বালুখেকোর পেটে ১৪৩ কোটির ক্লোজার-ব্রিজ, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

1 month ago 22

• ডিসিসহ প্রশাসনের সহায়তায় বালু উত্তোলন
• তলিয়ে গেছে মুছাপুর ক্লোজার, দেবে গেছে ছোটধলি ব্রিজ
• ঝুঁকিতে ৩০ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ
• ক্ষতি থেকে বাঁচতে প্রয়োজন দ্রুত রেগুলেটর পুনর্নির্মাণ

প্রশাসনের যোগসাজশে প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি দিনের পর দিন নদী থেকে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এতে নদীতে বিলীন হয়েছে রাষ্ট্রের প্রায় ৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুছাপুর ক্লোজারের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর। আশপাশে প্রবল নদীভাঙনে এরই মধ্যে ভেঙে তলিয়ে গেছে শতাধিক বাড়িঘর।

পাশাপাশি দেবে গেছে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত জোরারগঞ্জ সড়কের ছোট ধলি ব্রিজও। বন্ধ হয়ে গেছে নোয়াখালী-ফেনী-চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ সড়কের যাতায়াত। চরম ক্ষতির শিকার নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা অঞ্চলের মানুষ। হুমকিতে ৩০ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ। এতে এ অঞ্চলের ক্ষতি হবে ১৭শ কোটি টাকা।

গত ৪ সেপ্টেম্বর ছোট ফেনী নদী ও তার আশপাশের এলাকা ঘুরে নদীর ভাঙনের ভয়ংকর চিত্র দেখা যায়। সামনে এসেছে মানুষের হাহাকার। নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সড়ক, বাড়িঘর মার্কেটসহ বিশাল এলাকা।

গত ১০ বছরে অনবরত বালু তোলার কারণে রেগুলেটরের নিচের থেকে প্রটেকশন সরে গেছে। যার কারণে পানির বেশি চাপ আসায় সেটি পড়ে গেছে।- সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল

ছোট ফেনী নদীটির একপাশে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা। অপরপাশে ফেনীর সোনাগাজী। উপজেলার সংযোগ ও যাতায়াতের জন্য সোনাপুর-জোরারগঞ্জ সড়কের ছোটধলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয় ২০১৮ সালে। নিচের বালু সরে যাওয়ায় এরই মধ্যে সেটিও দেবে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে যাতায়াত। এদিকে, ছোটধলি ব্রিজের গোড়ায় এলাকাবাসী ব্যক্তি উদ্যোগে জিও ব্যাগ ভরে বালু ফেলছেন। চাইছেন রক্ষা হোক তাদের যোগাযোগের এই ব্রিজটি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। এক বিরাট ক্ষত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্রের অর্থে নির্মিত সেতুটি।

বালুখেকোর পেটে ১৪৩ কোটির ক্লোজার-ব্রিজ, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

তার কিছু দূরে মুছাপুর এলাকায় সাগরের লবণ পানি ঠেকাতে ও এ অঞ্চলের কৃষি বাঁচাতে নির্মিত মুছাপুর ক্লোজার ও ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরটিও নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে আশপাশের দীর্ঘ এলাকা বাড়িঘরসহ বিলীন হয়েছে নদীতে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তিন ইউনিয়ন ও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ব্যাপক নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। প্রায় ১০ হাজার পরিবার ঘরবাড়ি নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে। নদীর ভয়াবহ ভাঙন থেকে বাঁচতে অনেকে ঘর খুলে দূরে এনে রাখছেন। অনেকের দালান ভেসে যাবে, এ কারণে দরজা-জানালা খুলে নিয়ে আসছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় সাগরের লোনাপানি যেন না ঢোকে এবং শুষ্ক মৌসুমে যেন কৃষির জন্য পানি ধরে রাখা যায় সেজন্য সাগরের মুখে ছোট ফেনী নদীতে ২০০৫ সালে এই ক্লোজার ও ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। অধিক বালু উত্তোলনে এর নিচের ভিতের মাটি সরে যাওয়ায় এটি তলিয়ে গেছে। এর সুফল তো পাওয়া গেলোই না, বরং দুর্বৃত্তদের অধিক লোভে রাষ্ট্রের টাকাটাই জলে গেলো। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত সহজ যাতায়াতের জন্য ছোটধলি ব্রিজও দেবে গেছে। এখানেও রাষ্ট্রের বিরাট ক্ষতির পাশাপাশি যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে এ অঞ্চলের মানুষ।

মুছাপুর রেগুলেটরটি ভাঙার অন্যতম দুটি কারণ দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা রেগুলেটরের ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে বালি তুলে শত শত কোটি টাকার বালি ব্যবসা করেছেন। ফলে এই রেগুলেটরের গোড়ার ভিত্তি দুর্বল হয়েছে এবং ভাঙার মতো এই ভয়ানক পরিণতি বরণ করতে হয়েছে।- কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা পুষ্পেন্দু বড়ুয়া

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ছোট ফেনী নদীর কোম্পানীগঞ্জের দুই অংশে বালু উত্তোলন করা হতো। ছোটধলি এলাকায় বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিতেন সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই শাহাদাত হোসেন ও মুছাপুরের আহসান উল্লাহ ভুট্টো মেম্বার। তাদের বালু কুমিল্লা পর্যন্ত যেত। অপর অংশে বালু উত্তোলন করতেন জালাল উদ্দিন। তিনি মুছাপুর এলাকাও নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই দুই অংশেই শেল্টার দিতেন মুছাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী এবং ওবায়দুল কাদেরের আরেক ভাই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা।

বালুখেকোর পেটে ১৪৩ কোটির ক্লোজার-ব্রিজ, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

ফেনীর সোনাগাজী অংশে বালু উত্তোলন করতেন সেন্টু ও জামশেদ আলম। ভাগ নিয়ে শেল্টার দিতেন সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী, আমিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিরন, চরদরবেশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ভুট্টো ও চরচান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন মিলন।

তাদের এই অপকর্মে সহায়তা করতেন স্থানীয় প্রশাসন। অভিযান বা মোবাইল কোর্টের নামে স্পটে গেলেও বন্ধ হতো না বালু উত্তোলন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলতো এ অপকর্ম।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর এখন নতুন চাঁদাবাজরা বালু উত্তোলনের টাকায় ভাগ বসিয়ে এটি অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান জাগো নিউজের কাছে দাবি করেছেন, ‘জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান তার মেয়াদে চারবার বালু উত্তোলনের স্পট পরিদর্শনে যান। স্পটে পৌঁছানোর আগেই কাদের মির্জার মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা করে নিয়ে চলে আসতেন। চার বারে ডিসি মোট ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।’

এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল বলেন, ‘গত ১০ বছরে অনবরত বালু তোলার কারণে রেগুলেটরের নিচের থেকে প্রটেকশন সরে গেছে। যার কারণে পানির বেশি চাপ আসায় সেটি পড়ে গেছে।’

বালুখেকোর পেটে ১৪৩ কোটির ক্লোজার-ব্রিজ, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় জালাল উদ্দিন ও তার ভাই ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর বালু উত্তোলন করেন। এতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী, পৌর মেয়র মির্জা কাদের এবং প্রশাসন সহায়তা করেছে। এমনকি জেলা প্রশাসককে তারা প্রতিনিয়ত মাছ পাঠাতো। আমরা বছরের পর বছর অভিযোগ দিয়েও বন্ধ করাতে পারিনি।’

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাবেক কৃষি কর্মকর্তা পুষ্পেন্দু বড়ুয়া বলেন, ‘আমি নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দীর্ঘ সময় কৃষি অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছি। এই মুছাপুর রেগুলেটর নিয়ে আমার স্বপ্ন ছিল। তখন আমি এবং বিএডিসির সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মাইনুদ্দিন সাহেবসহ হেঁটে হেঁটে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলাম। পরবর্তীসময়ে ১১টি সেচ প্রকল্প মুছাপুর, চরহাজারী এবং চর পার্বতী ইউনিয়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় বোরো আবাদ অনেক বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই রেগুলেটরটি বঙ্গোপসাগরের সন্দীপ চ্যানেলের কাছাকাছি ছোট ফেনী নদী হয়ে বড় ডাকাতিয়া নদীর মুখে অবস্থিত। কুমিল্লা জেলার ছয়টি উপজেলা- কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, বরুড়া, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম; ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা, দাগনভূঞা, সোনাগাজী ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা- এই দশটি উপজেলার বৃষ্টির পানি এই মুছাপুর রেগুলেটর হয়েই যেত। আবার বোরো মৌসুমের সেচ কার্যক্রম এই মুছাপুর ক্লোজারের জমানো মিষ্টি পানির মাধ্যমে সম্পন্ন হতো। এই তিন জেলার দশটি উপজেলার আনুমানিক এক লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমি এই রেগুলেটরের ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে পড়ে। এটা ভাঙার ফলে রাষ্ট্রের অনেক বড় ক্ষতি হলো।

যে দুই কারণে ভাঙলো মুছাপুর রেগুলেটর

কৃষি কর্মকর্তা পুষ্পেন্দু বলেন, ‘মুছাপুর রেগুলেটরটি ভাঙার অন্যতম দুটি কারণ দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর ধরে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা রেগুলেটরের ৫০ থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে বালি তুলে শত শত কোটি টাকার বালি ব্যবসা করেছেন। ফলে এই রেগুলেটরের গোড়ার ভিত্তি দুর্বল হয়েছে এবং ভাঙার মতো এই ভয়ানক পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, এই রাজনৈতিক বালি দস্যুরা জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উচ্চ পদে থাকা লোকজনকে ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালিয়েছে। এই বালি দস্যুদের অপকর্মের ফলে কিছুদিন আগে মুছাপুরে বিএডিসির পাঁচ কিউসেকের একটি সোলার সেচ পাম্প ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

বালুখেকোর পেটে ১৪৩ কোটির ক্লোজার-ব্রিজ, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

এছাড়া রেগুলেটরের পাশের ছোট ফেনী নদী ১১০০ মিটার প্রশস্ত। অথচ এই রেগুলেটরটি ছিল ২৩ ভেন্টের। যেটা মাত্র ৯০ মিটার প্রশস্ত। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পরিবেশগত বৈপরীত্য প্রতিনিয়ত আমরা ফেস করছি। যার কারণে এখন গরমের দিনে গরম বেড়েছে এবং বর্ষাকালে বর্ষার তীব্রতাও বেড়েছে। ২০০৫-২০১০ সালের হিসাবে রেগুলেটরের ৯০ মিটার প্রস্থ হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু অতিবৃষ্টির কারণে ১১০০ মিটার নদীর পানি এই ৯০ মিটার রেগুলেটরের ভিতর দিয়ে যাওয়ার কারণে পানির চাপ ব্যাপকভাবে বেড়েছিল। এটাও এই রেগুলেটর ভাঙার অন্যতম একটা কারণ। ভবিষ্যতে এ বিষয়টিও পুনর্নির্মাণের সময় বিবেচনায় রাখা উচিত বলে আমি মনে করি।

রেগুলেটর ভাঙায় ক্ষতি

এই রেগুলেটর ভাঙার ফলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ক্ষতি আমাদের ফেস করতে হবে। (১) নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়ন, চরহাজারী ইউনিয়ন, চর পার্বতী ইউনিয়ন এবং সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী অংশে নদী ভাঙন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। যেটা এরই মধ্যেই শুরু হয়েছে। (২) মানুষ বাস্তহারা হবে, ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে। (৩) রেগুলেটর না থাকার কারণে উজানের পানির চাপ কমলে বিশেষ করে অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারের পানি প্রবেশ করবে। যেটা কৃষির জন্য ভয়ানক অশনি সংকেত। এই লবণাক্ত জোয়ারের পানির কারণে বস্তুতপক্ষে এসব এলাকার কৃষি ধ্বংস হবে।

(৪) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে আমাদের দেশে সামুদ্রিক সাইক্লোন সৃষ্টি হয়। ওপরওয়ালা না করুক, যদি সামুদ্রিক সাইক্লোনের কারণে ১২ থেকে ১৫ ফুট সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয় তাহলে সামুদ্রিক লবণাক্ত জলোচ্ছ্বাসের পানি কোম্পানীগঞ্জ ফেনী হয়ে সেই কুমিল্লা পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। (৫) এই রেগুলেটরের মাধ্যমে তিন জেলার দশটি উপজেলার প্রায় একলাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হতো। এবছর মিষ্টি পানি না থাকার কারণে এই একলাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ সম্ভব হবে না। এতে রাষ্ট্রের প্রায় ১৭শ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। সুতরাং, এই ১০ উপজেলার মানুষের বাস্তু নিরাপত্তা, কৃষিসহ সর্বোপরি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অতি দ্রুত এ রেগুলেটরের পুনঃনির্মাণ জরুরি।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলেছে। মূলত বালু উত্তোলন নয়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত পানির চাপে ক্লোজারটি ভেঙে গেছে। এখন এটার দুই পাশে ভাঙছে। আমরা সেটি রোধ করবার জন্য মাঝখান দিয়ে ড্রেজিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ক্লোজারটিও নির্মাণ হবে, তবে সেটি তো সময়সাপেক্ষ। একইভাবে বন্যার পানির ঢুকে যাওয়ায় বাংলাবাজার ব্রিজটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটি নিয়েও কাজ করছে সড়ক বিভাগ।

পরিদর্শনে গিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট বা অভিযান পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার। আমি তো যাই না। বালু উত্তোলনকারীদের সঙ্গে আমার কখনো কথাও হয়নি। টাকা নেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না।’

বালুখেকোর পেটে ১৪৩ কোটির ক্লোজার-ব্রিজ, বিলীন হচ্ছে বসতভিটা

মাছ পাঠানোর বিষয়েও জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এগুলো কারও মনগড়া কথা হতে পারে। তাদের সঙ্গে আমার কোনো কথাই হয়নি।’

কোম্পানীগঞ্জ ও সোনাগাজীর নদী ভাঙন থেকে বাঁচতে মুছাপুর ক্লোজার নির্মাণ করা হয়। নতুন ডাকাতিয়া ও ছোট ফেনী নদী নিষ্কাশন স্লুইস গেট ও বেড়িবাঁধ প্রকল্পে ৪৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ক্লোজার নির্মাণ করা হয়েছিল। ২০০৫ সালে ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় মুছাপুর ২৩ ভেন্ট রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়।

সোনাগাজী উপজেলার চর দরবেশ ইউনিয়নের সাহেবের ঘাট ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের সংযোগস্থল ছোট ফেনী নদীর ওপর ২০১৮ সালে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ছোটধলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এটি নোয়াখালী-ফেনী-চট্টগ্রামের বহুল কাঙ্খিত সংযোগ সড়ক।

এসইউজে/এএসএ/জিকেএস

Read Entire Article