলা বলেন, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। তবে এ নিয়ে ইতোপূর্বে স্থানীয়দের উদ্যোগে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বসেছিলাম। সেখানে সরকারিভাবে বানরের খাবার ব্যবস্থা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে রেজুলেশনও হয়েছে। পরে সময়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে কি না, তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলতে পারবেন।

তবে পূর্বে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়টি অবগত না থাকলেও বানরের উৎপাতের কথা স্বীকার করেছেন ইউএনও মো. আলী সুজা। তিনি বলেন, উজিরপুরে আমার বাংলোতেও ওরা হামলা করে। প্রতিদিন ৮-১০টি করে বানর আসছে। বাংলোর পেছনে আমার বাগানের সব সবজি খেয়ে ফেলছে। বানর প্রতিদিন সেগুলো এসে খেয়ে যাচ্ছে। এগুলো খেয়েই ওরা বেঁচে আছে।

তিনি বলেন, এখানে পরিবেশ এবং আইনগত বিষয় আছে। চাইলেই বানর মারা যাবে না। আমরা পারি এগুলো ধরে চিড়িয়াখানায় দিয়ে দিতে। তবে সেটাও এত সহজ নয়। বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে কথা বলে দেখছি, বানরের জন্য খাবারের কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন সামাজিক বন বিভাগ বরিশাল বিভাগের উপ বন সংরক্ষক মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী।

Read Entire Article